দহন দিনে। উল্টোডাঙা স্টেশনে শৌভিক দে-র তোলা ছবি।
এই দুঃসহ গরমেও আকাশে মেঘের আনাগোনায় কিংবা একটু ঝোড়ো হাওয়ায় আশ্বস্ত হবেন না! ওই মেঘ থেকে দু’এক পশলা বৃষ্টি হয়তো হবে, ঝোড়ো হাওয়া হয়তো সাময়িক স্বস্তি দেবে, কিন্তু আখেরে অস্বস্তিই ফিরবে চতুর্গুণ হয়ে। কারণ জলীয় বাষ্প পরিমণ্ডলে ঢুকে হাঁসফাঁস অবস্থাটা বাড়িয়ে দেবে। শনিবার এমনই জানিয়েছে আলিপুর হাওয়া অফিস।
রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলির পরিস্থিতি কিছুটা ভাল। সেখানে তাপপ্রবাহ চললেও সন্ধ্যার পরে তাপমাত্রা কিছুটা কমছে, হাওয়া বইছে। দুপুরের অসহ্য গরম থেকে তখন কিছুটা নিস্তার পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু কলকাতায় সন্ধ্যার পরে বাতাস জলীয় বাষ্প ঘাড়ে নিয়ে ভারী হয়ে বাড়িয়ে দিচ্ছে অস্বস্তি। কাজেই এর ওপর দু-এক পশলা বৃষ্টি হলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ এতই বাড়বে যে, শরীরের ঘাম শুকোনোই তখন দায় হয়ে উঠবে।
মধ্য ভারত ও ওড়িশায় তীব্র তাপপ্রবাহের জেরে বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং এ রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে শুকনো বাতাস ঢুকছে, তার জেরে তাপমাত্রা বাড়ছে। বীরভূম, পুরুলিয়ার পরে শনিবার তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে বর্ধমানের শিল্পাঞ্চল। সেখানে দিনে লু বইছে। তুলনায় কলকাতার তাপমাত্রা গত দু’দিনের তুলনায় এ দিন সামান্য কমলেও মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
আবহবিদেরা বলছেন, পশ্চিমাঞ্চলের শুখা জেলাগুলিতে দিনের বেলায় তাপমাত্রা চড়চড় করে বাড়লেও সন্ধ্যার পরে মাটি থেকে প্রচুর তাপ বিকিরণ হচ্ছে। ফলে মাটি দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ফলে সেখানকার রাতে মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাচ্ছেন।
ঠিক বিপরীত অবস্থা দক্ষিণবঙ্গের সমুদ্র উপকূল এলাকায়। সেখানে বাতাসের নিচু স্তরে নিম্নচাপ অক্ষরেখা পরিস্থিতি বদলে দিচ্ছে। ওই নিম্নচাপ অক্ষরেখার ফলে বাতাসে ঢুকছে জলীয় বাষ্প। তাতে দিনের তাপমাত্রা খুব একটা বাড়তে না পারলেও, ওই জলীয় বাষ্পই অস্বস্তি বাড়াচ্ছে। দিনে মাটি যত গরম হচ্ছে, সন্ধ্যার পরে সেই তুলনায় ঠান্ডা হচ্ছে না। কারণ, মাটির কাছাকাছি থাকা জলীয় বাষ্পের স্তর তাপ বিকিরণে বাধা দিচ্ছে। এই দুয়ের নিট ফল, চরম অস্বস্তি।
এর সঙ্গে বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি উল্টে আরও খারাপ হচ্ছে উপকূল এলাকায়। আলিপুর হাওয়া অফিসের এক আবহবিদের কথায়, ‘‘বাতাসে জলীয় কণার পরিমাণ যদি ৬০ শতাংশ হয়, বৃষ্টির পরে তা বেড়ে হয় ৮০ শতাংশ। যার ফলে হাওয়া চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। অস্বস্তিও বাড়ে। প্রথমত, আর্দ্রতায় ঘাম দ্রুত শুকোয় না। ঘাম না শুকোলে শরীরের তাপ বেরোয় না। শরীরের ভিতরে তাপ বাড়তে থাকে। হৃৎপিণ্ড, শ্বাসযন্ত্র এমনকী, স্বাভাবিক বিপাক প্রক্রিয়াও ব্যাহত হয়। তার জেরে শরীর হাঁসফাঁস করতে থাকে। শরীরের তাপ খুব বেড়ে গেলে হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কের ক্রিয়া স্তব্ধ হয়ে মৃত্যুও হতে পারে।
এই অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে কী করে? হাওয়া অফিস বলছে, এর একমাত্র প্রাকৃতিক দাওয়াই হল, জোরদার বর্ষা, আগামী ৮ জুনের আগে যার আসার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু গত কয়েক বছর বর্ষার প্রথমটা তেমন জোরদার না হওয়ায় আবহবিদেরা শঙ্কিত। এক আবহবিদের কথায়, বর্ষা আসার পরে কয়েক দিন হাল্কা বৃষ্টি হয়ে তা থেমে গেলেও এখনকার মতো অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হবে।
বর্ষা এখন ঠিক কোথায়?
উপগ্রহ চিত্র জানাচ্ছে, এক দিকে মৌসুমি বায়ু আন্দামান ছেড়ে মায়ানমারের পথে অর্ধেক রাস্তা পেরিয়েছে। কিন্তু বায়ুপ্রবাহ অনুকূল না হওয়ায় সেখানে থমকে গিয়েছে বর্ষা। আর মূল পথ দিয়ে, অর্থাৎ, আরব সাগর থেকে মৌসুমি বায়ুর কেরলে ঢোকার সম্ভাবনা আগামী শুক্র বা শনিবার। তার পরে তার গতি-প্রকৃতি কী হবে, তা নির্ভর করবে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের উপরে। তাই আবহবিদ ও আম কলকাতাবাসীর প্রার্থনা, বঙ্গোপসাগরে ঘনঘন তৈরি হোক গভীর নিম্নচাপ।
বঙ্গোপসাগরের উপরে হালফিলের বায়ুপ্রবাহ অবশ্য সেই সম্ভাবনা দেখাচ্ছে না। আর মে মাসের খুচরো বৃষ্টি কোনও সমাধান তো নয়ই। অপেক্ষা তাই বর্ষার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy