হোটেল পরিষ্কারের কাজও করতে হচ্ছে দু’মুঠো খাওয়ার আশায়। প্রতীকী চিত্র।
ফোনের ব্যালান্স শেষ। রিচার্জ করানোর দোকানও বন্ধ। ভরসা অনলাইন। এ দিকে, হাতে টাকাও শেষ। তার উপরে ইন্টারন্যাশনাল রোমিংয়ের গেরো। অগত্যা হোটেলের ওয়াইফাইয়ের সুতোয় ঝুলছে পরিবারের সঙ্গে সংযোগ। খাবারে টান। হোটেলের প্যান্ট্রিতে শুধুই পাস্তা। কোনও হোটেলে তা-ও নেই। কোথাও আবার মাখন-পাউরুটি দিয়ে রাতের খাওয়া সারতে হচ্ছে। ভাগ্য সহায় হলে জুটছে দুধ বা ডিম। কলকাতার একটি হোটেল ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট থেকে ইন্টার্নশিপ করতে গিয়ে ফ্রান্সে আটকে থাকা ১২ জন পড়ুয়ার এখন এমনই দশা। আট জন তরুণী লকডাউনের আগে ফিরলেও উড়ান বাতিল হওয়ায় আটকে পড়েন বাকিরা।
তাঁদেরই এক জন, শ্যামবাজারের সৌম্যজিৎ চক্রবর্তী। হোটেল ম্যানেজমেন্টের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রটি দক্ষিণ ফ্রান্সের মুগ্যাঁ শহরের একটি হোটেলে কর্মরত। ১ ডিসেম্বর ছ’মাসের জন্য সেখানে যান তিনি। ২৬ মে পর্যন্ত হোটেলের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে সৌম্যজিৎ ও তাঁর সহপাঠী পল ডি রোজারিওর। লকডাউনের জন্য ১৬ মার্চ থেকে তাঁরা আটকে হোটেলে। ইন্টার্নশিপ পুরো না হলেও বন্ধ হয়েছে স্টাইপেন্ড। হোটেল পরিচ্ছন্ন রাখার কাজের বিনিময়ে থাকতে-খেতে দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।
প্রত্যেকেরই উদ্বেগের অন্যতম কারণ বাড়িতে বাবা-মায়ের অসুস্থতা। তালতলা এলাকার বাসিন্দা পলের বাবার বাইপাস সার্জারি হয়েছে। সৌম্যজিতের বাবা স্বপন চক্রবর্তী সস্ত্রীক থাকেন শ্যামবাজারে। ২০১২ সালে তাঁরও বাইপাস হয়ে গিয়েছে। ছেলেকে নিয়ে চিন্তিত তাঁরাও। ক্রুসেইয়ের একটি হোটেলে ইন্টার্নশিপে যাওয়া উৎসব বসুর বাড়ি দমদম ক্যান্টনমেন্টে। তাঁর বাবা হাঁটুর সমস্যায় ভুগছেন।
আরও পড়ুন: রেলের বক্তব্য অসত্য, টুইট আলাপনের, সঙ্ঘাতের পথেই রাজ্য
সালাঁশের হোটেলে থাকা আলিপুরের আকাশ কুমার এবং নাগেরবাজারের সোমান চৌধুরীও চিন্তিত পরিবারকে নিয়ে। বাবা-মায়ের ফোন এলে আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু কবে ফিরতে পারবেন, তা নিয়ে অন্ধকারে নিজেরাই। সৌম্যজিৎ বললেন, ‘‘মুগ্যাঁয় আমার এলাকা থেকে দু’কিলোমিটার ব্যাসার্ধের ভিতরে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ৬০ জনেরও বেশি মারা গিয়েছেন। বাবা-মাকে সে কথা বলতে পারিনি।’’
পড়ুয়াদের ফিরিয়ে আনতে ইনস্টিটিউটের তরফে তাঁদের নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর ভারতীয় দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, যোগাযোগ রাখা হচ্ছে দূতাবাসের সঙ্গে। ভারতীয় দূতাবাসের কথা মতো পড়ুয়ারা একটি ফর্ম ভরেছিলেন এক মাস আগে। উত্তর আসেনি। অভিভাবকেরাও কেন্দ্র এবং রাজ্যকে চিঠি দিয়েছেন। পড়ুয়ারা জানাচ্ছেন, মনোবল ধরে রাখতে বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বন্ধুরা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ রাখছেন। সৌম্যজিৎ যেমন কাজের ফাঁকে নিজের ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিয়ো শুট করতে ব্যস্ত থাকছেন।
আরও পড়ুন: রাতে লাইন ধরে হাঁটছিলেন ৫১ জন শ্রমিক, একটুর জন্য অওরঙ্গাবাদ হল না বীরভূম
সৌম্যজিৎ, আকাশেরা জানালেন, তাঁদের দেশে ফেরাতে যে বিমানের ব্যবস্থা করার কথা চলছে, তার খরচ অনেক। পড়ার জন্য এত খরচ করার পরে অত টাকা দেওয়ার অবস্থা তাঁদের নেই। সমস্যা আরও। উড়ান ছাড়বে প্যারিস থেকে। সেখানে পৌঁছতে যে বিপুল খরচ হবে, ভাবাচ্ছে সেটাও। মুগ্যাঁ থেকে প্যারিসে যেতে লাগবে ১৫০ ইউরো, অর্থাৎ ১২ হাজার টাকা।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বিদেশে আটকে থাকা ভারতীয়দের ফেরাতে বিদেশ মন্ত্রক বিমানবন্দর ও বন্দরের অবস্থা জানতে চেয়েছে রাজ্যগুলির কাছ থেকে। রাজ্য সরকারও বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরির পথে এগোচ্ছে। কিছু অসুবিধার কারণে সময় লাগছে। পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলেই ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy