এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন ৬০০ দিনে পা দিল। নিজস্ব চিত্র।
এ তাঁদের এক সংগ্রাম। ঘর-স্বজন ছেড়ে দিনের পর দিন রাস্তায় বসে রয়েছেন তাঁরা। চড়া রোদ হোক বা অঝোর ধারায় বৃষ্টি— প্রকৃতির কোনও রোষই তাঁদের টলাতে পারেনি। শহর কলকাতার কেন্দ্রবিন্দুতে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে সেই এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের লাগাতার আন্দোলন শুক্রবার ৬০০ দিনে পা রাখল।
‘নিয়োগ চাই’— এই দাবি থেকে এখনও তাঁদের টলাতে পারেননি কেউ। পেয়েছেন আশ্বাস। পেয়েছেন ভরসা। কিন্তু দাবিপূরণের পথে এক পা-ও এগোননি। হাতে প্ল্যাকার্ড, চলছে ‘নিয়োগ চাই, নিয়োগ চাই’ বলে স্লোগানও। কিন্তু চাকরির ভবি তাতে ভুলছে না। অন্তত এখনও পর্যন্ত। রাজ্যের দূরদূরান্ত থেকে বহু চাকরিপ্রার্থী ঘরবাড়ি ছেড়ে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত গান্ধীমূর্তির পাদদেশে বসে রয়েছেন। প্রত্যেকের চোখেমুখে হতাশার ছবি। কারও চোখের কোণে জমছে যন্ত্রণার জল। শরীরে ক্লান্তি নামছে কারও কারও। কিন্তু আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শক্তি হারাননি কেউই।
আন্দোলনের মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সিঙ্গুরের অনুরাধা সাহা। সেরে উঠতেই কোলের শিশু নিয়ে আন্দোলনস্থলে পৌঁছেছেন ওই চাকরিপ্রার্থী। শুক্রবার আন্দোলনের ৬০০ তম দিনে যখন নিয়োগের স্লোগানে মুখরিত গান্ধীমূর্তির পাদদেশ, তখন সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়, মাতৃক্রোড়ে ঘুমোচ্ছে অনুরাধার শিশু। সন্তান নিয়েই ঘর ছেড়ে চাকরির দাবিতে শামিল হয়েছেন ওই মহিলা। তবে একা অনুরাধা নন, এমন আরও অনেক চাকরিপ্রার্থী রয়েছেন, যাঁরা একই ভাবে নিজেদের ‘হক’-এর দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
৬০০ দিন তো হয়ে গেল। আরও কত দিন? কবে তাঁদের সমস্যার সুরাহা হবে? আরও কত দিন চলবে তাঁদের এই আন্দোলন? প্রশ্নের জবাব দিলেন সুদীপ মণ্ডল নামে এক চাকরিপ্রার্থী। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলবেই!’’ আগামী দিনে আন্দোলনের ঝাঁঝ আরও তীব্র করার ইঙ্গিত দিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তার পরিচয় পাওয়া যাবে শনিবারেই। রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেল পর্যন্ত মিছিল করার কথা রয়েছে তাঁদের।
আন্দোলনের ৬০০ দিনের মধ্যে প্রতিশ্রুতি অবশ্য অনেক পেয়েছেন ওঁরা। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও পরে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে চাকরিপ্রার্থীদের প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শহিদুল্লাহ। সেই বৈঠক সদর্থকও হয়। কিন্তু তার এখনও বাস্তবায়ন হয়নি বলে আক্ষেপ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। ঘটনাচক্রে, সম্প্রতি আনন্দবাজার অনলাইনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, আন্দোলন করলেই সবাইকে চাকরি দিতে হবে, তা হতে পারে না। শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, ‘‘আন্দোলনের সঙ্গে চাকরির সম্পর্ক কী? চাকরি তো যোগ্যতা বা মেধার ভিত্তিতে হবে!’’
চাকরিপ্রার্থীদের এই ‘অভূতপূর্ব’ আন্দোলনে তাঁদের সহমর্মিতা জানাতে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে দেখা গিয়েছে বিশিষ্টদের একাংশকেও। রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতিও চোখে পড়েছে গত কয়েক দিনে। বিজয়া দশমীর দিন চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থানে পৌঁছে তাঁদের মিষ্টিমুখ করাতে গিয়েছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি। আন্দোলনের ৬০০ দিনেও সেখানে যান বিমান বসু। সঙ্গে ছিলেন মহম্মদ সেলিম। লক্ষ্মীপুজোর দিন চাকরিপ্রার্থীদের ধর্নামঞ্চে সপরিবার দেখা গিয়েছিল বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব কৌশিক সেনকে। তাঁরাও মিষ্টি নিয়ে গিয়েছিলেন আন্দোলকারীদের জন্য। শুক্রবার তাঁদের কাছে যাবেন বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। অর্থাৎ, গত ৫৯৯ দিনে সমাজ এবং রাজনীতির বিভিন্ন স্তরের লোকজন এসেছেন তাঁদের লড়াইয়ে সহমর্মিতা জানাতে। ৬০০তম দিনেও তার বিরাম নেই। কিন্তু যার জন্য এত কৃচ্ছ্রসাধন, সেই নিয়োগের দাবিপূরণ এখনও আন্দোলনকারীদের কাছে অধরা।
মেয়ো রোডে শুরু হয়েছিল ওই আন্দোলন। তার পর ধাপে ধাপে বড় হয়ে আন্দোলনকারীরা জায়গা পেয়েছেন গান্ধীমূর্তির পাদদেশে। কিন্তু আর কত দিন? আরও কত রাত এ ভাবে ঘর ছেড়ে খোলা আকাশের নীচে কাটাতে হবে তাঁদের? আন্দোলনকারীরা জানেন না। যাঁরা তাঁদের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন, তাঁরাও জানেন না। কিন্তু তাতে ধৈর্য হারাচ্ছেন না আন্দোলনকারীরা। দরকার হলে আরও ৬০০ দিন কাটবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy