পঞ্জাব ও তামিলনাড়ুর রাজ্যপালকে শুক্রবার তীব্র ভর্ৎসনা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের সেই মন্তব্য নিয়ে শনিবার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের উপলব্ধিতে আমরা খুশি। আশা করি রাজ্যপাল (বাংলার) সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে চলবেন।’’ বিমান আরও বলেন, ‘‘বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল যদি রাজ্যপাল দ্রুত না অনুমোদন করেন, তা হলে তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্ট সঠিক ভাবেই অনুধাবন করেছে।’’ তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, রাজ্যপাল নিশ্চিত ভাবেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করবেন।
পঞ্জাবের আম আদমি পার্টি (আপ)-র মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিংহ মান সরকারের সঙ্গে রাজ্যপাল তথা প্রাক্তন বিজেপি নেতা বনোয়ারিলাল পুরোহিতের সংঘাত তীব্র জায়গায় পৌঁছেছে। পঞ্জাব সরকার সুপ্রিম কোর্টে নালিশ করে, বিধানসভায় পাশ হওয়া বেশ কয়েকটি বিলে রাজ্যপাল অনিমোদন না দিয়ে তা ঝুলিয়ে রেখেছেন। শুক্রবার পঞ্জাবের রাজ্যপালের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় মন্তব্য করেন, ‘‘আপনি আগুন নিয়ে খেলছেন। এক জন রাজ্যপাল কী ভাবে এমন করতে পারেন? পঞ্জাবে যা হচ্ছে তাতে আমরা খুশি নই। আমরা কি সংসদীয় গণতন্ত্র বজায় রাখব?’’
একই অভিযোগে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কেরল এবং তামিলনাড়ুর সরকারও। সেখানেও রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত চরমে উঠেছে। সরকারের পাশ করা বিল ঝুলিয়ে রেখেছেন রাজ্যপালেরা। বস্তুত মামলার প্রথম শুনানির দিনই প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ‘‘রাজ্যপালদের সামান্য একটু আত্মানুসন্ধান করা জরুরি। তাঁদের মনে রাখতে হবে, রাজ্যপাল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন। বিধানসভা কোনও সিদ্ধান্ত নিলে তাকে গুরুত্ব দেওয়াটা জরুরি।’’
বাংলায়ও এমন ঘটনার উদাহরণ গত কয়েক বছরে অনেক রয়েছে। সেই জগদীপ ধনকড়ের সময়ে হাওড়া পুরনিগম থেকে বালি পুরসভাকে পৃথক করার বিল পাশ হয়েছিল। সেই বিলের লাল ফিতে আজও খোলেনি। ফলে ভোটও আটকে রয়েছে হাওড়া পুরসভায়। আরও নানাবিধ বিষয়েই বিধানসভা, রাজ্য সরকারের সঙ্গে বাংলার রাজভবনের সংঘাত লেগে রয়েছে।
বিজেপি-বিরোধী দল পরিচালিত রাজ্যগুলিতে রাজ্যপালেদের ভূমিকা নিয়ে বিস্তর আলোচনা রয়েছে। বিরোধীদের বক্তব্য, ভোটে জিততে না পেরে বিরোধী দল শাসিত রাজ্যে রাজ্যপালেদের এজেন্ট করে পাঠাচ্ছে দিল্লি। তাঁদের কাজ নির্বাচিত সরকারের কাজে বাধা দেওয়া, সমান্তরাল প্রশাসন চালানো। রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্টের শুক্রবারের পর্যবেক্ষণ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।