মুকুল রায়।
এগারো বছর পরে বোধোদয়! বাম আমলে সিঙ্গুর থেকে টাটাদের তাড়িয়ে দেওয়া যে ঠিক হয়নি এবং তাতে যে রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনা ধাক্কা খেয়েছিল, তা আজ স্বীকার করে নিলেন সে সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী মুকুল রায়। বর্তমানে বিজেপিতে যোগ দেওয়া মুকুলের ওই মন্তব্যে অবশ্য অবাক হচ্ছে না রাজ্যের শাসক শিবির। উল্টে তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য, নিজের দলের নেতাদের ‘খুশি’ করতেই ওই স্বীকারোক্তি।
দিল্লিতে আজ দার্জিলিঙের কাউন্সিলরদের বিজেপিতে যোগদানের মঞ্চে হঠাৎই সিঙ্গুর প্রসঙ্গ টেনে আনেন মুকুলবাবু। তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘‘তৃণমূলে থাকার সময়ে আমিও সিঙ্গুর আন্দোলনে শামিল হয়েছিলাম। বিরোধিতা করেছিলাম টাটাদের। কিন্তু এত বছর পরে ভুল স্বীকার করে বলছি, সে দিন টাটাদের চলে যাওয়া ঠিক হয়নি। এর ফলে শিল্প সম্ভাবনা হারিয়েছে বাংলা। সেই সময়ে টাটাদের ওই কারখানা হলে দেখাদেখি আরও শিল্প গোষ্ঠী বাংলায় আসত। চাকরির সুযোগ বাড়ত। বেকারত্বের বাজারে রাজ্যের ছেলেরা চাকরি পেত।’’
মুকুলবাবু আচমকা ওই মন্তব্য করলেও তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ‘ন্যানো’ তথা সিঙ্গুর ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠার পিছনে রয়েছে হুগলি লোকসভা আসনে তৃণমূলের হার। মমতার কাছে আরও অস্বস্তির বিষয় হল, ওই লোকসভা আসনের অন্তর্গত সিঙ্গুর থেকে অন্তত ১৭ হাজার ভোটের ‘লিড’ পেয়েছেন বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। শুধু তা-ই নয়, ভোটে জিতেই ওই এলাকায় নতুন করে শিল্প গঠনের দাবি তুলেছেন লকেট। ফলে, যে সিঙ্গুর আন্দোলনের সূত্র ধরে মমতা রাজ্যের মসনদ দখল করেছিলেন, সেই সিঙ্গুরে বিরোধিতার স্বর ওঠায় গত কাল জেলাভিত্তিক পর্যালোচনায় তৃণমূল নেত্রীর ক্ষোভের মুখে পড়েন হুগলির দলীয় নেতারা। তার পরেই আজ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই মন্তব্য করেন মুকুলবাবু।
কিন্তু এত বছর পরে কেন ওই স্বীকারোক্তি? কেনই বা বোধোদয়? মুকুলবাবুর কথায়, ‘‘তখন যা ভুল করেছিলাম, তা আজ বুঝতে পেরেছি। তাই স্বীকার করতে কোনও খেদ নেই।’’ যা শুনে তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, নতুন দলের নেতৃত্বকে খুশি করতে গিয়ে পুরনো অনেক কিছুই এখন ভুল বলে মনে হবে প্রাক্তন রেলমন্ত্রীর!
বিজেপি নেতার এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘মুকুলবাবু তো সেই সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোগী হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। এখন তা হলে তাঁদের দু’জনেরই মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। মুকুলবাবুর এখনকার দলের নেতৃত্বের মধ্যে রাজনাথ সিংহ, সুষমা স্বরাজেরা সেই সময়ে মমতার পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন।’’ রাজ্যের শিল্পায়নের স্বার্থে সব পক্ষ মিলে ফের চেষ্টা শুরু করা উচিত বলেও সেলিমের দাবি। সিঙ্গুরের ‘কৃষিজমি, জীবন ও জীবিকা রক্ষা কমিটি’র শরিক তথা পিডিএস নেতা সমীর পূততুণ্ডের বক্তব্য, ‘‘আন্দোলনটা ভুল ছিল, এমন কথা এ ভাবে বলা যায় না। তবে সেই আন্দোলনের প্রধান
শক্তি এবং তখনকার সরকার— দু’পক্ষেরই কিছু ভুল ছিল। আলোচনা চলাকালীন টাটার চলে যাওয়ার ঘোষণাও ঠিক হয়নি।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy