দেবশ্রী রায়, শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় —ফাইল চিত্র।
দলে যোগ দিতে গিয়ে নয়াদিল্লির অশোক রোডে বিজেপি-র সদর দফতরে তাঁকে দেখে ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন সবান্ধবী শোভন চট্টোপাধ্যায়। এতটাই যে, বিজেপি দফতরে গিয়েও তাঁর আপত্তিতে বাংলা ছবির নামী অভিনেত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ককে দিল্লি থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল শূন্যহাতে। তদবধি দেবশ্রী রায়ের যোগ দেওয়া হয়নি বিজেপি-তে। জনশ্রুতি: দেবশ্রীকে বিজেপি দফতরে দেখে ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন শোভন-বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সেই নাটকে সম্ভবত যবনিকাপাত হল বৃহস্পতিবার। যখন দেবশ্রীর বিধানসভা কেন্দ্র রায়দিঘিতে গিয়ে শোভন সরাসরি ক্ষমা চাইলেন গত বিধানসভা ভোটে দায়িত্ব নিয়ে দেবশ্রীকে জেতানোর জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করে।
আর দেবশ্রী বললেন, ‘‘ওঁকে তো আমায় জেতানোর দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। ক্ষমা চাইবার কী আছে!’’
বিজেপি-র হয়ে সম্প্রতি ময়দানে নেমেছেন শোভন-বৈশাখী জুটি। প্রায় প্রতিদিনই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় সভা এবং পদযাত্রা করছেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার যেমন গিয়েছিলেন রায়দিঘিতে। সেখানেই শোভন বলেন, গতবার ওই বিধানসভা কেন্দ্রে দেবশ্রীকে জেতানোর জন্য তিনি ‘ক্ষমাপ্রার্থী’। বস্তুত, দেবশ্রীকে শুধু জেতানোই নয়। তৃণমূলের অন্দরে ওয়াকিবহালরা জানেন, ২০১৬ সালে রায়দিঘিতে দেবশ্রীর আবার টিকিট পাওয়াও হয়েছিল শোভনের সৌজন্যেই। ২০১১ সালে প্রবল মমতা-ঝড়ে সিপিএমের কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়কে হারিয়ে রায়দিঘিতে জিতেছিলেন দেবশ্রী। কিন্তু মধ্যবর্তী বিভিন্ন সময়ে, বিশেষত আয়লার পর এলাকার বিধায়ককে সেখানে দেখা যায়নি বলে জনমানসে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে দলের একাংশে এমন দাবিও উঠেছিল, যাতে দেবশ্রীকে রায়দিঘিতে দ্বিতীয়বার টিকিট না-দেওয়া হয়।
শোভনই তখন উদ্যোগী হয়ে নেত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন, যাতে দেবশ্রীকে রায়দিঘিতে টিকিট দেওয়া হয়। তিনি দায়িত্ব নিয়ে তাঁকে জিতিয়ে আনবেন। কথা রেখেওছিলেন শোভন। আয়লার সময় হাঁটুজলে নেমে দিনরাত কাজ-করা কান্তি ভোটে হেরে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার ভোটে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন দেবশ্রী। বৃহস্পতিবার শোভন জানিয়েছেন, দিল্লির বিজেপি দফতরে দেবশ্রীকে দেখে তিনি বলেছিলেন, ‘‘যে মানুষ টোটো কেলেঙ্কারিতে লক্ষ লক্ষ টাকা চুরিতে যুক্ত, তিনি যে দলে থাকবেন, আমরা সে দলে যোগ দিতে পারব না।’’
অতঃপর সমীকরণ বদলে গিয়েছে। শোভনের ব্যক্তিগত জীবনের জল অনেক দূর গড়িয়ে গিয়েছে। ফলে দেবশ্রীর সঙ্গেও তাঁর দূরত্ব বেড়েছে। রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত— উভয় স্তরেই। রাজনৈতিক দূরত্বের পর এই প্রথম দেবশ্রীর রায়দিঘিতে পদার্পণ করলেন শোভন। সঙ্গে ছিলেন বৈশাখীও। সেখানে দাঁড়িয়েই শোভন বলেন, ‘‘ওঁকে আমিই এখানে দায়িত্ব নিয়ে জিতিয়েছিলাম। সেই কারণে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’’ বৈশাখী অভিযোগ করেন, ‘‘শুনেছি, উনি এলাকার মানুষকে টোটো দেবেন বলে কিছু টাকাপয়সা তুলেছিলেন। কিন্তু লোকজন টোটো পাননি। টাকাও ফেরত পাননি।’’ পাশাপাশিই শোভনের বান্ধবী আরও বলেন, ‘‘ওঁকে তো রাজনীতিতেও দেখা যায় না। সিনেমাতেও দেখা যায় না। এখন শুনেছি, উনি আবার নাকি সিনেমা করছেন।’’
যা শুনে রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ক বলেছেন, ‘‘আমি সিনেমা করছি কি করছি না, সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। ইচ্ছে করলে করব। ইচ্ছে না করলে করব না। আমার ব্যক্তিগত বিষয়ে কেউ কেন মন্তব্য করবেন!’’ দেবশ্রীর আরও বক্তব্য, ‘‘শোভন চট্টোপাধ্যায় যদি রায়দিঘিতে গিয়ে আমার নামে কিছু বাজে কথা বলে কয়েকটা ভোট বেশি পান, তা হলে বলুন! আপনার আর বৈশাখীর অন্দরমহলে তো আমি ঢুকি না। তা হলে আপনারা আমায় নিয়ে পড়েছেন কেন!’’
দেবশ্রীর আরও ঝাঁঝাল জবাব, ‘‘দেবশ্রী রায়কে নিয়ে যদি প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়, তা হলে দ্বিতীয়বার আমাকে ডাকতে হয়েছিল কেন? শোভনবাবু এটা মাথা থেকে সরিয়ে দিন যে আমি বিজেপি-তে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। একটা চক্রান্তের শিকার হয়ে সেদিন আমি ওখানে গিয়েছিলাম। টোটো কেলেঙ্কারিতে আমার নাম জড়িয়েছে আমি মানছি। কিন্তু যে দোষী, তাকে জেলে ভরেছি আমি। মুখ্যমন্ত্রীকেও সে কথা জানিয়েছি। রায়দিঘির মানুষ জানেন, আমি ১০টা পয়সাও চুরি করিনি। গরিবের টাকা চুরি করে বড়লোক হওয়ার ইচ্ছে আমার নেই।’’
আর বৈশাখীর টিপ্পনি সম্পর্কে দেবশ্রীর জবাব, ‘‘বৈশাখী বলছে, আমার সিনেমার কেরিয়ার শেষ। উনি কে আমার সিনেমা নিয়ে কথা বলার! আমি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছি। রেখা এখন সিনেমা করছেন না বলে কি কেউ তাঁকে ভুলবে? দেবশ্রী রায়কেও কেউ ভুলবেন না।’’ তার পরেই আবার শোভনকে লক্ষ্য করে, ‘‘শোভন চট্টোপাধ্যায়। আমি ভদ্র। মুখ বন্ধ রাখি। সেটাই আমার রুচি। আমি মুখ খুললে কি ভাল হবে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy