Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Srikanth Movie

দৃষ্টির আঁধার পার করে অন্তর্দৃষ্টি, দেবকুমারদের সিনে-উপভোগ

দৃষ্টিহীন হয়েও সম্ভব-অসম্ভব বা স্বাভাবিক-অস্বাভাবিকের কাচের দেওয়ালগুলি নিজের জীবনে বার বার ভেঙে চলেছেন শ্রীকান্ত। অজ গাঁয়ে কৃষক পরিবারের ছেলের বাবা মারকাটারি ব্যাটার কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তের নামে ছেলের নাম রাখেন।

শুক্রবার দক্ষিণ কলকাতার একটি মাল্টিপ্লেক্সে জীবনে প্রথমবারের মতন সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে হল থেকে বেরিয়ে আসছেন কিছু দৃষ্টিহীন মানুষ।

শুক্রবার দক্ষিণ কলকাতার একটি মাল্টিপ্লেক্সে জীবনে প্রথমবারের মতন সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে হল থেকে বেরিয়ে আসছেন কিছু দৃষ্টিহীন মানুষ। ছবিঃ দেশকল্যাণ চৌধুরি।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৪ ০৮:০৪
Share: Save:

সিনেমা হলে এমন দৃশ্য সাধারণত দেখাই যায় না। কলকাতায় আগে কখনও এমনটা ঘটেছে কি? অভিজ্ঞ মহলের মনে পড়ছে না। প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের মাল্টিপ্লেক্সে দর্শকদের বিচিত্র ঝাঁক তবু দেখা, অদেখার সীমারেখাই মুছে দিয়ে গেল। সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘শ্রীকান্ত’ ছবিটি দেখতে দেখতে দেবকুমার দণ্ডপাট বলছিলেন, ‘‘আমাদের মতো দৃষ্টিহীনেরাও সংলাপ, শব্দে দিব্যি সিনেমা দেখি! এক ধরনের মিডিয়েটেড প্লেজার বা অপ্রত্যক্ষ আস্বাদ বলা যায়। তবে সবটাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো নয়। অনেক চক্ষুষ্মান লোকের থেকেও আমরা অনেক সময়ে অনেক গভীর ডুবেই সিনেমা, নাটক বা খেলা দেখি!’’

পরের দু’ঘণ্টায় ছবির নানা মুহূর্তে দেবকুমার বা অন্য দৃষ্টিহীন দর্শকদের মগ্ন অনুভব সেটাই বলে গেল। শাণিত সংলাপ বা সরস মুহূর্তের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়ায় সোল্লাসে হাততালি দেখলে, কে বুঝবেন পর্দার দৃশ্য কিছুই দেখছেন না ওঁরা। ‘শ্রীকান্ত’-এর কাহিনি সারা দুনিয়ায় সাড়া ফেলা হায়দরাবাদের তরুণ শিল্পপতি শ্রীকান্ত বোল্লাকে নিয়ে। দৃষ্টিহীনদের ক্রিকেট আয়োজক একটি সংস্থার হয়ে দেবকুমার এবং আর এক দৃষ্টিহীন বন্ধু চন্দন মাইতির (স্কুল শিক্ষক) উৎসাহে শ’খানেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নরনারী ছবিটা দেখেন। ছবিতে নামভূমিকায় রাজকুমার রাওয়ের সংলাপ, ‘চোখে দেখি না, তাই পালাতে পারি না! অত এব লড়াই ছাড়া আমার গতি নেই!’, তাঁদের মনের কথাই বলে গেল।

দৃষ্টিহীন হয়েও সম্ভব-অসম্ভব বা স্বাভাবিক-অস্বাভাবিকের কাচের দেওয়ালগুলি নিজের জীবনে বার বার ভেঙে চলেছেন শ্রীকান্ত। অজ গাঁয়ে কৃষক পরিবারের ছেলের বাবা মারকাটারি ব্যাটার কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তের নামে ছেলের নাম রাখেন। কিন্তু ছেলে জন্মান্ধ জানার পরে জ্যান্ত কবর দিয়ে তাঁকে মেরে ফেলতেও চেয়েছেন। সেই ছেলেই সারা দুনিয়াকে চমকে দিয়েছেন। প্রথা ভেঙে মামলা লড়ে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়েন শ্রীকান্ত। এমআইটিতে নিখরচায় পড়ার সুযোগ পান। এর পরে প্রতিকূলতার উজান ঠেলে সফল শিল্পপতি। ফোর্বস তালিকায় ঠাঁই ইত্যাদি! ছোটবেলায় শ্রীকান্তকে অন্য ছোটদের নিষ্ঠুর মারধর দেখে বিজয়গড়ের কলেজে ইংরেজির শিক্ষক দেবকুমার ভুরু কোঁচকালেন। ‘‘এগুলো একটু বাড়াবাড়ি দেখাচ্ছে! আমাদের সঙ্গে নিষ্ঠুর ব্যবহারটা সব সময়ে এত গোদা হয় না। তবে কাউকে হিরো বানাতে বলিউড এ সব করেই!’’ আবার শিক্ষিকা দেবিকাকে চোখে না-দেখেও তাঁর চোখের জল চিনতে পারার দৃশ্যেও দেবকুমারদের মুগ্ধ হতে দেখা গেল।

ছবিতে নায়ক শ্রীকান্ত বোল্লা অবশ্য দেবতুল্য ব্যক্তিত্ব নন। বরং অনেকটাই দোষেগুণে মানুষ। যা দেখেও দেবকুমার বললেন, ‘‘এটাই ঠিক আছে। আমরা দৃষ্টিহীনেরাও আর পাঁচ জনের মতো! ভালমন্দে মেশা!’’ কোলে ন’মাসের শিশুকে নিয়ে দৃষ্টিহীন মা সরকারি কর্মী ডিংকল সিংহ এবং তাঁর স্বামী আংশিক দৃষ্টিহীন, স্কুল শিক্ষক মাধাই কুণ্ডুও এ ছবি দেখেন। দৃষ্টিহীনেরা অনেকে ইদানীং কিছু অ্যাপের মাধ্যমে সিনেমার দৃশ্যগুলির বিবরণও শুনে নেন। তাতে নৈঃশব্দ্যের মুহূর্তগুলিও বোঝা যায়। তবে দেবকুমারের কথায়, ‘‘নতুন প্রযুক্তি সব সময়ে আমাদের কথা মনে রাখে না। বোতাম টেপা ফোন থেকে স্মার্টফোন ব্যবহারের গোড়ায় সমস্যা হতো। এখন অবশ্য সবই জলভাত!’’

নয়নের আঁধার কবেই বা, ধেয়ানের আলোক রেখা ঢেকে দিতে পেরেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Bollywood Specially abled people Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy