এক ঢিলে দুই পাখি। শুভেন্দু অধিকারীর জয় ও বাড়তি গুরুত্বের পথ নিষ্কণ্টক করতে এই পথই নিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা রাজনীতিতে যে দু’জনের সঙ্গে শুভেন্দুর বিরোধ সর্বজনবিদিত, সেই শিউলি সাহা এবং সৌমেন মহাপাত্রকে একেবারে জেলা থেকে ছেঁটে ফেললেন মমতা। দু’জনকেই টিকিট দেওয়া হয়েছে পাশের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে। মন্ত্রী সৌমেনবাবু প্রার্থী হচ্ছেন পিংলায় আর শিউলি দাঁড়াচ্ছেন কেশপুর থেকে।
গত বার তমলুক বিধানসভা থেকে জিতেছিলেন জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেনবাবু। আর শিউলি বিধায়ক হয়েছিলেন হলদিয়া থেকে জিতে। এই দু’জনকেই এ বার যে দু’টি আসনে প্রার্থী করা হয়েছে, সেখানে কিন্তু ২০১১ সালের পরিবর্তনের ঝড়েও হার মানতে হয়েছিল তৃণমূল-কংগ্রেস জোটকে। পিংলায় বাম প্রার্থী প্রবোধ সিংহের কাছে হেরে গিয়েছিলেন তৃণমূলের অজিত মাইতি। আর কেশপুরে সিপিএম প্রার্থী রামেশ্বর দলুই হারিয়েছিলেন কংগ্রেসের রজনীকান্ত দলুইকে।
তবে এ বার এই দুই আসনে লড়াই কঠিন মনে করছেন না সৌমেনবাবু ও শিউলি। সৌমেনবাবুর বক্তব্য, ‘‘পিংলা আমার জন্মভূমি। তাই ওখানে লড়তে কোনও অসুবিধা হবে না।’’ আর শিউলি বলেন, ‘‘২০১১-তে সিপিএম ওখানে জিতেছিল ঠিকই, কিন্তু তারপর থেকে সবক’টা ভোটে তৃণমূল প্রচুর ভোটে জিতেছে। আমিও বিশাল ব্যবধানেই জিতব।’’ পূর্ব থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরে আসন বদলের বিষয়টিকেও অন্তত প্রকাশ্যে তেমন আমল দিচ্ছেন না শিউলি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এক সময় তো গোটা মেদিনীপুর একসঙ্গেই ছিল। দিদি বদল করার প্রয়োজন মনে করেছেন। এখানে কোনও বিতর্ক নেই।’’
বিরোধের কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন শুভেন্দুও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের দলের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই বলে কিছু নেই। আমরা সবাই তৃণমূল। দলনেত্রী সব দিক বিবেচনা করেই প্রার্থী করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তমলুক, হলদিয়া, পিংলা, কেশপুরে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন তাঁরা সবাই জিতবেন। দুই মেদিনীপুর প্রশাসনিকভাবে আলাদা হলেও আমরা সবাই একসঙ্গে লড়াই করব।’’
সৌমেনবাবু এবং শিউলি বরাবর শুভেন্দু-বিরোধী বলেই জেলা রাজনীতিতে পরিচিত। তৃণমূলের একাংশ জানাচ্ছেন, সেই সূত্রে এই দু’জনের বিধানসভা আসন তথা জেলা বদলের কারিগর আদতে শুভেন্দু। তাঁর ইচ্ছেতেই দু’কূল রক্ষার নীতি নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শিউলি দল থেকে ‘সাসপেন্ড’ হয়েছিলেন। পরে অবশ্য তৃণমূল নেত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে ফের দলে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। কিন্তু শিউলিকে দলে পুরনো জায়গা ফিরিয়ে দেওয়া মানে যে কোনওমতেই বিদায়ী সাংসদ তথা হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শুভেন্দুর পথে কাঁটা তৈরি করা নয়, শিউলিকে হলদিয়া থেকে সরিয়ে সেই বার্তাই স্পষ্ট করেছেন মমতা। অন্য দিকে, সৌমেন-গোষ্ঠীর তরফেও যাতে শুভেন্দুকে বিরোধের মধ্যে পড়তে না হয়, তা নিশ্চিত করতে মন্ত্রীকেও সরানো হয়েছে।
একটা সময় অবশ্য এই শুভেন্দুর সঙ্গেই দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তৃণমূলের। ক্রমে পট পরিবর্তন হয়। বরফ গলাতে উদ্যোগী হন মমতা নিজে। দলে গুরুত্ব বাড়ে তমলুকের সাংসদের। মালদহ ও মুর্শিদাবাদ, কংগ্রেসের দুই গড়ে ঘাসফুল ফোটানোর দায়িত্ব মমতা দেন শুভেন্দুকে।
এ বারের বিধানসভা নির্বাচনেও যে শুভেন্দুর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে, তার আভাস মিলেছিল আগেই। কয়েক মাস আগে নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে মমতা ঘোষণা করেছিলেন, শুভেন্দুকে নন্দীগ্রাম বিধানসভা থেকে জিতিয়ে মন্ত্রিসভায় আনতে চলেছেন তিনি। সেই মতো নন্দীগ্রামের বিদায়ী বিধায়ক ফিরোজা বিবিকে পাঁশকুড়া পশ্চিম কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে। সৌমেনবাবুর কেন্দ্র তমলুকে টিকিট পেয়েছেন এই কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক নির্বেদ রায়। ২০০১ সালে তৃণমূলের টিকিয়ে জয়ী নির্বেদবাবু আত্মীয়তা সূত্রে তমলুকের জামাই। আর হলদিয়ায় প্রার্থী করা হয়েছে অধিকারীদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডলকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy