প্রতীকী ছবি।
বেসরকারি সরবরাহকারীদের (ডিস্ট্রিবিউটর) সরিয়ে বছর পাঁচেক আগেই মদ সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজেদের হাতে নিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বেভারেজেস কর্পোরেশন (বেভকো)। কিন্তু এখন কার্যত আগের মতোই এ কাজে সরবরাহকারীদের যুক্ত করতে চাইছে তারা। এর পরেই বেভকোর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেকের মনে। তাঁরা বলছেন, তা হলে কি বেভকোর বদলে ফের মদ সরবরাহের পুরনো পদ্ধতিতেই ফিরতে চাইছে সরকার? তবে আবগারি দফতরের দাবি, অনলাইন কেনাকাটার মঞ্চের আদলে গোটা ব্যবস্থাকে সাজানোর চেষ্টা চলছে। তাই পদ্ধতিতে এমন বদল আনা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্যই ২০১৭ সালে বেভকো তৈরি করে মদ-নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজেদের হাতে নিয়েছিল আবগারি দফতর। ২০২১ সালে ফের তারা ডিস্ট্রিবিউটরদের ফেরাতে চায়। সে সময় আবগারি দফতর জানিয়েছিল, একমাত্র মদ ব্যবসার সঙ্গেই যুক্ত কোনও সংস্থার বার্ষিক আয় ১৫০ কোটি টাকা (শেষ তিন অর্থবর্ষে) হলে তারা ডিস্ট্রিবিউটর হওয়ার আবেদন করতে পারবে। এ নিয়ে প্রবল বিতর্ক দেখা দেয়। ডিস্ট্রিবিউটরেরা প্রশ্ন তোলেন, গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে বেভকো যখন একাই এ কাজ করেছে, তখন এ রাজ্যের কোনও সংস্থা কি আদৌ সরবরাহকারী হওয়ার যোগ্যতামান অর্জন করতে পারবে? এ নিয়ে মামলাও হয়। পরবর্তী কালে আবগারি দফতর স্পষ্ট করে দেয়, যে কোনও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সংস্থা, যার বার্ষিক আয় ৫০ কোটি টাকা, তারা আবেদন করতে পারবে। এর পরেও পুরনো ডিস্ট্রিবিউটরদের অনেকের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও আবগারি সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত বিদেশি মদের ক্ষেত্রে ১৫টি এবং দেশি মদের ক্ষেত্রে চারটি সংস্থাকে ডিস্ট্রিবিউটরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
প্রশাসনিক আধিকারিকদের অনেকে জানান, নিজেদের নিয়ন্ত্রণে সরবরাহ থাকাকালীন প্রায় ৩% লভ্যাংশ রাখত বেভকো। এখন তারা আনুমানিক ১.৫% লভ্যাংশ রাখবে এবং বাকি ১.৫% থাকবে ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে। কিন্তু মাত্র ১.৫% লভ্যাংশে কোনও ব্যবসায়িক সংস্থা কী ভাবে লাভজনক ব্যবসা চালাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে সংশ্লিষ্ট মহল। তার ফলেই জল্পনা তৈরি হয়েছে যে লভ্যাংশের পুরোটাই বেভকোকে ছেড়ে দিতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বেভকোর অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। সরকারি এক আধিকারিকের বক্তব্য, “এই পদক্ষেপ থেকেই মনে হচ্ছে, সরকার তা হলে মদ সরবরাহের পুরনো পথে হাঁটবে কি?’’
যদিও আবগারি দফতরের যুক্তি, গুদামঘর রক্ষণাবেক্ষণ করা সরকারের কাজ নয়। এত দিন ধরে একটা পদ্ধতি স্থির হয়েছে। এ বার ডিস্ট্রিবিউটরেরা এ কাজে যুক্ত হলে সরবরাহের বিষয়ে মাথা ঘামাতে হবে না বেভকোকে। বরং সেই সংস্থাগুলিই গুদামঘর সামলানো, দোকানে মদ সরবরাহ করার দায়িত্ব পালন করবে। এ ব্যাপারে ক্ষতির আশঙ্কাও সরকারকে বহন করতে হবে না। এক কর্তার কথায়, “এখন ৬০-৭০টি গুদামঘর দেখাশোনা করতে হয় সরকারকে। তার জন্য নিরাপত্তা, লোকবল সবই নিযুক্ত করতে হয়েছে। এতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়ে থাকে। ডিস্ট্রিবিউটরেরা থাকলে এই খরচ করতে হবে না। যে লভ্যাংশ তাদের ছাড়তে হবে, তা নিত্য খরচ বাঁচিয়েই তুলে ফেলতে পারবে সরকার।”
আবগারি সূত্রের দাবি, ডিস্ট্রিবিউটরদেরও বঞ্চিত হতে হবে না। তাঁদের বার্ষিক আয় ২৫ কোটি টাকা হলেও তা গ্রাহ্য করবে সরকার। এমনকি, অন্য ব্যবসা থাকলেও আবেদনকারীর অনুমোদন (বাকি সবকিছু ঠিক থাকলে) পেতে সমস্যা হবে না। এক আবগারি-কর্তার বক্তব্য, “অনলাইন কেনাকাটার মাধ্যমগুলিতে যে ভাবে কাজ হচ্ছে, তেমন ধাঁচেই এই ব্যবস্থা পরিচালিত হবে। আগের মতো ভবিষ্যতেও বেভকোকেই টাকা দিয়ে মদের বরাত দিতে হবে দোকানগুলিকে। এলাকা অনুযায়ী বরাতের তথ্য পাঠানো হবে সংশ্লিষ্ট ডিস্ট্রিবিউটরকে। তারাই মদ দোকানগুলিতে সরবরাহ করবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy