দিল্লিতে বিজেপিতে যোগদানের দিন শোভন চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন, অর্থাৎ ১৪ অগস্ট তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি এখনও সরগরম। এমন আবহের মধ্যেই শনিবার নয়া পদক্ষেপ করেছিল রাজ্য সরকার। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর নিরাপত্তার একটি স্তর সরিয়ে নেয় লালবাজার। সেই টানাপড়েনে এ বার ভিন্ন মাত্রা যোগ করলেন শোভন চট্টোপাধ্যায় নিজে। তাঁর নিরাপত্তার আবেদন সোজা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের টেবলে পাঠিয়ে দিলেন সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া বেহালা পূর্বের ওই বিধায়ক। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপকে ‘প্রতিহিংসা মূলক আচরণ’ বলেই ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। অন্য দিকে, বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে শোভনের নিরাপত্তার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
অমিত শাহকে পাঠানো চিঠিতে শোভন চট্টোপাধ্যায় নিরাপত্তার জন্য আবেদন করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমি আপনার কাছে অনুরোধ করছি, দয়া করে আমাকে পর্যাপ্ত সরকারি নিরাপত্তা দেওয়া হোক।’ রাজ্যের মন্ত্রী থাকাকালীন ও তার পরবর্তী সময়ে কী ধরনের নিরাপত্তা পেতেন তিনি, তা-ও উল্লেখ করেছেন শোভন। তিনি লিখেছেন, ‘প্রথমে আমাকে জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা দেওয়া হত। কিন্তু, চলতি বছরের নভেম্বর মাসে আমি সমস্ত সরকারি পদ থেকে ইস্তফা দিই। তখন আমার নিরাপত্তা কাটছাঁট করে ওয়াই প্লাস ক্যাটেগরিতে নামিয়ে আনা হয়। আমি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ছিলাম। আমার উপর অনেক বার হামলাও হয়েছে।’
রাজ্য পুলিশের তরফে পাঁচ জন ও কলকাতা পুলিশের তরফে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ছ’জন নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়েছিল। শনিবারই ছয় নিরাপত্তা রক্ষীকে সরিয়ে নিয়েছে লালবাজার। তা নিয়েও পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাকেও ইমেল করেছেন শোভন। তিনি লিখেছেন, ‘আমার ও আমার ঘনিষ্ঠজনদের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, সে জন্য দ্রুত নিরাপত্তা ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করছি।’ সেই সঙ্গে, কেন তাঁকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হত তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন শোভন। লিখেছেন, ‘নানা কারণে আমার জীবন সংশয় হওয়ার জন্যই গত ১৯৯৫ সাল থেকে আমাকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছিল। রাজ্যের মন্ত্রী ও মেয়র থাকাকালীন আমার অনেক সিদ্ধান্তই অনেকের স্বার্থে আঘাত করেছে। আমার জীবন সংশয় দেখা দেওয়াতেই আমাকে জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা দেওয়া হত। কিন্তু, কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তা ছেঁটে ওয়াই প্লাস করা হয়।’ দিল্লি থেকে আজ সন্ধেয় যে তাঁরা কলকাতায় ফিরছেনও তা-ও পুলিশ কমিশনারকে জানিয়েছেন শোভন।
আরও পড়ুন: অশালীন মন্তব্যের প্রতিবাদ, ছাত্রীর মাথার উপর দিয়ে বাইক চালিয়ে দিল দুষ্কৃতী
পুলিশ কমিশনারকে নিরাপত্তা ফেরানোর অনুরোধ করলেও, নবান্নের পদক্ষেপ নিয়ে ক্ষোভ চেপে রাখেননি শোভন। অভিযোগের সুর চড়া তাঁর ইমেলের বয়ানেও। তিনি লিখেছেন, ‘১৭ অগস্ট রাত ১১.১৫ নাগাদ কলকাতা পুলিশের তরফে আমার সমস্ত নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার প্রতিহিংসাবশত এমন কাজ করতে পারে বলে আমি আগেই আশঙ্কা করেছিলাম। যাই হোক, প্রশাসনের চোখে সকলেই সমান।’ পুলিশ কমিশনারকে নিরাপত্তা ফেরানোর আর্জি জানালেও তা আদপে বাস্তবায়িত হবে না বলেই মনে করছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। তবে, বিজেপি সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকেই এ বার তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।
শুধু শোভন নন, তাঁর সঙ্গে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিরাপত্তা চান বলে জল্পনা তৈরি হয়েছিল এ দিন সকালে। পরে তা অবশ্য নস্যাৎ করে দেন বৈশাখী নিজেই। এ দিন তিনি আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘শুধুমাত্র শোভন চট্টোপাধ্যায়ই নিরাপত্তা চেয়ে অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছেন। আমি নিরাপত্তা চাইনি। আমি অমিত শাহকে কোনও চিঠিও দিইনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি নিজের জন্য নিরাপত্তা চেয়েছি বা আমার জন্যও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে — এই জল্পনা ছড়িয়ে দেওয়ার পিছনে কারও কোনও অভিসন্ধি থাকতে পারে।’’ শোভন নিজে অবশ্য বৈশাখীর জন্যও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার পক্ষপাতী বলেই তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর। লোকসভা নির্বাচনের আগে রায়চকে যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল, সে কথা মাথায় রাখলে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়েরও নিরাপত্তা নেওয়া উচিত বলে শোভন মনে করেন। তবে ওই কলেজ শিক্ষিকা আপাতত নিজের জন্য নিরাপত্তা চাইতে নারাজ। শোভন চট্টোপাধ্যায়কে তিনিই নিরস্ত করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
রবিবার রাতে দিল্লি থেকে বিমানে কলকাতা ফেরেন শোভন চট্টোপাধ্য়ায়। এ দিন তাঁকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে ভিড় করেন বিজেপি কর্মী ও সমর্থকরা। সদ্য তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা শোভনকে নিয়ে তাঁদের উৎসাহ ছিল তুঙ্গে। তাঁকে ফুল ও মালায় অভিনন্দন জানান বিজেপি কর্মী ও সমর্থকরা।
শোভন চট্টোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানাতে বিজেপি কর্মীদের ভিড়। নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: বার বার সিগন্যাল ভেঙেই ছুটছিল জাগুয়ার, ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে আরসালান
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy