টানটান: (বাঁ দিক থেকে) মেয়র সব্যসাচী দত্ত, চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী, বরো চেয়ারপার্সন অনিতা মণ্ডল ও মিনু চক্রবর্তী এবং কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। সোমবার, বিধাননগর পুরসভায়। নিজস্ব চিত্র
দিনভর টানটান উত্তেজনা। একতলায় ক্যান্টিন হোক কিংবা পারিষদদের বসার জন্য পুরসভার দোতলা— ফিসফাস, গুঞ্জন সর্বত্র। পুরকর্মী, পুর আধিকারিক, ঠিকাদার— সকলেই পরিচিত সাংবাদিককে মওকা পেলেই জিজ্ঞাসা করেছেন, ‘‘সত্যিই কি মেয়র বদল হচ্ছে?’’
সোমবার সারাদিনে অবশ্য সেই প্রশ্নের উত্তর পরিষ্কার হয়নি। তবে এ দিন সল্টলেকের এফডি ব্লকে বিধাননগর পুরসভায় এ দিন প্রহরে প্রহরে যেন ‘ঘটনা’ তৈরি হয়েছে। বেশ কিছু দিন ধরেই মেয়র সব্যসাচী দত্তের বিভিন্ন বক্তব্য ঘিরে এমনই জল্পনা তৈরি হচ্ছিল যে তিনি বোধহয় বিজেপির দিকে ঝুঁকছেন। যার জেরে সব্যসাচীর বিরোধী শিবিরও পুরসভায় ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে সলতে পাকানো শুরু করেছিল। ইতিমধ্যেই শুক্রবার বিদ্যুৎ ভবনে সেখানকার কর্মচারী সংগঠনের বিক্ষোভে সব্যসাচীর কিছু মন্তব্য দলবিরোধী হিসেবে ‘প্রতিপন্ন’ হয়। যার জেরে রবিবার মেয়রকে বাদ দিয়ে কাউন্সিলরদের নিয়ে তৃণমূল
ভবনে বৈঠক করেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এবং পুরসভার কাজ দেখাশোনার জন্য দায়িত্ব দেন ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়কে। যিনি সব্যসাচীর বিরোধী শিবিরের মধ্যমণি বলেই পরিচিত।
তাই সোমবার পুরসভা শুরু হতে না হতেই সর্বত্রই কৌতূহল শুরু হয় এ দিন কী ঘটতে চলেছে তা দেখার জন্য। অন্য দিনের তুলনায় ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায় এ দিন একটু তাড়াতাড়িই পুরসভায় পৌঁছে যান। তার আগে সকালে খবর চাউর হয় যে তাপসবাবু এ দিন মেয়র পারিষদদের নিয়ে বৈঠক ডাকতে চলেছেন। সব্যসাচীর বিরোধী শিবিরের সদস্য বলে পরিচিত মেয়র পারিষদ রাজেশ চিরিমার, সুধীর সাহা কিংবা সুভাষ বসু, নির্মল দত্ত, দেবরাজ চক্রবর্তীদের মতো কাউন্সিলরেরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে আলাদা করে পুরসভার একটি ঘরে ঢুকে পড়েন। যদিও পরে ডেপুটি মেয়র তাপসবাবু বলেন, ‘‘আইনত আমি কোনও বৈঠক ডাকতে পারি না। পুরমন্ত্রী দ্রুত বকেয়া কাজ শেষ করতে বলেছেন। তার জন্য কী প্রয়োজন তা জানতে আলোচনা হয়েছে।’’
তবে দুপুর হতেই নির্ধারিত সময় অনুযায়ী একে একে মেয়র পারিষদ দেবাশিস জানা, প্রণয় রায়, চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীরা পুরসভায় তাঁদের দফতরে পৌঁছে যান। ধীরে ধীরে সাধারণ তৃণমূলকর্মী, বিভিন্ন নেতার ঘনিষ্ঠ লোকজন, সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ভিড়ও বাড়তে থাকে পুরসভায়। আচমকাই বাতাসে ভাসতে শুরু করে কয়েকটি প্রশ্ন, ‘সব্যসাচী কি ইস্তফা দেবেন’, ‘কে হবেন নতুন মেয়র’। কেউ কেউ আগাম হিসেব-নিকেশ করে জানতে চান, রাজারহাটের একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতা তাপস চট্টোপাধ্যায়ের অতীত ভুলে তাঁকে সর্বস্তরের কাউন্সিলরেরা মেয়র বলে মানবেন তো? না কি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীকে মেয়র হিসেবে বেছে নেওয়া হবে?
এমন পরিবেশের মধ্যেই রটে যায় সব্যসাচী মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। পুরমন্ত্রী তাঁকে ইস্তফা দিতে বলেছেন। মেয়র, চেয়ারপার্সন কিংবা ডেপুটি মেয়রের ঘরের সামনে তখন উৎসাহীদের ভিড়। শেষ বিকেলে সব্যসাচী পুরসভায় ঢুকতেই জল্পনা তুঙ্গে ওঠে। তবে নিজের দফতরে বসে সব্যসাচী স্পষ্ট করে দেন যে কেউ তাঁকে ইস্তফা দিতে বলেননি। মেয়র হিসেবে তিনিই কাজ চালিয়ে যাবেন। ডেপুটি মেয়র তাপসবাবুকেও কটাক্ষ করেন সব্যসাচী।
তবে সব্যসাচীর কথায় যেন ভুলতে রাজি ছিলেন না কেউ। ফলে তিনি চেয়ার পার্সন কৃষ্ণার চেম্বারে ঢুকতেই সেখানে হাজির হন সাংবাদিকেরা। গুঞ্জন ছড়ায়, কৃষ্ণার কাছে ইস্তফাপত্র জমা দেবেন সব্যসাচী।
তবে সব জল্পনার অবসান হয় শেষ পর্যন্ত তাপস চট্টোপাধ্যায়ের কথার পরেই। ডেপুটি মেয়র জানিয়ে দেন, পুরমন্ত্রী অনাস্থা আনতে প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন। তত ক্ষণে অবশ্য ছুটি হয়ে যাওয়ায় পুরকর্মীদের ভিড় পাতলা হয়ে এসেছে। তবে পুরসভায় আসা সাধারণ বাসিন্দাদের ভিড় তখনও জমে থাকতে দেখা যায় একতলায়।
সেই আমনাগরিকদের অনেককে আবার পুরকর্তাদের এই কাজিয়াকে ভাল চোখে নিতেও দেখা গেল না। কেউ কেউ বললেন, ‘‘সল্টলেকের বাসিন্দা বিশিষ্ট কোনও নাগরিককে মনোনীত করা হোক। দলের মধ্যে এই প্রকাশ্য কাজিয়া উপনগরীর নাগরিকেরা ভাল চোখে নিচ্ছেন না।’’
এখন কবে আনা হবে সেই অনাস্থা তার অপেক্ষাতেই থাকছে বিধাননগর পুরসভা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy