জনৈক চাকরিপ্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “সোমাকে বারণ করেছিলাম, অসুস্থ শরীরে আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে বসতে। কিন্তু মনের জোরে যতটা পারেন, থাকছেন!” শুনে সোমা বলছেন, “ শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নকে কোনওভাবেই ফিকে হতে দেব না। কার আয়ু কতদিন কেউ জানে না! যত দিন বাঁচব নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাঁচতে চাই।”
মেয়ো রোডে গান্ধী মূর্তির সামনে বাকিদের সঙ্গে অবস্থান বিক্ষোভে সোমা দাস (বাঁ দিকে)। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
বাঁচার লড়াই এবং চাকরির লড়াই — যেন একাকার তাঁর কাছে। এসএসসি নবম থেকে দ্বাদশের মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বীরভূমের অখ্যাত গ্রামের মেয়ে সোমা দাস তিন বছর হল রক্তের ক্যানসারে ভুগছেন। তবু ধর্মতলায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশের মঞ্চে লড়াইয়ে নাছোড়। ক্যানসার নিয়েই বেঁচে থাকা কন্যা বলছেন, ‘‘আমার বিষয় বাংলা। বাংলার শিক্ষিকার চাকরিটা পেলে আমি চিকিৎসার খরচটা ঠিকঠাক চালাতে পারতাম। আমার কাছে বাঁচটার লড়াই, আর চাকরির লড়াইয়ে ফারাক নেই।’’ তাঁর প্রশ্ন, যাঁরা পাশ করতে পারেননি, তাঁদের চাকরি হয়ে গেল অথচ আমরা মেধা তালিকার যোগ্য প্রার্থী হয়েও কিছু পেলাম না!’’
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ব্লাড ক্যানসারে ভুগছেন নলহাটির পাইকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আশ্রমপাড়া গ্রামের মেয়ে সোমা। দু’দফায় ১২টি কেমো দেওয়াও হয়েছে তাঁকে। এখন কিছুটা ভাল আছেন। তাই ধর্মতলার প্রতিবাদ- মঞ্চে চলে এসেছেন। সোমবার সোমা বলছিলেন, কলকাতায় কিছু দিন চিকিৎসার পরে মার্চ মাসে তিনি মুম্বইয়ে যান। সেখানে ছ’টি কেমো নিয়ে কলকাতায় ফিরে আসেন। আট মাস সুস্থ থাকার পরে ফের তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর ফের করোনার লকডাউনের মধ্যে মুম্বই গিয়ে তাঁকে আরও ছ’টি কেমো নিতে হয়।
সোমা বলেন, “বাবা একটি বেসরকারি সংস্থায় সামান্য চাকরি করতেন। এখন কিছু করেন না। ভাই এখনও কোনও কাজ পায়নি। মুম্বইয়ে একটি সমাজসেবী সংস্থার সাহায্যে কেমোর খরচ কিছুটা কম হওয়ায় সুবিধা হয়েছে। যা কলকাতায় সম্ভব হয়নি। তাই মুম্বই যেতে হয়েছে। তবু সব মিলিয়ে চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে আমাদের কিছু জমি বিক্রি করতে হয়। বন্ধুবান্ধবেরা কিছু সাহায্য করেছে। চিকিৎসার খরচ মেটাতে আমার স্কুলের চাকরিটার খুব দরকার ছিল।” সোমা জানান, গত বছর এপ্রিলে তিনি মুম্বইয়ে শেষ বার কেমোথেরাপি দিয়েছেন। ফের অসুখটা বাড়তেই পারে এমন সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান সোমা। তিনি বলেন, “এ বার ফের কেমোথেরাপি নিতে হলে কোথা থেকে টাকার জোগাড় হবে, আমি জানি না! কী করব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না!”
চৈত্রের চড়া রোদে মাথায় শুধু প্লাস্টিকের ‘শেড’। সেই ছায়ায় বসে তিনি জানান, ২০১৯ সালে যখন থেকে চাকরির জন্য আন্দোলন শুরু হল। তখনই তাঁর প্রথম ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে।
সোমা বলেন, “২০১৯ সালের ২৮ মার্চ প্রেস ক্লাবের বিক্ষোভ মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী নিজে এসে আমাদের নিয়োগের বিষয়টা কথা দিয়েছিলেন বলে কথা দিয়েছিলেন। তখন আমি মুম্বইয়ে। বন্ধুদের কাছে সব শুনে মনে হয়েছিল, তা হলে চিকিৎসার খরচের জন্য কারও কাছে হাত পাততে হবে না। তিন বছর কেটে গেল। এখনও চাকরির দাবিতে পথেই বসে আছি!”
নবম থেকে দ্বাদশের এই চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন তিন দফায় ৩৯২ দিন ধরে চলছে। প্রেস ক্লাবের কাছে ২৯দিন, সল্টলেকের করুণাময়ীতে ১৮৭দিন এবং এখন গান্ধী মুর্তির নীচে সোমবার পর্যন্ত ১৭৬ দিন। জনৈক চাকরিপ্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “সোমাকে বারণ করেছিলাম, অসুস্থ শরীরে আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে বসতে। কিন্তু মনের জোরে যতটা পারেন, থাকছেন!” শুনে সোমা বলছেন, “ শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নকে কোনওভাবেই ফিকে হতে দেব না। কার আয়ু কতদিন কেউ জানে না! যত দিন বাঁচব নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাঁচতে চাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy