Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫
Suvendu Adhikari

মন্ত্রিত্বে ইস্তফার পর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বিধায়ক পদ ছেড়ে নিতে চান শুভেন্দু

শুক্রবার শুভেন্দু-শিবির সূত্রে দাবি, মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর রবিবার তিনি তাঁর প্রথম জনসভা করবেন স্বাধীনতাসংগ্রামী রঞ্জিত বয়ালের স্মরণে।

শুক্রবার তাঁর শিবির সূত্রে দাবি, মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর রবিবার শুভেন্দুর তাঁর প্রথম জনসভা করবেন স্বাধীনতাসংগ্রামী রঞ্জিত বয়ালের স্মরণে। ওই সভা হবে মহিষাদলে। নিজস্ব চিত্র

শুক্রবার তাঁর শিবির সূত্রে দাবি, মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর রবিবার শুভেন্দুর তাঁর প্রথম জনসভা করবেন স্বাধীনতাসংগ্রামী রঞ্জিত বয়ালের স্মরণে। ওই সভা হবে মহিষাদলে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২০ ২২:১৫
Share: Save:

তাঁর ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ নিলে তা বিধায়ক পদ ছেড়েই নিতে চান রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার তিনি মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দেওয়ার পর তাঁর ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে এমনই দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশিই বলা হয়েছে, ‘ব্যক্তিগত স্তরে আক্রমণ এবং বিতর্ক’ এড়াতেই মন্ত্রিত্ব-সহ বিভিন্ন সরকারি পদে ইস্তফা দিয়েছেন শুভেন্দু। আপাতত তিনি বিধায়ক থাকবেন এবং ‘নিজস্ব জনসংযোগ কর্মসূচি’ চালিয়ে যাবেন। শুক্রবার তাঁর শিবির সূত্রে দাবি করা হয়েছে, মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর রবিবার শুভেন্দুর তাঁর প্রথম জনসভা করার কথা। সদ্যপ্রয়াত প্রবীণ স্বাধীনতাসংগ্রামী রঞ্জিত বয়ালের স্মরণে ওই সভা হবে মহিষাদলে। গত দু’তিন মাস ধরেই শুভেন্দু সভা করলে তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে ওঠে— তিনি সভায় কী বলবেন! এখন দেখার, রবিবার সভা করলে তিনি সেখানে কী বলেন। ওই সভা তিনি ‘তৃণমূল বিধায়ক’ হিসেবে করেন কি না, দেখার তা-ও।

তবে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর। বস্তুত, শুভেন্দুর সঙ্গে যিনি আলোচনা চালাচ্ছিলেন, দলের সেই প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় এখনও আশাবাদী। তিনি শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেছেন, ‘‘আমি আবার আলোচনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছি না।’’ দলীয় সূত্রে খবর, দলনেত্রী মমতাও চাইছেন না, আলোচনার দরজা একেবারে বন্ধ হয়ে যাক। তিনিও ওই বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, শুভেন্দু মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দেওয়ার পর থেকেই তাঁর শিবিরের একাংশ থেকে বলা হচ্ছে, তাঁর ‘আরএসএস পটভূমিকা’ রয়েছে। নিজস্ব চিত্র

শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, তিনি মন্ত্রী থাকাকালীন বিভিন্ন ‘অরাজনৈতিক’ সভায় যে বক্তব্য জানাচ্ছিলেন, তা নিয়ে দলের অন্দরে বিতর্ক তৈরি হচ্ছিল। বিশেষত, রাজ্যের এক মন্ত্রীর এবং এক সাংসদ বারবার বলছিলেন, শুভেন্দু একদিকে সরকারের বিভিন্ন পদ আঁকড়ে রয়েছেন। অন্যদিকে নানা সভায় নানারকম মন্তব্য করছেন। নির্দিষ্ট কারও নাম না করলেও যা দলের একাধিক নেতার পক্ষে ‘বিড়ম্বনা’ তৈরি করছে। শুভেন্দুকে বিভিন্ন ভাবে ‘ব্যক্তিগত আক্রমণ’ও করা হচ্ছিল। সেই সব ‘কাঁটা’ এড়াতেই তিনি মন্ত্রিত্ব-সহ সমস্ত সরকারি পদ (এইচআরবিসি এবং হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান) ছেড়ে দিয়েছেন। শুভেন্দু-শিবিরের কথায়, ‘‘দাদা যা করার, সরকারি পদ ছেড়ে দিয়েই করবেন। কারণ, মন্ত্রিসভায় এবং বিভিন্ন সরকারি পদে থেকে তিনি বিভিন্ন অরাজনৈতিক কথা বলায় তা নিয়ে দলে অযথা বিতর্ক তৈরি হচ্ছিল। যা উনি চাননি। তাই মন্ত্রিত্ব-সহ সমস্ত সরকারি পদ ছেড়ে দিলেন!’’

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, শুভেন্দু মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দেওয়ার পর থেকেই তাঁর শিবিরের একাংশ থেকে বলা হচ্ছে, তাঁর ‘আরএসএস পটভূমিকা’ রয়েছে। এক শুভেন্দু-অনুগামীর কথায়, ‘‘অনেকেই জানেন না যে, দাদার আরএসএস ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে। উনি ছোটবেলায় তিন শিক্ষাবর্গ আরসএস করেছেন। রাজ্য বিজেপি-র অনেকের চেয়ে তিনি সঙ্ঘ পরিবারের নিয়মনীতি ভাল বোঝেন।’’ আরও বলা হচ্ছে, শুভেন্দু অকৃতদার। তিনি অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করেন। বস্তুত, শুভেন্দু সম্প্রতি একটি জনসভায় নিজেকে ‘পান্তা-খাওয়া, গামছা-পরা ছেলে’ বলে বর্ণনাও করেছেন। অর্থাৎ, তিনি নিজেকে ‘মাটির মানুষ’ বলেই অভিহিত করছেন। পাশাপাশিই তিনি এ-ও বোঝাতে চাইছেন যে, তিনি কোনও ‘অনৈতিক’ কাজ করেন না। দলে থেকে দলের বিরুদ্ধে কোও মন্তব্য করেন না। বস্তুত, মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দেওয়ার পর শুভেন্দু প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি। আপাতত তিনি কোনও মন্তব্য করবেনও না বলে খবর। কারণ, সেক্ষেত্রে ‘দলবিরোধী কার্যকলাপ’-এর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে তৃণমূল। তবে শুভেন্দু নিজেও ‘নীতিগত ভাবে’ বিধায়ক পদে থাকাকালীন কোনও ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ নিতে চান না।

শুভেন্দু সম্প্রতি একটি জনসভায় নিজেকে ‘পান্তা-খাওয়া, গামছা-পরা ছেলে’ বলে বর্ণনাও করেছেন। অর্থাৎ, তিনি নিজেকে ‘মাটির মানুষ’ বলেই অভিহিত করছেন। নিজস্ব চিত্র

শুভেন্দু রাজ্যের তিনটি দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। তাঁর ছেড়ে-যাওয়া দফতরগুলির দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে, তা নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় কালীঘাটের বাড়ি লাগোয়া তাঁর সচিবালয়ে জরুরি বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই বৈঠকে ছিলেন দলের শীর্ষনেতা সুব্রত বক্সি, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস এবং দলের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা। বৈঠকে ঠিক হয়, আপাতত ওই তিনটি দফতর মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই থাকবে। শুভেন্দুর ইস্তফাপত্র রাজ্যপালের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সূত্রের খবর, অতঃপর শুভেন্দু দল ছাড়লে তৃণমূলের তরফে অধিকারী পরিবারের বাকি দুই সাংসদ শিশির এবং দিব্যেন্দুর কাছে তাঁদের অবস্থান জানতে চাওয়া হতে পারে। তৃণমূলের একটি মহল মনে করছে, শুভেন্দুর ইস্তফাপত্র গ্রহণ করা নিয়ে দলের অন্দরে আলোচনার অবকাশ রয়েছে। দলের এক প্রথমসারির নেতার কথায়, ‘‘শুভেন্দু তো এখনও দল ছাড়েনি। দলের বিধায়কও রয়েছে। ফলে আলোচনার অবকাশ এখনও রয়েছে।’’ কিন্তু মন্ত্রিত্ব? ওই নেতার কথায়, ‘‘এখন তো মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই দফতরগুলি রয়েছে। শুভেন্দুর সঙ্গে মিটমাট হয়ে গেলে ওকে আবার দফতর ফিরিয়ে দেওয়া তো কয়েক মিনিটের ব্যাপর। তাতে কোনও অসুবিধা হবে না।’’

শুভেন্দুর আগে দলের অন্দরে ‘বিক্ষোভ’ জানিয়েছিলেন মুকুল রায়। তৃণমূল ছেড়ে তিনি এখন বিজেপি-তে।নিজস্ব চিত্র

আবার অন্য একাংশের মতে, শুভেন্দুর ইস্তফা চূড়ান্ত। বস্তুত, শুভেন্দু ইস্তফাপত্রেই সেটি দ্রুত গ্রহণ করার আবেদন জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। পাশাপাশি, তিনি চিঠির প্রতিলিপি রাজ্যপালকেও পাঠিয়েছিলেন। রাজ্যপাল যেটি পেয়ে টুইট করে জানিয়েছিলেন, তিনি ওই পদত্যাগপত্র নিয়ে ‘সংবিধান মোতাবেক’ ব্যবস্থা নেবেন। যে সূত্রে ওয়াকিবহালরা মনে করছেন, রাজ্যপাল ইস্তফাপত্রের প্রাপ্তিস্বীকার করে ওই বয়ান দেওয়ার পর ইস্তফা ফিরিয়ে নেওয়া বা ওই ধরনের কোনও পরিসর কার্যত নেই।

প্রসঙ্গত, শুভেন্দুর আগে দলের অন্দরে ‘বিক্ষোভ’ জানিয়েছিলেন মুকুল রায়। তৃণমূল ছেড়ে তিনি এখন বিজেপি-তে। দল ছাড়ার আগে মুকুলও রাজ্য সরকারের দেওয়া নিরাপত্তা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তার পর তিনি বিজেপি-তে যোগ দেন। শুভেন্দুর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করায় মুকুল বলেছেন, ‘‘শুভেন্দুর পদত্যাগকে স্বাগত জানাচ্ছি। এই প্রজন্মে শুভেন্দু গণ আন্দোলনের ফসল। ও আমাদের সঙঅগে যোগ দিলে আমাদের পক্ষেও ভাল। ওর পক্ষেও ভাল। শুভেন্দু আমাদের সঙ্গে এলে আমরা সকলে মিলেই ওকে স্বাগত জানাব।’’ আবার শুভেন্দুর মন্ত্রিত্বে ইস্তফাকে তৃণমূলের ‘শেষের সে দিন শুরু’ বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দিলীপের মতে, এই ইস্তফা প্রত্যাশিতই ছিল। দিলীপ বলেন, ‘‘তৃণমূলে কোনও সুস্থ মানুষ থাকতে পারেন না।’’ যার পাল্টা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘মমতা’দি দুটো লাল শালু টাঙিয়ে দিয়েছেন। একটার নাম ‘দুয়ারে দুয়ারে সরকার’। অন্যটার নাম ‘স্বাস্থ্যসাথী’। সেই দুটো লাল শালু দেখে বিজেপি এখন খ্যাপা ষাঁড়ের মতো দৌড়োচ্ছে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Suvendu Adhikari TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy