সুর-ছন্দের যুগল বাঁধনের একটি মুর্হূত। নিজস্ব চিত্র।
সেতারের সুরে ফুটল কবিতা
ও যার মন ভালো নয়, দিল ভালো নয়, সে পিরিতের মর্ম কি জানে।’’
তিনি কেবল রাঙামাটির বাউল শিল্পী নন। অজস্র লোক গানের পদকর্তা, নৃত্যশিল্পী এবং সাধক! তিনি সনাতন দাস বাউল। সম্প্রতি ৯২ বছর বয়সে চলে গেলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লালন পুরস্কার প্রাপ্ত এই সাধক শিল্পী। গত শুক্রবার এই আপনভোলা বাউল শিল্পীকেই স্মরণ করল গোবরডাঙা লোক উৎসব কমিটি। প্রতি বছরের গোড়াতেই লোক সংস্কৃতি উৎসবের আয়োজন করে এই সংস্থা। এ বারেও জানুয়ারি মাসে স্থানীয় মিলন সঙ্ঘ মাঠে সেই উৎসব হয়। তখন সেখানে অস্থায়ী বাউল আখড়া তৈরি করা হয়েছিল। সেখানেই গান, আলোচনায় স্মরণ করা হয় সনাতন দাস বাউলকে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে তরুণ ক্ষ্যাপা, আনন্দ দাস বাউল, বিমল বিশ্বাস বাউল-সহ প্রায় ১৫-১৬ জন বাউল এসেছিলেন। উপরিউক্ত গানটি ছাড়াও সনাতন দাস বাউলের লেখা অজস্র পদ গেয়ে শোনান তাঁরা। সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারলেও ফোনের ওপারে থেকে গুরুকে স্মরণ করেন পার্বতী বাউল। বাংলার ১৩৩০ সালে ১২ মাঘ অধুনা বাংলাদেশের খুলনা জেলার লকপুর গ্রামে এই শিল্পীর জন্ম। সোনামুখীর ধুলাই অঞ্চলের খয়েরবুনি গ্রামে তাঁর আখড়া ছিল। অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা রাজীব রায় বলেন, ‘‘সনাতন দাস প্রচার বিমুখ বাউল ছিলেন। তাঁর মৃত্যু বাউল সমাজের কাছে একটা বড় ক্ষতি। লোক উৎসবের মাধ্যমে আমরা বাউল শিল্পীদের পাশে থাকি। ওই ভাবনা থেকেই স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন।’’
ফুয়েন্তেসের স্বর
সময়টা ১৯৬০-৭০। স্প্যানিশ সাহিত্যে একঝাঁক নতুন লেখক তৈরি করতে চাইলেন একটা নতুন পৃথিবী। যা ‘বুম’ ঘরানার সাহিত্য নামে পরিচিতি পায়। গার্সিয়া মার্কেজ, বার্গাস ইয়োসাদের পাশাপাশি এলেন আরও একজন কার্লোস ফুয়েন্তেস। বাংলায় তাঁকে নিয়ে চর্চা কম। সেই আক্ষেপ পুষিয়ে দিল মেদিনীপুর থেকে প্রকাশিত পত্রিকা ‘স্বরান্তর’-এর সাম্প্রতিক সংখ্যাটি। মেক্সিকান সাহিত্যিক ফুয়েন্তেসের লেখা ‘হোয়্যার দ্য এয়ার ইস ক্লিয়ার, ‘দ্য ডেথ অফ আর্টেমিয় ক্রুজ’-সহ ৭টি উপন্যাসের মনোজ্ঞ আলোচনা রয়েছে পত্রিকায়। রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব সামলানো ফুয়েন্তেসের সাক্ষাৎকার, ছোটগল্প, মিলান কুন্দেরার লেখা চিঠি— সংযোজন করেছেন পত্রিকা সম্পাদক শৈবালকুমার নন্দ। লেখাগুলি মূল স্প্যানিশ থেকে বাংলায় অনুবাদ বলে পাঠকের ভাল লাগে। বাংলায় লাতিন আমেরিকার সাহিত্য চর্চায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন এই সংখ্যাটি।
‘জ্বলদর্চি’-র কথা
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা ও যাপন, দুই নিয়েই বাংলায় বড় কম আলোচনা হয়নি। মানুষ শক্তি কেমন ছিলেন, এ বার সেটাই যেন ফিরে দেখলেন সমীর রক্ষিত। পাঠকমহলে একদা সাড়া জাগানো আব্দুল জব্বারের ‘বাংলার চালচিত্র’-র ভাষা ও বিষয়ের অভিমুখটি কোন দিকে, তা ধরতে চাইলেন রাহুল পণ্ডা। এ সব নিয়েই দুই মেদিনীপুর থেকে একযোগে প্রকাশিত ‘জ্বলদর্চি’ পত্রিকার বইমেলা সংখ্যা। এ ছাড়া বর্তমান কবিতা ও পাঠকের আন্তঃসম্পর্কটি বুঝতে চেয়ছেন লেখক তথা পত্রিকা সম্পাদক ঋত্বিক ত্রিপাঠী। সংযোজিত হয়েছে বেশ কয়েকটি অনুগল্প ও কবিতাও। সব মিলিয়ে প্রায় তেইশ বছর ধরে নাগাড়ে প্রকাশিত হওয়া পত্রিকার এই সংখ্যাটি এক নিঃশ্বাসে শেষ করার মতো।
আমতায় সাহিত্যপাঠ
সম্প্রতি সাহিত্য সম্মেলন করল আন্দুল থেকে প্রকাশিত দৃপ্ত সৃজন পত্রিকা এবং নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের আন্দুল-মৌড়ি শাখা। অনুষ্ঠানটি হয় আমতায়। সাহিত্য পাঠ ছাড়াও ছিল গান।, আলোচনার বিষয় ছিল, ‘‘বর্তমান সমাজে আধ্যাত্মিকতার ভূমিকা।’’
লোকসংস্কৃতির সিধুজ্যাঠা
ঘনিষ্ঠজনেরা বলেন, গবেষকের পায়ের তলায় সর্ষে রয়েছে। তিষ্ঠোতে পারেন না। লোকসংস্কৃতি সম্পর্কিত সামান্যতম আভাস টুকু পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়েন ক্ষেত্র সমীক্ষার কাজে। তিনি ৬৮ বছরের সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দা এই প্রবীণ গবেষকের সঙ্গে জঙ্গলমহলের লোক সংস্কৃতির নাড়ির যোগ। লোধা উপজাতির লুপ্তপ্রায় লোকশিল্প ‘চাঙ’ নাচের পুনরুজ্জীবন ঘটেছে তাঁর হাত ধরেই। এক সময় সুবর্ণরৈখিক এলাকায় ঘুরে ঘুরে লুপ্তপ্রায় প্রাচীন লোধা লোক যাত্রাপালার পান্ডুলিপিও উদ্ধার করেছেন তিনিই। শুভানুধ্যায়ীরা বলেন, তিনি লোকসংস্কৃতির সিধুজ্যাঠা। আদিম জনগোষ্ঠী সম্পর্কে বাংলা ও ইংরেজিতে লিখেছেন সাতটি গ্রন্থ। নয়ের দশকে অখ্যাত শীতলামঙ্গল-সহ লোকশিল্প ও লোকসংস্কৃতির উপর গবেষণা করে পিএইচডি করেছিলেন। বেতার ও দূরদর্শনের মাধ্যমে তাঁর সুরলিত কণ্ঠের শীতলা গান জঙ্গলমহল ছাড়িয়ে দেশে-বিদেশে সমাদৃত হয়েছে। গুপ্তমণি থেকে গোপনন্দিনী, কালুয়াষাঁড় থেকে কনকদুর্গা— লোক সংস্কৃতির বিভিন্ন পরম্পরার পাশাপাশি, জঙ্গলমহলের লোকায়ত ও শাস্ত্রীয় ধর্মাচরণের ইতিহাসের প্রামাণ্য কথকও সেই তিনিই। জঙ্গলমহলের লোকায়ত দেবদেবীর স্বরূপ সন্ধানের পাশাপাশি, জঙ্গলমহলের হারিয়ে যাওয়া লোকায়ত বিনোদন নিয়েও সুব্রতবাবুর গবেষণা আজও অব্যাহত। সম্প্রতি হুগলির শেওড়াফুলি প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়েছে সুব্রতবাবুর নতুন গবেষণা গ্রন্থ ‘জঙ্গলমহলের কুঠার মানুষ’। বইটিতে আদিম অরণ্যচারী লোধা-শবর জনজাতি সম্পর্কে সরল ভাষায় আলোচনা রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy