Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

হে গরু, নেট-ভাণ্ডারে তব বিবিধ সোনা

পরিচিত কবিতার অনুলিখন থেকে রসায়ন বইয়ের জটিল ‘ফ্লো-চার্টে’র নকল, কী নেই সেই ব্যঙ্গ-ভাণ্ডারে!

দিলীপ ঘোষের মন্তব্যের পরে মঙ্গলবার সারা দিন ধরে নেট-দুনিয়া মেতে রইল টীকা-টিপ্পনীতে।

দিলীপ ঘোষের মন্তব্যের পরে মঙ্গলবার সারা দিন ধরে নেট-দুনিয়া মেতে রইল টীকা-টিপ্পনীতে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:২৪
Share: Save:

পরশুরামের ‘বিরিঞ্চিবাবা’য় প্রফেসর ননি কচি সবুজ ঘােসর ‘প্রোটিন সিন্থেসিস’ করে তাতে ‘অ্যামিনো গ্রুপ’ যোগ করে ‘সবুজ-অমৃতের চ্যাংড়’ তৈরি করার তোড়জোড় করেছিলেন। আর বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আর এক ধাপ এগিয়ে তো বলেই ফেললেন— ‘দিশি গরুর দুধে সোনা থাকে, তাই সেই দুধের রং হলুদ হয়।’ দিলীপবাবুর সেই মন্তব্যের পরে মঙ্গলবার সারা দিন ধরে নেট-দুনিয়া মেতে রইল টীকা-টিপ্পনীতে। সোনার দাম যেখানে চল্লিশ হাজার ছুঁইছুঁই, তখন সোনা নিয়ে রসিকতা ছাড়া বাঙালি মধ্যবিত্ত আর কী-ই বা করতে পারেন!

পরিচিত কবিতার অনুলিখন থেকে রসায়ন বইয়ের জটিল ‘ফ্লো-চার্টে’র নকল, কী নেই সেই ব্যঙ্গ-ভাণ্ডারে! ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে ঘোরা মেসেজগুলির মধ্যে অনেকেরই মন কেড়েছে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘অবনী বাড়ি আছো’র একটি অনুলিখন। পাঁচ মাত্রায় লেখা বারো লাইনের বহু পরিচিত কবিতাটি এক নেটিজ়েনের হাতে ‘পুনর্লিখিত’ হয়ে এই রূপ ধারণ করেছে— ‘দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া/ নড়ছে শুধু জাবনা কাটা চোয়াল,/ ‘দিলুদা বাড়ি আছো?’ এখানে না থেমে ফেসবুক-কবি বলে চলেন, ‘দুইছে গরু এখানে বারোমাস/ পিসিচন্দ্র ছাঁকনি নিয়ে ঘোরে/ গরুর পিঠে লাগলে রোদ বাতাস/ দুইয়ে নিলে সোনা শুধু ঝরে।’ সোমবার দিলীপ তো তা-ই বলেছিলেন— ‘‘দেশি গরুর কুঁজের মধ্যে স্বর্ণনাড়ি থাকে। সূর্যের আলো পড়লে সেখান থেকে সোনা তৈরি হয়।’’

রসায়ন বইয়ের ছবির অনুকরণে আর এক নেটিজ়েন তৈরি করেছেন ‘পাতন পদ্ধতিতে দুগ্ধ হইতে স্বর্ণ নিষ্কাশন’-এর ‘ফ্লো-চার্ট’। বন্ধনীর মধ্যে উল্লেখও করে দিয়েছেন— ‘দিলুপাতন প্রক্রিয়া’! ছট পুজোয় তালা ভেঙে পুণ্যার্থীরা ঢুকে পড়েছিলেন দক্ষিণ কলকাতার রবীন্দ্র সরোবরে। সেই রবীন্দ্র সরোবরের জল দিয়ে ‘ডবল বয়লার’ তৈরি করে, তাতে ‘দিশি গরুর’ দুধ ফুটিয়ে তার সঙ্গে গোমূত্র যোগ করে কী ভাবে তরল সোনা ‘তৈরি’ করা যায়, তার সবিস্তার ছবি বানানো হয়েছে। সোনা তৈরির এই প্রক্রিয়ার ‘বাইপ্রডাক্ট’ বা উপজাত যে ‘হাওয়া হয়ে বেরিয়ে যাওয়া শিক্ষাগত জ্ঞান’, তার-ও উল্লেখ করা হয়েছে এই ব্যঙ্গচিত্রে। এ ছাড়া, গরুর বাঁটে নামী গয়নার দোকানের ঠিকানা, গরুর দিকে হিংসে ভরা চোখে অসংখ্য গয়না-শোভিত বাপি লাহিড়ীর তাকিয়ে থাকা, সোনার কেল্লাকে ‘দুধের কেল্লা’ বলা, দিশি গরু বাঁধা রেখে ব্যাঙ্ক থেকে ‘গোল্ড লোন’ পাওয়ার চেষ্টা— নানা ধরনের মিম দিনভর ঘুরেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সবাই স্বীকার করে নিচ্ছেন— দুধ না খেলে, হবে না ‘সোনা’ ছেলে!

আরও পড়ুন: বিজেপিকে ‘সাফ’ করে একুশে আমরাই ফিরব, আত্মবিশ্বাসী ঘোষণা মমতার

বিজেপির রাজ্য সভাপতি এই মন্তব্য নিয়ে সরাসরি মুখ না-খুললেও বিষয়টির সম্ভাব্যতা উড়িয়েও দেয়নি আরএসএস। সঙ্ঘের মুখপাত্র বিপ্লব রায় বলেন, ‘‘দিলীপবাবু তাঁর ব্যক্তিগত মত বলেছেন। সব বিষয়ে আরএসএস মত দেয় না। এ বিষয়েই বা দেবে কেন? আর দিলীপবাবু যা বলেছেন, তা গবেষণার বিষয়। অনেক প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় ওই ধরনের তত্ত্ব উঠেও এসেছে।’’

নরেন্দ্র মোদীর জমানায় এই ‘বিজ্ঞানবধ পালা’র মধ্যে অবশ্য বিশেষ নতুনত্ব নেই। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে পরেই ২০১৪-র অক্টোবরে মুম্বইয়ে চিকিৎসকদের এক সম্মেলনে খোদ মোদী মন্তব্য করেছিলেন, ‘প্রাচীন আমলের এক প্লাস্টিক সার্জন গণেশের দেহে হাতির মাথা বসিয়েছিলেন।’ গত কয়েক বছরে বিজ্ঞানকে ‘পুনর্নির্মাণ’ করার বহু চেষ্টা হয়েছে। গত জানুয়ারিতে জালন্ধরে বিজ্ঞান কংগ্রেসে তামিলনাড়ুর ‘ওয়র্ল্ড কমিউনিটি সার্ভিস সেন্টারের’ বিজ্ঞানী কে জে কৃষ্ণন বলেছিলেন, ‘‘আইনস্টাইন বিশ্বকে বিভ্রান্ত করেছিলেন। তাঁর তত্ত্বে মহাকর্ষীয় বিকর্ষণ বল (গ্র্যাভিটেশনাল রিপালসিভ ফোর্স) সম্পর্কে যা যা বলেছিলেন আইনস্টাইন, তার আদ্যোপান্তই ভুলে ভরা।’’ তার আগের বছরের বিজ্ঞান কংগ্রেসেই মোদী সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন দাবি করেছিলেন, ‘‘স্টিফেন হকিংয়ের মতে বেদের তত্ত্বগুলি সম্ভবত আইনস্টাইনের বিখ্যাত ‘e=mc2’ সূত্রটির চেয়েও উন্নত।’’ এই মন্তব্যের দিন কয়েক আগেই অবশ্য প্রয়াত হন হকিং! বছর তিনেক আগে রাজস্থান হাইকোর্টের বিচারপতি মহেশচন্দ্র শর্মা আবার দাবি করেছিলেন, ময়ূর আজীবন ব্রহ্মচারী থাকে। অশ্রুতেই ময়ূরীর সঙ্গে তার মিলন ঘটে। তাই সে জাতীয় পাখি। গরুকে জাতীয় পশু করার দাবিও তুলেছিলেন তিনি। তখনও নেট-সমালোচনা কম হয়নি!

সোশ্যাল মিডিয়ার এই ব্যঙ্গ-বন্যা বুঝিয়ে দিচ্ছে, মঙ্গলবারের দিনটা দিলীপ-রসিকতাতেই মজে রইল আন্তর্জাল-বিশ্ব। আর এখানেই অশনি সঙ্কেত দেখছেন অনেকে। হোয়াটসঅ্যাপে ঘোরা একটি মেসেজ বলছে, ‘এটা একটা কৌশল...মূল খবরগুলি থেকে চোখ ঘোরানোর কৌশল।’ তাই তো এ বছরের গোড়ায় বক্স অফিস মাত করা বলিউডের ছবি ‘উরি’র কায়দায় এক নেটিজ়েনের তির্যক মন্তব্য— ‘‘হাউ ইজ় দ্য ঘোষ?... হাই, স্যর!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Dilip Ghosh BJP Social Media Cow
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy