—প্রতীকী ছবি।
এক ঝলক দেখে মনে হবে, সরকারি লিজ়ে চলছে বালি তোলার কাজ। নদী থেকে বালি তুলে ভরা হচ্ছে ‘ট্রলি’-তে (ট্রাক্টরের পিছনে-জোড়া ডালা), পিক-আপ ভ্যানে। রয়েছে ট্রাক, ডাম্পার। তবে এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, আসলে চলছে বালির চোরাকারবার। কোচবিহার জেলা জুড়ে তোর্সা, রায়ডাক, সংকোশ, ধরলা নদীতে সক্রিয় ওই কারবারিরা। বিরোধীদের অভিযোগ, মোটা ‘কমিশনের’ বিনিময়ে জেলা জুড়ে চলা বালির অবৈধ কারবারের এই চক্রটিকে পিছন থেকে মদত দেন শাসক দলের নেতারা। তবে জেলা তৃণমূলের নেতারা অভিযোগ মানেননি।
ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কোচবিহার জেলা আধিকারিক সন্দীপ দত্ত বলেন, “সারা বছর নজরদারি-অভিযান জারি থাকে। বেআইনি ভাবে বালি তোলা বা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” জেলার পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্যের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। জবাব মেলেনি মেসেজের। তবে জেলা পুলিশের অন্য কর্তাদের দাবি, ‘‘বালি পাচার রুখতে পুলিশ সক্রিয়।’’
তা-ই কি?
বর্তমানে কোচবিহার জেলায় দু’টি নদীর দু’জায়গায় সরকারি ভাবে বালি তোলার লিজ় দেওয়া রয়েছে, তুফানগঞ্জের রামপুরে রায়ডাক, মাথাভাঙা-১ নম্বরে ধরলা নদীতে। অথচ, প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রের দাবি, বেআইনি ভাবে বালি তোলা হয় অন্তত কুড়িটি ‘পয়েন্ট’ (জায়গা) থেকে। কারবারে জড়িতদের সূত্রে জানা গিয়েছে, পাচারের সময় কখনও হোয়াটসঅ্যাপে বালি বোঝাই গাড়ির নম্বর পাঠিয়ে দেওয়া হয় ‘পক্ষে থাকা’ সরকারি টহলদারদের কাছে, কখনও গাড়ির চালকের কাছে থাকা তির চিহ্ন আঁকা চিরকুট দেখালেই মেলে ছাড়পত্র। প্রতিদিন প্রতিটি নদী থেকে অন্তত ১০০ ‘ট্রলি’ বালি তোলা হয়। ফলে জেলায় গড়ে রোজ চলে শতাধিক গাড়ি। শনি ও রবিবার নজরদারিতে ‘ঢিলেমির’ সুযোগে সে সংখ্যা দু’-তিন গুণ পর্যন্ত হয়ে যায় বলে দাবি।
কী ভাবে চলছে ওই কারবার?
বছর পাঁচেক আগে, কোচবিহার জেলা সদরের গা ঘেঁষে বয়ে যাওয়া তোর্সা নদীর চরে (হরিণচওড়া এলাকায়) বালি তোলার লিজ় দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, সেই লিজ়-চুক্তি বাতিল হওয়ার পরেও তোর্সার ওই চর থেকে রাতে অবৈধ ভাবে বালি তোলা হয়। তুফানগঞ্জে রায়ডাক, সংকোশ, মাথাভাঙায় সুটুঙ্গা, ধরলা, চ্যাংরাবান্ধায় ধরলা নদীতেও একই কায়দায় রাতের অন্ধকারে কারবার চলে বলে অভিযোগ।
কোচবিহারের নদীগুলিতে যে-বালি মেলে, তা মূলত জমি ভরাটে লাগে। পাশের জেলার শিলতোর্সা, জল্পেশের বালি লাগে বাড়ি বানাতে। বালি-কারবারে জড়িতদের বক্তব্য, এক ট্রলিতে ৬০-৭০ ঘনফুট (সিএফটি) বালি বৈধ ভাবে কিনতে গেলে খরচ দু’হাজার টাকার আশপাশে। সমপরিমাণ বেআইনি বালি কিনলে খরচ অন্তত ৫০০ টাকা কম। সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার অবৈধ বালির কারবার চলে। ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর অভিযান চালিয়ে অবৈধ কারবারিদের কাছ থেকে চার কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা আদায় করেছে তারা। চলতি বছরে অক্টোবর পর্যন্ত সেই বাবদ আদায় পৌঁছেছে দু’কোটি ২৪ লক্ষ টাকায়।
বিজেপির কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে-র দাবি, “শাসকের খাতায় কমিশন জমা হয় বলেই বালির অবৈধ কারবার এ ভাবে চলতে পারছে।”
এ ব্যাপারে তৃণমূলের কোচবিহার জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মণের মন্তব্য, “তৃণমূলের কেউ এমন কাজে যুক্ত থাকলে, প্রশাসন ও দল ব্যবস্থা নেবে। জেলায় বিজেপির বিধায়ক, সাংসদেরা বালির অবৈধ কারবার বন্ধের দাবিতে প্রশাসনকে চাপ দিন। আমরা সঙ্গে আছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy