Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Sisir Adhikari

প্রতি ইঞ্চিতে জবাব পাবে, বলছেন ক্ষুব্ধ, ব্যথিত ও ঘরবন্দি শিশির অধিকারী

শিশির অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমি এখনও নেত্রীর সঙ্গেই আছি। ববি, সৌগত রায় আমার, আমার পরিবারের নামে যা বলেছেন, তা কেউ কোনওদিন বলেনি!’’

শিশির অধিকারী। —ফাইল চিত্র

শিশির অধিকারী। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২১ ১৫:০৪
Share: Save:

অহরহ তাঁর পরিবারকে ‘মিরজাফর’, ‘বেইমান’ বলা হচ্ছে। কাঁথিতে তাঁর বাড়ির অদূরে মাইক লাগিয়ে জনসভা করায় সে সব বিশেষণ তাঁর কানেও পৌঁছেছে। পুত্র শুভেন্দু অধিকারী আগেই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। শুক্রবার আরেক পুত্র সৌম্যেন্দুর বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে অধিকারী পরিবারের কর্তা, কাঁথির সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিশির অধিকারী বললেন, ‘‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে জবাব পাবে। জবাব দেবেন মেদিনীপুরের মানুষ। আমি যখন তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম, অবিভক্ত মেদিনীপুরে একটাও নির্বাচিত পদ ছিল না। আমি যোগ দেওয়ার পর দলে দলে সকলে যোগ দিল। আর আমি এখন হলাম মিরজাফর! আমি হলাম বেইমান! বাহ্!’’

ঘটনাচক্রে, শুভেন্দু বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার আগে থেকেই রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম তাঁকে ‘মিরজাফর’ বলতে শুরু করেছিলেন। শুভেন্দু যোগ দেওয়ার পর তাঁকে একাধিক বার বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘অধিকারি পরিবারটাই মিরজাফর!’’ সে খবর পৌঁছেছে অশীতিপর শিশিরের কানে। এবং তিনি হাসতে হাসতে বলছেন, ‘‘মিরজাফর তো মুসলমান বলে জানতাম! তবে ববি ভাল ছেলে। ও ভাল থাকুক। আমার পরিবারকে ববি গাল দিলে আমার কিছু যায়-আসে না।’’

আপাতত একাশি চলছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে বাড়ি থেকে বেরোন বন্ধ শিশিরের। জানাচ্ছেন, ছেলেরা বাড়ি থেকে বেরোতে কঠোর ভাবে বারণ করে দিয়েছে। বলেছে ভ্যাকসিনের জন্য অপেক্ষা করতে। ছেলেদের বারণ মেনে তিনি আপাতত ভ্যাকসিনের অপেক্ষায়। ভ্যাকসিন নেওয়া হয়ে গেলেই দিল্লি যাবেন। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত? শিশিরের জবাব, ‘‘তার আগে পর্যন্ত বাড়িতে থাকব। হরেকৃষ্ণ করব। আমরা তো চক্রবর্তী ব্রাহ্মণ ছিলাম। চৈতন্য মহাপ্রভু আসার পর অধিকারী হয়েছি। আমাদের বাড়িতে রাধামাধবের পুজো হয় প্রতিদিন। এখনও অধিকারী পরিবারকে দলমতনির্বিশেষে লোকে ভালবাসে। এখনও রোজ প্রায় ২,০০০ ফোন ধরি। ৫০০ লোক বাড়িতে এসে কথা বলে। তাদের সঙ্গে সুখদুঃখের কথা বলি। দিন কেটে যায়।’’

আরও পড়ুন: শুভেন্দুর ঘোষণা, আজ বিকেলেই বিজেপিতে যোগ ভাই সৌম্যেন্দুর

কিন্তু তিনি তো এখনও পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা তৃণমূল সভাপতি! এবার শিশিরের গলায় খানিকটা শ্লেষ, ‘‘জেলা সভাপতি এখনও আছি কি না জানি না! কিছুই জানি না! না দিস সাইড, না দ্যাট সাইড। আগেকার পার্টিতে (কংগ্রেস) বুড়ো লোকেরা থাকতে পারত। থাকতে দিত। এখনকার পার্টিতে (তৃণমূল) ৮০ বছরের বেশি লোককে তো রাখে না!’’ কিন্তু পাশাপাশিই বলেন, ‘‘আমি কিন্তু এখনও নেত্রীর সঙ্গেই আছি। ববি, সৌগত রায় এসে কুৎসিত ভাষায় গালিগালাজ করে বক্তৃতা দিয়েছে। সৌগতবাবু এই শহরে দাঁড়িয়ে আমার আর আমার পরিবারের নামে যা বলেছেন, তা কেউ কোনওদিন বলেনি! এত জঘন্য ভাষায় আমার পরিবারকে আক্রমণ করা হল!’’

কিন্তু তিনি বিষয়টি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাচ্ছেন না কেন? প্রবীণ নেতা ও সাংসদের জবাব, ‘‘আমার ফোন করার দরকার নেই। ওঁর কাছে কি আমার ফোন নম্বর নেই? উনি আমায় শেষবার ফোন করেছিলেন যখন আমার পায়ে অপারেশন হয়েছিল। এ সব ঘটনা তো তার পরে ঘটেছে। উনি তো আমায় একটা ফোন করেননি! শুভেন্দু অনেক ভাবে অপমানিত হয়ে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সে আমাকে বলেওনি। আমার ছোট ছেলে সৌম্যেন্দু তো অধিকারী বাড়িতে নেত্রীর সবচেয়ে বড় সমর্থক ছিল। কেউ নেত্রীর নামে দুটো কথা বললে টেবিলের উপর উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করত। পারলে চড়চাপড়ও লাগিয়ে দিত। ওকে যে ভাবে সরানো হল, সেটা কি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে? ও মধ্যপ্রদেশের মহাকাল মন্দিরে গিয়েছিল। সেখানে গেলে সকলকেই কপালে গেরুয়া সিঁদুরের টিপ পরতে হয়। ওকেও পরতে হয়েছিল। সেই ছবিটা দেখে সকলে ধরে নিল, ও বিজেপি হয়ে গিয়েছে! তার পরেই ওকে সরিয়ে দেওয়া হল প্রশাসকের পদ থেকে! এটা কি ন্যায়বিচার হল?’’ স্পষ্টতই কাঁথি পুরসভার প্রশাসক পদ থেকে যে ভাবে সৌম্যেন্দুকে সরানো হয়েছে, তা নিয়েও ক্ষোভ এবং অনুযোগ রয়েছে শিশিরের। তাঁর কথায়, ‘‘কলকাতা হাইকোর্ট তো মামলাটা নিয়েছে। দেখুন ৪ জানুয়ারি শুনানিতে কী হয়!’’

আরও পড়ুন: লড়াইয়ের কথা স্মরণ করিয়ে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসে বার্তা মমতার

শুভেন্দু বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর তাঁকে ‘গাঁধীর হত্যাকারীদের দলের সদস্য’ বলেও কটাক্ষ করা হচ্ছে। তা নিয়েও শিশিরের বক্তব্য রয়েছে। বলছিলেন, ‘‘আমার বাবাকে সুভাষচন্দ্র বসু হাতে করে খাইয়ে দিয়েছিলেন। উনি আমাদের আগের বাড়ির উঠোনে চৌকি পেতে মিটিং করেছেন। আমার বাবা কলকাতায় প্রতি মাসে সুভাষবাবুর বাড়িতে যেতেন। অন্তর্ধান হওয়ার সময়েও উনি আমাদের বাড়ির উপর দিয়ে গিয়েছেন। এ সব কথা আমি কাউকে কখনও বলি না। কিন্তু এখন এমন সময় এসেছে যে, এই কথাগুলোও বলতে হচ্ছে!’’ আরও বলেন, ‘‘ওঁরা কি কেউ নন্দীগ্রামের রাস্তা চিনতেন? চিনতেন না! নন্দীগ্রাম মানুষের আন্দোলন। কিন্তু তাতে এই অধিকারী পরিবারেরও একটা ভূমিকা ছিল। সেটা এখন সকলে ভুলে গেলেন?’’

জেলা সভাপতি পদে এখনও আছেন। কিন্তু আপাতত রাজনৈতিক কর্মসূচি সব বন্ধ রেখেছেন অধিকারী পরিবারের দোর্দন্ডপ্রতাপ কর্তা। কাঁথিতে দলের সভায় যাননি। নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতার সভাতেও যেতেন না। বলছেন, ‘‘এরা চাইছিল আমাকে দিয়ে ছেলের (শুভেন্দুর) বিরুদ্ধে বলাতে। সেটা কি কখনও সম্ভব? আমি ছেলের বিরুদ্ধে যাব? ছেলে আমার পরিবারের বড় সম্পদ! আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে দল যা বলছে, তা ঠিক নয়। মমতা এখনও আমার নেত্রী। আমি তাঁর বিরুদ্ধে কোথাও একটিও কথা বলিনি। কিন্তু আমাদের পরিবারের অপমানের জবাব ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে দেবেন মেদিনীপুরের মানুষ। গণতন্ত্রে মানুষই আসল। মানুষই শেষ কথা বলে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy