Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
DYFI Brigade Rally

মিনাক্ষী বা সেলিম নন, আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে যুব সিপিএমের ব্রিগেডে সেরা বক্তা কে?

সাত জনের মধ্যে পাঁচ জনেরই ব্রিগেডের মতো মহামঞ্চে প্রথম বক্তৃতা। কারও বক্তৃতায় আন্দোলিত হয়েছে জমায়েত। কারও বক্তৃতার সময়ে আবার ঝিমিয়ে পড়ছিল মেজাজ।

An image of CPM Ledaers

(বাঁ দিকে) মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায় এবং মহম্মদ সেলিম (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:৩৪
Share: Save:

রবিবার বাম যুবদের ব্রিগেডে বক্তৃতা করেছেন সাত জন। তাঁদের কারও গলার স্বর ছিল চড়া। কারও আবার ধীর লয়ে। কেউ শুধুই বাংলায়, কেউ শুধুই ইংরেজিতে। তবে একাধিক বক্তার গলাতেই শোনা গিয়েছে বাংলা-হিন্দির মিশেল। সাত জনের মধ্যে পাঁচ জনেরই ব্রিগেডের মতো মহামঞ্চে প্রথম বক্তৃতা। কারও বক্তৃতার সময় আন্দোলিত হয়েছে জমায়েত। কারও বক্তৃতার সময়ে আবার ঝিমিয়ে পড়ছিল মেজাজ। সেই সঙ্গে শব্দচয়ন, শরীরী ভাষা, একটা বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে যাওয়ার সেতুবন্ধন—সবটা মিলিয়েই বক্তাদের নম্বর দিল আনন্দবাজার অনলাইন।

ধ্রুবজ্যোতি সাহা

সভার সভাপতি হিসেবে প্রথম বক্তৃতা করেন ডিওয়াইএফআই রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি। তিনি মুর্শিদাবাদের ছেলে। গোটা ইনসাফ যাত্রায় হেঁটেছেন ৫০ দিন ধরে। রবিবার নিজের বক্তৃতায় খুব ভাল ভাবেই বিভিন্ন এলাকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি। ১২ মিনিটের বক্তৃতায় দেহাতি টানে ঝাঁঝ ছিল। তবে বক্তৃতার শেষে সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা উদ্ধৃত করতে গিয়ে শব্দ ভুল বলেন তিনি। ‘শ্মশান’-এর বদলে ‘মহাশ্মশান’ বলেন ধ্রুব। এই ভুল এবং বাকি ছ’জনের সঙ্গে তুলনায় আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে ধ্রুব পাচ্ছেন ১০-এ সাড়ে ছয়।

এ রহিম

কেরলের ভূমিপুত্র এ রহিম ইংরেজিতে বক্তৃতা করেছেন। দেশের রাজনীতি, বাম দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিজেপি সম্পর্কে তাঁর কথা এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অল্প সময়ে সার্বিক রাজনৈতিক বক্তৃতা করলেও, সে ভাবে জমায়েতের মধ্যে হইহই পড়েনি। হতে পারে ভাষার কারণেই সেটি হয়েছে। সব মিলিয়ে রহিম পাচ্ছেন, ১০-এ চার।

সৃজন ভট্টাচার্য

এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন বক্তৃতা করেছেন সাত মিনিট। কিন্তু ব্রিগেডের মতো মহাসমাবেশে বলতে গিয়ে অনেকেই যখন হোঁচট খান, তখন সৃজন এ দিন বুঝিয়েছেন, তিনি সাবলীল, পরিণত। ছাত্রদের দাবির সঙ্গে যুবদের দাবিকে জুড়েছেন খুবই ভাল ভাবে। সেই সঙ্গে শাসকদল তৃণমূলে যখন নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব চলছে তখন তাঁর দলের প্রেক্ষাপটে অন্য ভাবে উপস্থাপন করেন। বলেন, ‘‘আগে আমাদের উদ্দেশে বলত, ছোটরা পারবে? আর এখন বলছে বড়রা কই? আরে বড়রা আছে, বাবার গায়ে হাত দেওয়ার আগে ছেলের গায়ে হাত দাও।’’ সেই সঙ্গে তৃণমূলের উদ্দেশে বলেন, ‘‘ওদের প্রবীণও চোর, নবীনও চোর।’’ দু’জনের বাড়ির নাম মিলিয়ে আক্রমণ করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীকেও। সলিল চৌধুরীর শতবর্ষের কথা উল্লেখ করে যে ভাবে তাঁর লেখা লাইনের সঙ্গে রবিবারের ব্রিগেডকে উপস্থাপন করেছন, তা-ও সৃজনশীল। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে সেরা বক্তা সৃজনই। তিনি ১০-এ নয় পাচ্ছেন।’’

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্য

হিমঘ্ন ডিওয়াইএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তবে ১০ মিনিটের বক্তৃতায় তিনি এমন কোনও মনে রাখার মতো লাইন বলেননি। তাঁর কথায় সে ভাবে উদ্বেল হয়নি ভিড়। হতে পারে হিমঘ্ন ভাল সংগঠক। সে কারণেই হয়ত সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। তবে বাক্যের মাঝে অহেতুক ‘হচ্ছে’ শব্দটির ব্যবহার কানে লেগেছে। তবে শেষ দিকে হিন্দিতে কিছু কথা বলেন তিনি। সেই উচ্চারণ ছিল স্পষ্ট। তবে সাবধানী। তিনি পাচ্ছেন ১০-এ পাঁচ।

আভাস রায়চৌধুরী

ডিওয়াইএফআইয়ের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক আভাস রবিবার বক্তৃতা করেছেন ১৮ মিনিট। বর্ধমানের ভূমিপুত্র আভাসের বক্তৃতায় ধ্রুপদী বাম ঘরানা রয়েছে। কিছুটা কাঠ কাঠ হলেও সেই বক্তৃতায় রাজনীতি ঠাসা। আভাস অতীতেও ব্রিগেডে বলেছেন। এখন তিনি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। সিপিএমের অন্দরে আভাসকেই বলা হয়ে থাকে মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের আবিষ্কর্তা। সেই আভাস রবিবারের সভায় বলেছেন, ‘‘ব্রিগেডের ভিড়কে বুথে নিয়ে যেতে হবে।’’ সিপিএমের কাছে এই মুহূর্তে আশু সাংগঠনিক কাজও বটে। কারণ, ভিড় হলেও ভোটে তার প্রতিফলন ঘটে না। এটা সিপিএমের কাছে দুশ্চিন্তারও বটে। তবে আভাস ১০- এ ৭ পাচ্ছেন। কারণ, তৃণমূল ও বিজেপি দুই দলকে একসঙ্গে ‘চোর’ বলে আক্রমণ শানাতে গিয়ে এমন একটি শব্দ ব্যবহার করেন, যা প্রকাশ্যে কোনও রাজনীতিকেরই বলা সমীচীন নয় বলে অনেকের মত।

মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়

রবিবারের ব্রিগেড হয়েছে তাঁর নামে। বক্তা হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পরেই গোটা ব্রিগেড কার্যত গর্জন করে উঠেছিল। টানা চিৎকারের সামনে প্রথম ২৫ সেকেন্ড মাইক ধরে চুপ থাকতে হয়েছিল। তার পর ২২ মিনিটের বাংলা-হিন্দির মিশেল বক্তৃতায় বার বার আন্দোলিত হয়েছে সমাবেশে আসা বাম জনতা। যে ভাবে নিজের বক্তৃতায় ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট সিরিজের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘আমাদের কাছে সিরাজের মতো খেলোয়াড় আছে। টেস্ট খেলতে নামলেও দেড় দিনে খেলা গুটিয়ে দিতে পারি’’—তা শুনে মনে হয়েছে, তিনি খেলার খবর রাখেন। তাকে রাজনীতির ভাষ্যে মিশিয়েও দিতে পারেন। তবে বিপত্তি বাধিয়ে বসেন একেবারে শেষ দিকে। নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা উদ্ধৃত করতে গিয়ে লাইন গুলিয়ে ফেলেন। তার পর নিজেই বলেন, ‘‘ভুলে গেছি।’’ সে উচ্চারণে কোনও শঠতা ছিল না। আনন্দবাজার অনলাইনের বিচারে তিনি পাচ্ছেন, ১০-এ আট।

মহম্মদ সেলিম

সভার শেষ বক্তা ছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সেলিম। তিনি শুরুই করেন মিনাক্ষীর ভুল স্বীকার দিয়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করে খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘‘কেউ ডহরবাবুকে খোঁজেন। কিন্তু ভুল স্বীকার করেন না। আর মিনাক্ষী সেটা করল। এটাই ফারাক।’’ মিনাক্ষীকে যে ভাবে আড়াল করলেন সেলিম, তা-ও সিপিএমের দুই প্রজন্মের ‘ঐক্য’ তুলে ধরেছে। অভিভাবক হিসাবে পাশে দাঁড়ানোর মতোই ছিল গোটা বিষয়টি। সেলিম এমনিতে সুবক্তা। বাংলা, হিন্দি, উর্দু, ইংরাজি—চার ভাষাতেই সাবলীল। রবিবারও সার্বিক ভাবে জাতীয় ও রাজ্য রাজনীতির প্রেক্ষাপট বলে তাঁর দলের অবস্থান জানান। তুলনামূলক উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করেন সবটা। সেলিম পাচ্ছেন ১০-এ সাড়ে আট।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy