Advertisement
২০ ডিসেম্বর ২০২৪
TMC

অপসারণকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে কনিষ্ঠ অধিকারী

জল্পনা যে, শুক্রবার বছরের প্রথমদিনে সৌম্যেন্দু বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন। তবে এই খবরের কোনও আনুষ্ঠানিক সত্যতা মেলেনি।

কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করলেন সৌম্যেন্দু অধিকারী।

কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করলেন সৌম্যেন্দু অধিকারী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ ১৫:২১
Share: Save:

কাঁথি পুরসভার প্রশাসক পদ থেকে তাঁর অপসারণের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করলেন সৌম্যেন্দু অধিকারী। আগামী ৪ জানুয়ারি ওই মামলার শুনানি হতে পারে। বুধবারেই ওই মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে খবর। মূলত সিদ্ধান্ত প্রয়োগের পদ্ধতিগত বিষয়টি নিয়েই মামলাটি করা হয়েছে। তবে এই মামলার অন্য ‘তাৎপর্য’ও রয়েছে। অধিকারী পরিবারের চার ভাইয়ের মধ্যে বড় কৃষ্ণেন্দু ব্যবসায়ী। বাকি তিন জন রাজনীতিতে আছেন। তাঁদের মধ্যে শুভেন্দু অধিকারী ইতিমধ্যেই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। তাঁর পরের ভাই দিব্যেন্দু তমলুকের তৃণমূল সাংসদ। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েও তিনি প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, তাঁর ভাই সৌম্যেন্দুকে পুর প্রশাসকের পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত ‘দুর্ভাগ্যজনক’। অর্থাৎ, পুরো ঘটনাপ্রবাহে অধিকারী পরিবারের থেকে তৃণমূলের দূরত্ব ক্রমশই বাড়ছে। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলা ঠোকায় তা এক অনতিক্রম্যতায় পৌঁছে গেল বলেই মনে করা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতেই জল্পনা দেখা দিয়েছে যে, শুক্রবার বছরের প্রথমদিনে সৌম্যেন্দু বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন। তবে এই খবরের কোনও আনুষ্ঠানিক সত্যতা মেলেনি। পুরো বিষয়টিই এখনও জল্পনার স্তরেই রয়েছে।

প্রসঙ্গত, কাঁথি পুরসভার প্রশাসক পদ থেকে সৌম্যেন্দুর অপসারণের পর তাঁর ‘অপরাধ’ জানতে চেয়ে এবং ‘ন্যায়বিচার’ প্রার্থনা করে ইতিমধ্যেই মমতাকে চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দিব্যেন্দু। যা থেকে স্পষ্ট যে, রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের সাক্ষরিত ওই নির্দেশ অধিকারী পরিবার মানছে না। সৌম্যেন্দুর মামলা করার সিদ্ধান্ত সেই অনড় মনোভাবকেই আরও একধাপ এগিয়ে দিল। মামলা যে হয়েছে, তা অধিকারী পরিবার সূত্রেই বৃহস্পতিবার জানা গিয়েছিল। সেই খবর পাকা বলে জানিয়েছেন আইনজীবী তথা সিপিএমের রাজ্যসভা সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য। আনন্দবাজার ডিজিটালকে তিনি বলেন, ‘‘মামলা একটা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। কোনও পুর প্রশাসককে তাঁর পদ থেকে সরকারি নির্দেশে সরানো হতেই পারে। কিন্তু তার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। বিশেষত, যদি সেই সিদ্ধান্তের মধ্যে অন্য কোনও কারণ স্পষ্ট পরিলক্ষিত হয়।’’ বিকাশ জানান, ৪ জানুয়ারি ওই মামলার শুনানি হতে পারে।

আরও পড়ুন: পাণ্ডবেশ্বরে সভা তৃণমূলের, ডাক নেই বিধায়ক জিতেন্দ্রকে, আবার ছড়াচ্ছে জল্পনা

বিকাশকে এই মামলায় যুক্ত করার বা বিকাশের মুখে ওই মামলা সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ারও ‘রাজনৈতিক তাৎপর্য’ রয়েছে। কারণ, বিকাশ হলেন সেই আইনজীবী, যিনি সরাসরি সিপিএমের সঙ্গে যুক্ত এবং যিনি সারদা মামলায় সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। তাঁর সঙ্গে ওই প্রক্রিয়ায় যুক্ত আছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। বিকাশ এবং মান্নান— দু’জনেই ‘ঘোষিত মমতা-বিরোধী’। ফলে অধিকারী পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যের মামলা করার খবর বিকাশের গোচরে থাকলে তার নিহিতার্থ ‘অন্যরকম’। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সৌম্যেন্দুকে কাঁথির পুর প্রশাসকের পদ থেকে সরিয়ে সিদ্ধার্থ মাইতিকে সেই পদে নিয়োগ করা হয়। বুধবারেই দিব্যেন্দু বলেছিলেন, ‘‘যাঁকে প্রশাসকের পদে নিয়োগ করা হয়েছে, তিনি কাঁথি পুর এলাকার ভোটারই নন!’’

অধিকারী পরিবার সূত্রে বৃহস্পতিবার জানা গিয়েছে, সিদ্ধার্থ পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসারকে ইমেল পাঠিয়ে জানিয়েছেন, তিনি কাঁথির বাইরে রয়েছেন। ফলে ৫ জানুয়ারির আগে তাঁর নতুন দায়িত্বে যোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে ৪ জানুয়ারি হাইকোর্টে ওই মামলা উঠলে তার শুনানিতে কী হয়, তা নিয়েও কৌতূহল তৈরি হয়েছে। আদালত নতুন নিয়োগে স্থগিতাদেশ জারি করলে নতুন প্রশাসক দায়িত্ব নিতে পারবেন না। আবার আদালত সৌম্যেন্দুর অভিযোগ সংবলিত মামলাটি খারিজ করে দিলে সিদ্ধার্থর যেমন দায়িত্ব নিতে কোনও অসুবিধা থাকবে না, তেমনই সৌম্যেন্দু-সহ অধিকারী পরিবারও বিড়ম্বনায় পড়বে। সে ক্ষেত্রে তারা কী পদক্ষেপ করে, সেটাও দেখার।

আরও পড়ুন: অমর্ত্য সেনকে ‘জমিচোর’ বলে এ বার অধীরের তোপের মুখে দিলীপ

তবে এর মধ্যে সৌম্যেন্দু বিজেপি-তে যোগ দিয়ে দিলে আর কোনও জল্পনারই অবকাশ থাকবে না। উল্টে তখন দেখতে হবে দিব্যেন্দু কী করেন। অথবা কী করেন অধিকারী পরিবারের কর্তা, কাঁথির তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারী। জেলা তৃণমূল সূত্রের অবশ্য খবর, শিশির-দিব্যেন্দু কেউই এখন দল ছাড়বেন না। তাঁরা তৃণমূলেই থাকবেন এবং প্রকাশ্যে তৃণমূল এবং দলনেত্রী মমতার প্রতি ‘আনুগত্য’ দেখিয়ে যাবেন। অধিকারী পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, ‘‘দলবদল তো হয় ভোটের আগে। কলকাতা-সহ রাজ্যের অন্যান্য পুরসভায় ভোটের সময় হয়ে গিয়েছে। ফলে সৌম্যেন্দু দলবদল করলেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হবে না। কিন্তু শিশিরবাবু এবং দিব্যেন্দুর সাংসদপদের মেয়াদ তো ২০২৪ সাল পর্যন্ত রয়েছে। তাঁরা কেন দল ছাড়তে যাবেন! তৃণমূল চাইলে তাঁদের সাসপেন্ড বা বহিষ্কার করতে পারে। কিন্তু তাতে তো তাঁদের সাংসদপদ খারিজ হবে না!’’

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Contai Municipality Soumyendu Adhikari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy