যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অনেক দিন পরে দেখা বন্ধুদের সঙ্গে। সেই মুহূর্তকে ফ্রেমবন্দি করার পালা চলছে। মঙ্গলবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
অবিলম্বে পঠনপাঠন শুরু করার দাবিতে পড়ুয়ারা পথে নেমেছিলেন। বছর দেড়েক পরে শ্রেণিকক্ষেই পাঠ শুরুর বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সময়মতো হাজিরও হন বহু পড়ুয়া। কিন্তু এসে জানতে পারেন, কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকা আসবেন না। তাই ক্লাস হবে না! কোনও প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, ঘটনাটি ঘটেছে খাস যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে! সেই যাদবপুর, যার নাম রাজ্য ও দেশের সেরা তালিকায় থাকে। শিক্ষা সূত্রের খবর, মঙ্গলবার ওই বিভাগে ক্লাস যে হবে না, তা জানতেন না বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষও।
যাদবপুরের ইতিহাস বিভাগের পড়ুয়ারা এ দিন উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের কাছে গিয়ে লিখিত অভিযোগ জানান। পরে সুরঞ্জনবাবু বলেন, "আমি কাল (বুধবার) ইতিহাসের বিভাগীয় প্রধান কৌশিক রায়কে ডেকে পাঠিয়েছি। তাঁর কাছে এ বিষয়ে সব কিছু জানতে চাইব।" যাদবপুরে এ দিন দূরত্ব-বিধি পালনেও কড়াকড়ি চোখে পড়েনি। বরং গা ঘেঁষাঘেঁষি করে নিজস্বী তোলা, ক্যান্টিনে ভিড় করার ছবিই দেখা গিয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দূরত্ব-বিধি মেনে তাঁর প্রতিষ্ঠানে এ দিন ভাল ভাবেই ক্লাস হয়েছে।
ইতিহাসের ক্লাস না-হলেও এ দিন যাদবপুরের অন্যান্য বিভাগে এবং রাজ্যের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা হয়েছে। তবে দূরত্ব-বিধি পালনে গা-ছাড়া মনোভাব ছিল। বীরভূমের রামপুরহাট কলেজে টিএমসিপি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদিকা ঋতুপর্ণা সিংহ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আবিরও খেলিয়েছেন পড়ুয়াদের! অনেকেরই বক্তব্য, স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরের পড়ুয়ারা শিশু নন। কোভিড বিধি পালনে কর্তৃপক্ষের নির্দেশের থেকে নিজেদের বোধের পরিচয় দেওয়াই উচিত ছিল তাঁদের।
ফের কলেজ শুরুর দিনে হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বাইরে টিএমসিপি-র হেল্প ডেস্ক থেকে পড়ুয়াদের মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হচ্ছিল। ১২টা নাগাদ এক দল পড়ুয়া তাতে আপত্তি তোলায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সামাল দেয় পুলিশ। প্রতিবাদীদের দাবি, হেল্প ডেস্কে বহিরাগতেরা থাকায় তাঁরা আপত্তি করেছিলেন। অভিযোগ অস্বীকার করে টিএমসিপি-র সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য জানান, পরে তিনি অন্যদের নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে প্রেসিডেন্সিতে টিএমসিপি-র ইউনিট তৈরি করেছেন। যাদবপুর ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও এ দিন টিএমসিপি-র হেল্প ডেস্ক ছিল। সেখানে তারা কোনও বাধা পায়নি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে হেল্প ডেস্ক করেছিল ডিএসও।
এ দিন উত্তর ২৪ পরগনার বেশ কয়েকটি কলেজে কোথাও উপস্থিতির হার ছিল ৮০ শতাংশ, কোথাও ৯৫। কলেজে ঢোকার মুখে থার্মাল গান দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়েছে। যাঁদের মাস্ক ছিল না, কলেজ তাঁদের মাস্ক দেয়। যাঁরা প্রথম কলেজে পা রাখলেন, স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের উৎসাহ ছিল বেশি। হাওড়া গ্রামীণের বিভিন্ন কলেজে পড়ুয়াদের হাজিরা ছিল ভালই। বাঁকুড়ার বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রচুর পড়ুয়া হাজির হন। খন্যানের ইটাচুনা বিজয়নারায়ণ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ গৌতম বিট বলেন, ‘‘অনেক পড়ুয়া নির্ধারিত সময়ের আগেই চলে এসেছিল।’’
আসানসোলের বিধানচন্দ্র কলেজে ঢুকতে লাইন দেন পড়ুয়ারা। দেওয়া হয় হাতশুদ্ধি, থার্মাল গানে মাপা হয় শরীরের তাপমাত্রা। অধ্যক্ষ ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় জানান, হাতশুদ্ধি তৈরি হয়েছে কলেজেই। ভিড় নিয়ন্ত্রণে বাঁকুড়া সারদামণি গার্লস-সহ বেশ কিছু কলেজে বিভিন্ন সিমেস্টারের পড়ুয়াদের আসার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। প্রথম বর্ষের ক্লাস আপাতত বন্ধ রেখেছে ক্যানিংয়ের বঙ্কিম সর্দার কলেজ। দুর্গাপুরে মাইকেল মধুসূদন মেমোরিয়াল কলেজ, দুর্গাপুর মহিলা কলেজ, মেদিনীপুর কলেজ গেটে পড়ুয়াদের মাস্ক, চকলেট ও গোলাপ দিয়ে অভ্যর্থনা জানায় টিএমসিপি।
উচ্ছ্বাসে কোভিড বিধি লঙ্ঘনের ছবি ধরা পড়েছে বীরভূমের বিভিন্ন কলেজে। হেতমপুর কৃষ্ণচন্দ্র কলেজ চত্বরে মোটরবাইক রাখা নিয়ে ছাত্রদের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পুলিশের দ্বারস্থ হন কর্তৃপক্ষ। পুরুলিয়ায় নিস্তারিণী কলেজের বাইরে ভিড় করেন ছাত্রীরা। রঘুনাথপুর কলেজে পড়ুয়ারা আড্ডা জমাতে গেলে কর্মীরা বাধা দেন।
শিলিগুড়ি মহিলা কলেজে পড়ুয়ারা এলেও শিক্ষিকেরা সাড়ে ১১টাতেও পৌঁছননি। ক্লাস শুরু হতে বেলা ১২টা গড়িয়ে যায়। কোভিড বিধি মানতে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু পড়ুয়াকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বেঞ্চে একাধিক পড়ুয়া বসেছিলেন। এ দিনেও অনলাইনে পঠনপাঠন চলে দক্ষিণ দিনাজপুরের বিশ্ববিদ্যালয়ে। অফলাইনের সঙ্গে অনলাইন ক্লাসের সুবিধা রাখা হয়েছে বহু কলেজে। অনেক ক্ষেত্রেই সপ্তাহের ছ’দিন বিভিন্ন ভাবে গ্রুপে ভেঙে ভেঙে ক্লাস চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
হুগলির রিষড়ায় জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য বিধানচন্দ্র কলেজ খুলবে কাল, বৃহস্পতিবার। উপাধ্যক্ষ রমেশ কর বলেন, ‘‘বুধবার পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস চলবে।’’ এ দিন ক্লাস শুরু হয়নি বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও। আজ, বুধবার পাঠ শুরু হবে সেখানে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy