রেড রোডের মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (বাঁ দিকে) পাশে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (ডান দিকে)।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবারই বলেছেন, ‘‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’’ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতির জন্য ইউনেসকোকে ধন্যবাদ জানিয়ে মিছিলে মমতা ‘দলমতনির্বিশেষে’ সকলকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এসেওছিলেন বহু মানুষ। খ্যাতনামীরাও। তবে দিদির পাশে মঞ্চে হাজির থেকে পুজোর উৎসবে বাড়তি রঙের পোঁচ লাগিয়ে দিলেন ‘দাদা’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। দিদির পাশে দাঁড়িয়েই তিনি ইউনেসকোর প্রতিনিধি দলের সদস্যদের শহরে স্বাগত জানালেন। বললেন এই শহরের আতিথেয়তা উপভোগ করার কথা।
মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বানে বৃহস্পতিবারের মিছিলে নেতা-মন্ত্রী, টেলিতারকারা যে যোগ দেবেন, তা এক প্রকার প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু সৌরভের উপস্থিতি অবশ্যই চমক। বাঙালির কাছে বড় প্রাপ্তিও। বিসিসিআই-এর সভাপতি সৌরভ রাজনীতি থেকে এখনও পর্যন্ত দূরত্ব রেখে চলেছেন। গত বিধানসভা ভোটের আগে সৌরভ বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে পারেন বলে গভীর জল্পনা তৈরি হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তবে সৌরভের সঙ্গে মমতার সম্পর্ক বরাবরই উষ্ণ থেকেছে। আবার কলকাতা সফরের ফাঁকে সৌরভের বেহালার বাড়িতে সদলে নৈশভোজে যোগ দিতে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই প্রেক্ষিতে সৌরভকে পুজো উৎসবের মঞ্চে আহ্বান করে আনাটা অবশ্যই মমতার তরফে দেওয়া ‘চমক’। বাংলা, বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের সঙ্গে বাঙালির অন্যতম ‘বিগ্রহ’ সৌরভকে জড়িয়ে নেওয়া।
বিরোধী সিপিএম অবশ্য ওই শোভাযাত্রা তথা ধন্যবাদ মিছিল নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছে শাসকদল, সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীর। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রতর মণ্ডলের গ্রেফতারি, টাকার পাহাড় উদ্ধার, দিকে দিকে দুর্নীতি থেকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্যই মুখ্যমন্ত্রী পুজোর এক মাস আগে থেকে পুজো শুরু করে দিলেন! এর আগে কি বাংলায় দুর্গাপুজো হত না? সপ্তাহের কাজের দিনে তিনি মিছিল করবেন বলে অন্য কোনও মিছিলের অনুমতি দিল না পুলিশ!’’
শাসকপক্ষ অবশ্য এ সবের তোয়াক্কা করেনি। জোড়াসাঁকো থেকে রেড রোড পর্যন্ত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার শেষে মঞ্চে তখন বাজছে, ‘এসো, এসো আমার ঘরে এসো’। ইউনেসকোর প্রতিনিধি দলের সদস্য টিমোথি কার্টিস, এরিক ফল্টকে গলায় উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেন মুখ্যমন্ত্রী। হাতে তুলে দেন ডোকরার দুর্গামূর্তি আর অ্যালবাম। পাশে দাঁড়িয়ে সৌরভ। মঞ্চে ছিলেন তাঁর দাদা তথা সিএবির সচিব স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ও। এর পর সৌজন্যবশত মুখ্যমন্ত্রীর গলাতেও উত্তরীয় পরিয়ে দেন সৌরভ। সৌজন্যে খামতি রাখেননি মমতাও। সৌরভের গলায় জড়িয়ে দেন শাল। পরে বক্তৃতা করতে গিয়ে বলেন, ‘‘সৌরভ আমার ছোট ভাইয়ের মতো। ওকে আমি অত্যন্ত স্নেহ করি। ও যে এত ব্যস্ততার মধ্যেও সময় করে এখানে আসতে পেরেছে, তার জন্য ওকে ধন্যবাদ।’’
মমতা মঞ্চে একে একে ডেকে নেন মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এবং মহামেডান ক্লাবের কর্তাদেরও। তাঁদের গলায় উত্তরীয় পরিয়ে হাতে ফাইবারের দুর্গামূর্তি তুলে দেন দিদি এবং দাদা। প্রসঙ্গত, জোড়াসাঁকো থেকে শুরু হয়ে রেড রোডে যে শোভাযাত্রা পৌঁছয়, সেখানে দেখা গিয়েছে লাল-হলুদ আর সবুজ-মেরুন পতাকাও। বৃহস্পতিবার ইউনেসকো প্রতিনিধি দলের সদস্যদের পাশাপাশি মমতা উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেন তপতী গুহঠাকুরতাকে। ইউনেসকোর স্বীকৃতি পাওয়ার নেপথ্যে বড় অবদান রয়েছে এই শিক্ষিকার। ২০১৮ সাল থেকে এই নিয়ে লড়াই করেছেন তিনি।
সৌরভ বক্তৃতা করতে উঠে শুরুটা বাংলাতেই করেন। জানিয়ে দেন, বিদেশি অতিথিদের কথা ভেবে বাকিটা ইংরেজিতে বলবেন। তাঁর কথায় ‘‘সম্ভাষণটা বাংলায় করলাম। বাকিটা ইংরেজিতে বলছি। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। বিধায়ক, মেয়রকে ধন্যবাদ জানাব। আমাদের জন্য দুর্গাপুজো কী, তা কল্পনার অতীত। সে আপনি বড়লোক হন বা গরিব, ক্ষমতাবান হন বা ক্ষমতাহীন— দুর্গাপুজো সকলের মুখে হাসি আনে। ৭ থেকে ৭০— সকলের মুখে।’’
এর পর সৌরভ আনেন ফুটবলের প্রসঙ্গ। বলেন, ‘‘ফ্রান্স থেকে এসেছেন এরিক এবং টিমোথি। ফ্রান্স ফুটবলের দেশ। এই শহরও ফুটবলের। এখানেও রয়েছে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল। তাই আমন্ত্রণ জানাই, আরও ঘন ঘন আসবেন এই শহরে। আমরা তেমনই আশা রাখি। এই আতিথেয়তা উপভোগ করুন। এই শহর একটা বিশেষ শহর। পুজোর সময় এই শহর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শহর। সেটা বুঝতে গেলে পুজোর সময় এই শহরে থাকতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy