চুরির ঘটনার পুনর্নির্মাণে সৌমাল্য চৌধুরীকে নিয়ে ঘাটালের আবাসনে পুলিশ। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
স্কুলজীবনে বন্ধুদের বই, কলম বা আত্মীয়দের বাড়ি থেকে পছন্দের কোনও জিনিস চুরি দিয়েই শুরুটা হয়েছিল। ক্রমে চুরির নেশা চেপে বসে আসানসোলের এমএ পাশ যুবক সৌমাল্য চৌধুরীকে। ঘাটালের আবাসনে চুরির ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে আপাতত সে পুলিশের জিম্মায়। পুলিশের কাছে সৌমাল্যর দাবি, ক্লেপটোম্যানিয়া অর্থাৎ চুরি করার মানসিক অসুখ রয়েছে তার।
উল্লেখ্য, গত বার হওড়ার চুরির ঘটনায় গ্রেফতারের পরেও পুলিশকে এই একই কথা বলেছিল সৌমাল্য। সত্যি তার কোনও অসুখ রয়েছে, না শাস্তি কমানোর উদ্দেশে ক্লেপটোম্যানিয়ার কথা বলছে এই যুবক তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। মঙ্গলবার সৌমাল্যকে ঘাটালের কোন্নগরের আবাসনে নিয়ে গিয়ে পুলিশ চুরির ঘটনার পুনর্নির্মাণও করেছে। আর সোমবার রাতেই হুগলির একটি দোকান থেকে ঘাটালের ওই আবাসনের চুরি যাওয়া যাবতীয় গয়না উদ্ধার হয়েছে।
সৌমাল্যর বিরুদ্ধে রাজ্যের নানা থানায় অন্তত ২০টি চুরির মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। সৌমাল্যর বাবা সলিলকুমার চৌধুরী রাজ্য সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। আসানসোলের কোর্ট মোড়ের একটি আবাসনে এখন একাই থাকেন। ২০২০-তে সৌমাল্য প্রথম গ্রেফতার হয়। তার কিছু দিন পরেই আত্মঘাতী হন সৌমাল্যর মা, পেশায় শিক্ষিকা মধুছন্দা। মঙ্গলবার কোর্ট মোড়ের ওই আবাসনে গিয়ে দেখা যায়, সলিলবাবুর ফ্ল্যাটটি তালা বন্ধ। মুখ খুলতে চাননি পড়শিরা।
তবে তদন্তে পুলিশ জেনেছে, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করেছিল সৌমাল্য। তারপর আসানসোলের চিত্তরঞ্জন কলেজ থেকে ইংরেজিতে এমএ পাশ করে সে। তবে মায়ের গয়না চুরি ও মায়ের মৃত্যুর পর সে আর বাড়িমুখো হয়নি। বাবা-সহ পরিজনদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখেনি। পুলিশ সূত্রে খবর, ২০১৬ সাল থেকে পাঁশকুড়ার বাসিন্দা এক বন্ধুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাকাপাকি ভাবে বড়সড় চুরি শুরু করে সৌমাল্য। ওই বছরই রেলে একটা চাকরি পেয়েছিল সে। কিন্তু চুরির অভিযোগে ২০১৯ সালে সাসপেন্ড হয়ে যায়। ইতিমধ্যে ছোট দল গড়ে চুরির কারবার ফেঁদে বসে সৌমাল্য।
পুলিশ জানতে পেরেছে, সৌমাল্য ছাড়াও তার দলে রয়েছে আরও দু’জন। তার মধ্যে একজন সৌমাল্যর সেই পাঁশকুড়ার বন্ধু। অন্যজনের বাড়ি দাসপুরে। এই দু’জনই সাধারণ বাড়ির ছেলে। তবে হাওড়ার চুরি কাণ্ডে ধরা পড়ার পর দাসপুরের ছেলেটির সঙ্গে সৌমাল্যর আর কোনও যোগাযোগ ছিল না। ইতিমধ্যে নতুন কেউ দলে যুক্ত হয়েছিল কিনা, জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। ঘাটালের মহকুমা পুলিশ অফিসার অগ্নিশ্বর চৌধুরী বলেন, “ধৃতকে জেরা করে সঙ্গীদের নাম পাওয়া গিয়েছে। বাকিদের ধরতে তল্লাশি চলছে।”
তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, চুরির কাজটা মূলত করত সৌমাল্যই। তার কাছে থাকত তালা কাটার রকমারি যন্ত্র। সৌমাল্যের বন্ধু গোটা এলাকা ‘রেকি’ করত। আর তৃতীয় জন চুরি করা সোনার গয়না বিক্রির দায়িত্বে ছিল। মূলত বড় বড় আবাসনগুলিই ছিল তাদের ‘টার্গেট’। বাইকে চেপে তারা চুরি করতে যেত। তবে সৌমাল্য চুরির জিনিস বন্ধুর কাছে জমা রাখত বলে জানা গিয়েছে। টাকা-পয়সার হিসেবও রাখত পাঁশকুড়ার ওই যুবক।
সৌমাল্যর বর্তমান আস্তানাও পাঁশকুড়ার আবাসনে। পুলিশ জানায়, ভাল খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি দামি প্রসাধনী ব্যবহার করে সে। বাড়িতে ম্যানেজমেন্টের বই মিলেছে। সে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিত বলেও জেনেছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy