প্রতীকী ছবি
জগন্নাথের মানবলীলার অঙ্গ রথযাত্রা। সাধারণ মানবজীবনের রূপকেই অসুস্থ হন তিনি। পুরীর মন্দিরে কোয়রান্টিনে থাকার ঢঙেই অনশরপেন্ডিতে ১৪ দিন ধরে চলে তাঁর অনশরপর্ব। এর পরে সদ্য রোগমুক্ত শরীরে সুসজ্জিত হয়ে তাঁর রথযাত্রা এবং ১২ দিনের অনুষ্ঠান হল, প্রভুর মন্দিরে রত্নবেদিতে প্রত্যাবর্তনের শর্ত। জগন্নাথ-সংস্কৃতির পরম্পরা অনুসারে, রথযাত্রা তাই আবশ্যক বলেই সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন জমা দিয়েছেন উৎকলের জগন্নাথ-অনুরাগীরা। মঙ্গলবার রথ। তার আগে, আজ সোমবার বেলা ১১টায় এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা।
কিন্তু রথ না-হলে কী হবে? কী ভাবে রত্নবেদিতে ফিরবে শ্রীবিগ্রহ? তবে কি জগন্নাথ-দর্শনেই অনিশ্চয়তা থাকবে বছরখানেক? ওড়িশার সাধারণ ভক্ত, রাজনৈতিক দল থেকে জগন্নাথ বিশারদেরা এই অনিশ্চয়তার জন্য নবীন পট্টনায়কের প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলছেন। অনেকেরই বক্তব্য, এ বারেও ১০-১২ লক্ষের ভিড় হবে বলে সুপ্রিম কোর্টকে ভুল বোঝানো হয়েছিল। পুরীর শঙ্করাচার্য নিশ্চলানন্দ সরস্বতী তো রথযাত্রা বানচাল করতে রাজ্য সরকারের চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন। পুরীর গজপতি রাজা দিব্যসিংহ দেবও অনুষ্ঠানের ঘটাপটা কমালেও রথযাত্রার আচার অলঙ্ঘনীয় বলে মনে করেন।
রথযাত্রার বিকল্প নিয়ে জল্পনায় ভুবনেশ্বরের শ্রীজগন্নাথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সভাপতি সুরেন্দ্রনাথ দাসও চিন্তিত। তিনি বলছেন, ‘‘শীর্ষ স্তরের সেবায়েত বা মন্দির প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তাব, অনশরপেন্ডি থেকে শ্রীবিগ্রহ প্রথমে কিছু দিন মন্দিরের ভিতরে ভোগমণ্ডপে বা অস্থায়ী কাঠামো তৈরি করে রাখা যেতে পারে। ১২ দিন পরে মন্দিরের ভিতরেই আচার-অনুষ্ঠান সেরে তিনি ফিরবেন।’’ তবু এই ব্যবস্থা অনেকেরই মনঃপুত নয়। সুরেন্দ্রনাথ দাস, গোপীনাথ মোহান্তির মতো জগন্নাথ-সংস্কৃতিবিদেরা বলছেন, স্কন্দ পুরাণে বলা হয়েছে, জগন্নাথদেবের আবির্ভাবই গুন্ডিচা মন্দিরে। রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের প্রার্থনায় তিনি মন্দিরের রত্নবেদিতে গেলেও শর্ত দিয়েছিলেন, বছরে এক বার গুন্ডিচায় তাঁর জন্মবেদিতে ফেরাতেই হবে। সুরেন্দ্রনাথের কথায়, ‘‘ভক্তদের থাকার দরকার নেই। কিন্তু জগন্নাথদেবের জন্যই রথযাত্রা জরুরি। তিনি মন্দিরে আছেন, অথচ রথে বেরোচ্ছেন না, এমন কখনও হয়নি।’’ এ-সব যুক্তি পেশ করে সর্বোচ্চ আদালতকে বোঝানোর চেষ্টা চলছে। বলা হচ্ছে, শুধু কোভিড পরীক্ষা করানো সেবায়েতরাই থাকবেন। চাপ বাড়াতে ওড়িশার বিজেপি নেতারাও নবীন সরকারকে শঙ্করাচার্য ও গজপতি রাজার কথা শুনতে বলছেন। সম্বিত পাত্রও রথযাত্রার জন্য সর্বোচ্চ আদালতে আর্জি পেশ করেন।
রবিবার রাত পর্যন্ত শ্রী মন্দিরে রথযাত্রার আগের সব অনুষ্ঠানই অবশ্য সুসম্পন্ন। অর্থাৎ, জগন্নাথ এখন অসুখ থেকে মুক্ত। অনশরপেন্ডিতে তাঁর নবযৌবনবেশ ধারণের অনুষ্ঠান হয়েছে। বিগ্রহে রং লেপে নেত্রদানের অনুষ্ঠানও সম্পূর্ণ। জগন্নাথ দয়িতাপতি, রামচন্দ্র দয়িতাপতিরা বলছেন, ‘‘সোমবার সকালে ভোগের পরে প্রভুর আজ্ঞামালা যাবে রথে। তা হলে তো রথ করতেই হবে!’’ সব দিক দিয়েই চাপে ওড়িশা সরকার।
আরও পড়ুন: করোনা ঠেলেই গ্রহণ দর্শন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy