রত্না চট্টোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) ও সৌমিত্র খান। —ফাইল চিত্র
আইনজীবীর বাড়িতে বিজেপি সাংসদের সঙ্গে তৃণমূলের নেত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের দেখা ও কথা হওয়া নিয়ে আরও এক দফা জল্পনা তৈরি হল রাজ্য রাজনীতিতে। বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ তথা যুব মোর্চার নেতা সৌমিত্র খাঁয়ের সঙ্গে বুধবার দেখা গিয়েছে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী রত্নাকে। জগদ্ধাত্রী পুজোর নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে গিয়েছে বলে রত্না দাবি করেছেন। তবে শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরত্ব কমার ইঙ্গিত মিলতেই বিজেপি সাংসদের সঙ্গে রত্নার এই ‘হঠাৎ’ দেখা হওয়া স্বাভাবিক কারণেই গুঞ্জন তৈরি করেছে।
গতকাল বুধবার এক আইনীজীবীর বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে নিমন্ত্রিত ছিলেন সৌমিত্র খাঁ এবং তাঁর স্ত্রী সুজাতা। নিমন্ত্রিত ছিলেন রত্না চট্টোপাধ্যাও। সেখানেই দেখা হয় তাঁদের। প্রথমে সৌজন্য বিনিময় এবং তার পর সৌমিত্র খাঁয়ের সঙ্গে রত্নার বেশ কিছু ক্ষণ কথা হয় বলে দু’জনের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর। শুধু সৌমিত্রই নন, তাঁর স্ত্রী সুজাতার সঙ্গেও রত্না গল্পগুজব করেন। দু’জনই পরস্পরের ভূমিকার প্রশংসা করেন বলেও জানা গিয়েছে।
কিন্তু এই নিয়েই শুরু হয়েছে নানা রকম জল্পনা। বিজেপি সাংসদের সঙ্গে কোনও একটি অনুষ্ঠানে তৃণমূল নেত্রী রত্নার দেখা হয়ে যেতেই পারে। কিন্তু তাঁরা দু’জন আলাদা করে কথা বলায় গুঞ্জন তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়েও যদি দেখা হয়, তা হলে সৌজন্য বিনিময়ের জন্য বেশ কিছু ক্ষণ কথা বলার মতো সম্পর্ক কি দু’দলের মধ্যে রয়েছে, এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।
আরও পডু়ন: বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’, গতিপথে এ রাজ্যের সুন্দরবন
যদিও রত্না চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার আইজীবীর বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজোয় আমি নিমন্ত্রিত ছিলাম। সেখানে আর কে কে নিমন্ত্রিত ছিলেন, আমি আগে থেকে জানতাম না। গিয়ে দেখলাম, সৌমিত্র খাঁ এবং সুজাতা খাঁ-ও রয়েছেন। তাঁরা অন্য দল করেন বলে মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতে তো পারব না। তাই সৌজন্য এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি।’’ অন্য দিকে বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, তৃণমূল নেত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হওয়ায় তাঁর সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেছেন সৌমিত্র। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক কথাবার্তা হয়নি।
গত ১৪ অগস্ট তৃণমূল ছেড়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন শোভন-বৈশাখী। কিন্তু তার পর থেকে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের সম্পর্ক খুব মসৃণ নয়। ভাইফোঁটার দিন বৈশাখীকে সঙ্গে নিয়ে শোভন সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে হাজির হওয়ায় বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁদের দূরত্বের জল্পনা আরও অক্সিজেন পায়। শোভন এবং বৈশাখী আবার তৃণমূলে ফিরতে পারেন কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। মমতার কাছ থেকে ভাইফোঁটা নিয়ে আসার কয়েক দিনের মধ্যেই রাজ্য সরকার শোভনকে ওয়াই প্লাস নিরাপত্তা দেওয়ায় সে গুঞ্জন আরও বাড়ে। এই রকম এক পরিস্থিতিতে রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কোনও এক বিজেপি সাংসদের ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ভ্রূকুঞ্চন যে ঘটাবে, এমনটাই স্বাভাবিক।
আরও পড়ুন: রায়ের আগে ‘অভেদ্য’ অযোধ্যা, সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি শুরু, উত্তরপ্রদেশে আধাসেনা পাঠাল কেন্দ্র
কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা চলছে রত্না চট্টোপাধ্যায়ের। শোভন এবং রত্না অনেক দিন ধরেই এক বাড়িতে আর থাকেনও না। রত্না একাধিক বার অভিযোগ করেছেন, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারণে শোভন বিবাহ-বিচ্ছেদ চাইছেন। তৃণমূল নেতৃত্ব এক সময়ে এই বিবাদে রত্নার পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছিল। শোভনের সঙ্গে বৈশাখীর সম্পর্ক নিয়ে প্রকাশ্যে কয়েক বার অসন্তোষ ব্যক্ত করেছিলেন খোদ তৃণমূল নেত্রী। সেই অবস্থান থেকে তৃণমূল এখনও ঘোষিত ভাবে সরে আসেনি। কিন্তু ভাইফোঁটার দিন মমতার বাড়িতে যে ছবি তৈরি হয়েছিল, তাতে বৈশাখীর প্রতি নরম হওয়ার বার্তাও দেখেছেন অনেকে। দলের নেতৃত্বের এই অবস্থানই কি অপছন্দ হল রত্নার? বিজেপি সাংসদের সঙ্গে আইনজীবীর বাড়িতে ‘সৌজন্যমূলক’ আলাপচারিতায় মেতে রত্নাও কি দলকে কোনও বার্তা দিতে চাইলেন? এই প্রশ্ন নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। এক দিকে নৈকট্য বাড়লে অন্য দিকে দূরত্ব তৈরি হবে, এই রকম কোনও ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা হল কি না, তা নিয়ে গুঞ্জন তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। রত্না চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁর সঙ্গে সৌমিত্র খাঁ-র দেখা হয়ে যাওয়া নেহাতই সমাপতন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy