স্কুলভবন সারাতে কত টাকা লাগবে, সময়সীমা মেনে তার সম্ভাব্য হিসেব পাঠাননি কেউ কেউ। কেন?
স্কুলের বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ টাকা খরচ না-করে অনেকে তা ফেলে রেখেছেন নানান অ্যাকাউন্টে। কেন?
সন্তোষজনক জবাব চেয়ে রাজ্যের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক জেলা স্কুল পরিদর্শক (ডিআই)-এর কাছে ‘শো-কজ’ বা কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠিয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতর। কর্তব্যে গাফিলতির জন্য ডিআই-দের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের হুমকিও দেওয়া হয়েছে দফতরের চিঠিতে।
জনগণেরই টাকা শিক্ষায় ঢালে সরকার। তার হিসেব তারা চাইতেই পারে। চেয়েছেও। কিন্তু স্কুল স্তরে সেই খতিয়ান ঠিক সময়ে না-পাওয়ায় স্কুলশিক্ষা দফতর যে-ব্যবস্থা নিচ্ছে, শিক্ষাজগতের মতে, তা নজিরবিহীন।
ডিআই-দের গণ শো-কজ কেন?
স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, সরকারের এখন বড্ড টানাটানির সংসার। তাই খরচের বিষয়ে যাবতীয় হিসেব তলব করা হচ্ছে। যাতে পড়ে থাকা টাকা দিয়েই পরবর্তী প্রয়োজনীয় কাজগুলো করা যায়। অথচ জেলা স্কুল পরিদর্শকেরা সেই হিসেব দিতে গড়িমসি করে চলেছেন। তাই শো-কজ।
সরকারের এই তৎপরতার পিছনে ভোটের অঙ্কও দেখছেন কিছু সমালোচক। ‘‘এ-সব আসলে কিছুই না। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই ধরনের তৎপরতা দেখিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চাইছে সরকার। তবে এ-সব করে লাভ নেই,’’ বলছেন বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল।
যাঁরা শো-কজের মুখে পড়েছেন, তাঁদেরও অনেকে হতবাক। দু’টি শ্রেণিতে ফেলে তাঁদের কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানো বয়েছে। প্রথমত, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলির মেরামতির জন্য কত টাকা খরচ হতে পারে, তার হিসেব নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কেন জমা দেওয়া হয়নি, কিছু ডিআই-কে তার কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সরকারের টাকা খরচ না-করে কত টাকা ব্যাঙ্কে বা পিএল অ্যাকাউন্টে রাখা আছে, তার হিসেব সময়মতো না-দেওয়ায় জবাব চাওয়া হয়েছে বেশ কয়েক জন জেলার স্কুল পরিদর্শকের কাছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলে মেরামতির খরচ সংক্রান্ত রিপোর্ট ৩ নভেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা স্কুল পরিদর্শকদের কাছে জানতে চেয়েছিল স্কুলশিক্ষা দফতর। রিপোর্ট না-দিলে ৪ নভেম্বর এ বিষয়ে ডাকা বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু যে-সব জেলা স্কুল পরিদর্শককে এ বিষয়ে সোমবার শো-কজ করা হয়েছে, তাঁদের কেউই এই দু’টি কাজের একটিও করেননি। শো-কজের চিঠিতে বলা হয়েছে, তাঁদের জবাব দিতে হবে ১৪ নভেম্বরের মধ্যে।
একই ভাবে পার্সোনাল লেজার অ্যাকাউন্ট (পিএলএ), ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট (ডিএ) এবং অন্যান্য অ্যাকাউন্টে যে-টাকা পড়ে রয়েছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তার হিসেব চেয়েছিল স্কুলশিক্ষা দফতর। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই হিসেব-সহ রিপোর্ট জমা পড়েনি।
স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, গণ-হারে এই ধরনের শো-কজ নোটিস জারির ফলে দেখা যাচ্ছে, কোনও জেলা স্কুল পরিদর্শকই কারণ দর্শানো থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল সারানোর খরচ কত হবে, তার রিপোর্ট জমা দিতে না-পারায় যাঁদের শো-কজ করা হয়েছে, তাঁদের তালিকায় কলকাতার প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্তরের কোনও স্কুল পরিদর্শকই নেই। কিন্তু পিএলএ এবং ডিএ-তে পড়ে থাকা অব্যবহৃত টাকার হিসেব যাঁরা দেননি, সেই তালিকায় কলকাতার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ডিআই-রা আছেন।
হিসেব জমা পড়েনি কেন?
প্রাথমিক স্তরের এক জেলা স্কুল পরিদর্শক জানান, পুজোর ছুটির জন্য সমস্ত হিসেব করা হয়ে ওঠেনি। দফতরকে সে-কথা জানানোও হয়েছিল। তার পরেও কেন শো-কজ, সেটা তাঁর বোধগম্য হচ্ছে না। মাধ্যমিক স্তরের এক ডিআই বলেন, ‘‘আমার জেলার সব হিসেবই আমি দিয়েছি। তার পরেও তালিকায় আমার জেলার নাম কেন রাখা হল, বুঝতে পারছি না। অবাক লাগছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy