দোকানদারদের ক্রমাগত বাধার জেরে শুরু করা যাচ্ছে না স্কাইওয়াক তৈরির কাজ। দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াক প্রকল্পের শিলান্যাসের পরে কেটে গিয়েছে প্রায় চার মাস। টেন্ডারও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত একটি ইটও গাঁথা সম্ভব হয়নি।
এ নিয়ে নিজেদের ‘অমত’ এর কথা জানিয়ে পুরসভায় চিঠি জমা দিয়েছেন দোকানদারেরা। কিন্তু যে বাধাই আসুক না কেন রাজ্য সরকার নিজের সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও নড়বে না বলেই জানিয়ে দিয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
পুরমন্ত্রী বলেন, ‘‘১৩২টা দোকানের জন্য কয়েক লক্ষ মানুষের সুবিধা নষ্ট করতে পারি না। সরকার কারও রুটিরুজি মারতে চায় না। এখনও দোকানদারদের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা। ফের পুরসভায় আলোচনা হবে।’’ কিন্তু তাতেও যদি দোকানদারেরা সিদ্ধান্তে অটল থাকেন? ‘‘তা হলে সরকার নিজের পথে চলবে। তখন যেন কেউ সরকারকে দোষারোপ না করেন।’’
দক্ষিণেশ্বরের রাস্তায় প্রতি দিনের যানজট কমাতে গত মার্চে ‘স্কাইওয়াক’ প্রকল্পের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কাজ শুরু করতে গিয়েই দোকানদারদের বাধার মুখে পড়তে হয় কেএমডিএ-কে। দোকানদারেরা দাবি তোলেন, তাঁরা নিজেদের জায়গা থেকে কোনও মতেই সরবেন না। সিদ্ধান্ত হয়, স্কাইওয়াক তৈরি হলে পথচারীরা যেমন উপর দিয়ে হাঁটবেন, তেমনি ওই সেতুর উপরেই দোকান থাকবে। আর যানবাহন চলবে তলা দিয়ে।
সামনেই পুরভোট থাকায় এ নিয়ে সেই সময় কোনও বিতর্কে যেতে চায়নি প্রশাসন। ভোট মিটতেই স্কাইওয়াক নিয়ে আলোচনায় বসেন খোদ পুরমন্ত্রী। নিজে কামারহাটি পুরসভায় এসে প্রশাসনের আধিকারিক ও দোকানদারদের সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানেই স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় দোকানদারদের রুটিরুজির কথা ভেবে নির্দিষ্ট জায়গায় তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে। এক বছর পরে প্রকল্প শেষ হলে স্কাইওয়াকের উপরেই সকলকে জায়গা দেওয়া হবে।
কিন্তু এর পরেও দোকানদারেরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা জায়গা থেকে সরবেন না। দোকানদার সমিতির সম্পাদক অজিত সিংহ বলেন, ‘‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি না। কিন্তু সরকারকেও আমাদের কথা শুনতে হবে, ভাবতে হবে। স্কাইওয়াকের উপরে দোকান হলে ব্যবসা মার খাবে।’’ পুরমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সময়েই সিদ্ধান্ত হয়েছিল দোকানদার সমিতি কয়েক দিনের মধ্যেই নিজেদের সিদ্ধান্ত লিখিত আকারে পুর-কর্তৃপক্ষকে জানাবে।
স্থানীয় প্রশাসনেরও অভিযোগ, রাস্তার দু’পাশের দোকানদারদের বাধাতেই প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান, তৃণমূলের গোপাল সাহা বলেন, ‘‘১ জুলাই চিঠি দেওয়ার কথা থাকলেও ওঁরা দু’দিন পরে সেটি জমা দেন। চিঠিতে জানিয়েছেন তাঁরা সিদ্ধান্ত থেকে নড়ছেন না। দোকান সরাবেন না। বিষয়টি পুরমন্ত্রী-সহ অন্য আধিকারিকদের জানিয়েছি।’’
দোকানদার সমিতির অজিতবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমরা বৈঠকে যে কথা মন্ত্রীকে বলতে চেয়েছিলাম তা তিনি শুনতে চাননি। সেই বক্তব্যই চিঠিতে জানিয়েছি।’’ চিঠিতে বলা হয়েছে, গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা মন্দিরের বাইরে করলে এই প্রকল্প করতে হবে না। তাতে সরকারের রাজস্ব বাঁচবে। অথবা নিচে দোকান রেখে কি ভাবে স্কাইওয়াক করা যায় তা নিয়ে দোকানদারদের তরফে তৈরি করা নকশা বিবেচনা করে দেখা হোক।
পুরমন্ত্রী অবশ্য এ কথায় আমল দিতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘মনে হয় ওই দোকানদারদের মধ্যে এমন কোনও বিশেষজ্ঞ আছেন, যাঁর থেকে আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা কম জানেন। সরকার নিজের কাজ করবে। সে জন্য কারও পরামর্শের দরকার নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy