Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Bardhaman

তাঁদের পৌঁছে দেওয়া খাবারই যে কালীপুজোর উপহার

সোমবার তারকের মতো আরও বেশ কয়েক জন খাবার সরবরাহকারীর কালীপুজোটা এ ভাবেই উজ্জ্বল করে দেন বর্ধমানের জিনিয়া, রুদ্ররা।

খাবার সরবরাহকারীদের তাঁদেরই আনা খাবার উপহার। বর্ধমানে। নিজস্ব চিত্র।

খাবার সরবরাহকারীদের তাঁদেরই আনা খাবার উপহার। বর্ধমানে। নিজস্ব চিত্র।

সুপ্রকাশ চৌধুরী
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২২ ০৭:৩৩
Share: Save:

কালীপুজোর রাত, খাবারের অর্ডার আসছে পরপর। ঊর্ধ্বশ্বাসে টাউন হল ময়দানে খাবারের প্যাকেট পৌঁছে দিয়েই ফিরতি পথ ধরছিলেন তারক। তখনই ডাক পড়ে। পিছন ঘুরতেই অবাক হওয়ার পালা। ‘শুভ দীপাবলি, এটা আপনার জন্যই’ বলে হাসিমুখে তাঁর পৌঁছে দেওয়া খাবারের প্যাকেট তাঁর দিকেই এগিয়ে দেন এক তরুণী। আলো জ্বলে ওঠে তারকের চোখে-মুখে। সোমবার তারকের মতো আরও বেশ কয়েক জন খাবার সরবরাহকারীর কালীপুজোটা এ ভাবেই উজ্জ্বল করে দেন বর্ধমানের জিনিয়া, রুদ্ররা।

নিছক আড্ডা দিতেই পুজোর রাতে টাউন হলের মাঠে জড়ো হয়েছিলেন সাত বন্ধু। গল্পগুজবের মাঝেই তাঁরা লক্ষ্য করেন, আশপাশের অনেকেই অনলাইনে খাবারের অর্ডার দিচ্ছেন। ঘামে ভেজা জামায়, একগাল হাসি নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে আড্ডার খোরাক পৌঁছে দিচ্ছেন সরবরাহকারীরা। তার পরেই ছুটছেন পরের জনের কাছে। তথাগত রায়, রুদ্র সিংহ, জিনিয়া দাসদের মনে হয়, কমবেশি তাঁদের মতোই বয়স ছেলেগুলির। পুজোর দিনও পেটের টানে অক্লান্ত কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা। তখনই ওঁদের কাজে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে কী করে মুখে হাসি ফোটানো যায়, ভাবতে বসেন তাঁরা। খাবার দিয়ে খুশি করার ভাবনাটা আসে তখনই। সাত বন্ধু নিজেদের ফোন থেকে নানা অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে বিরিয়ানির বরাত দেন। টেলিফোনে এমন উদ্যোগের কথা জানতে পেরে জুটে যান কলকাতার এক বন্ধুও। আটটা বিরিয়ানির অর্ডার নিয়ে আগে-পরে ময়দানে হাজির হন আট জন। তারকের মতোই অবাক হতে শুরু করেন তাঁরাও।

খাবার সরবরাহকারী তারক দাস বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরে কাজ করছি। অনেক পুজো-পার্বণ কাটিয়েছি। এই সব দিনে চাপ বেশি হয়। তবে বিশেষ দিনটা এ ভাবে বিশেষ হয়নি আগে কখনও।’’ আর এক ‘ডেলিভারি বয়’ জয়ন্ত নন্দীও বলেন, ‘‘প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না। তার পরে ঘোর কাটল। আমাদেরও উৎসব আছে, এটা যে ওঁরা মনে রেখেছেন, এটা ভেবে চোখে জল এসে গিয়েছিল।’’

দৈনিক ১২-১৩ ঘণ্টা কাজ করে কেউ দৈনিক ৫০০ টাকা, কেউ তারও কম রোজগার করেন তাঁরা। পুজোর আগে মজুরি, জ্বালানির খরচ বাড়ানোর দাবিতে কাজ বন্ধের ডাক দিয়েছিলেন তাঁরা। বর্ধমানের মতো শহরে স্কুটার, বাইক ছাড়া সাইকেল নিয়েও ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেন অনেকে। এ দিনের আয়োজকদের তরফে সন্দীপন সরকার, তথাগত রায়, রুদ্র সিংহরা বলেন, ‘‘বাক্সভর্তি খাবার নিয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন ওঁরা। পেটে খিদে থাকলেও সেই খাবার কিনে খাওয়ার সময় বা সামর্থ্য নেই ওঁদের অনেকের। একটা দিন অন্তত ওঁদের মুখে হাসি ফোটাতে পারলাম।’’ তবে এ ভাবে এক দিনেই শেষ না হয়ে, আলোটা জ্বলতে থাকুক, চাইছেন তাঁরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman Food
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy