—ফাইল চিত্র।
জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার ‘উদ্যোগ’ ঘিরে অভিযোগ-বিতর্ক হায়দরাবাদ থেকে পৌঁছে গেল বঙ্গেও। হিন্দি পক্ষ উদ্যাপন করতে গিয়ে হায়দারাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথের নাম করে ভুল উদ্ধৃতি ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক বেধেছিল কিছু দিন আগে। হিন্দি দিবস উদ্যাপনের উদ্দেশ্যে হিন্দিতে স্লোগান লেখা প্রতিযোগিতা নিয়ে এ বার বিতর্ক শুরু হল শিবপুর আইআইইএসটি-তে।
আইআইইএসটি-র সোসাইটি অব মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার থেকে শনিবার পড়ুয়াদের কাছে হিন্দিতে লেখা একটি ই-মেলে জানানো হয়, হিন্দি দিবস উদ্যাপনের অঙ্গ হিসেবে সেনাদের উদ্দেশে ‘ভারত কে বীর’ বিষয়ে হিন্দিতে স্লোগান প্রতিযোগিতা হবে। অহিন্দিভাষী পড়ুয়ারা ই-মেলেই এর প্রতিবাদ করেন। বেশ কিছু পড়ুয়া জানিয়ে দেন, দেশের স্বীকৃত সব ভাষায় স্লোগান লেখার কথা উল্লেখ করা উচিত ছিল। অনেকে হিন্দিতে লেখা ওই মেল পড়তেই পারেননি বলে জানিয়ে দেন। ওই প্রতিষ্ঠান সূত্রের খবর, এক বাঙালি পড়ুয়া লেখেন, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষচন্দ্র বসু, জগদীশচন্দ্র বসু, সত্যজিৎ রায়ের বাংলায় এ ভাবে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ মেনে নেওয়া যায় না। তাঁর প্রস্তাব ছিল, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হোক।
এই তর্কবিতর্কের মধ্যেই ওই সোসাইটির কর্তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা পার্থসারথি চক্রবর্তীর স্বাক্ষরিত একটি হিন্দি বিজ্ঞপ্তি দেখান। তাতে তিনি লিখেছেন, এই কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিন্দির প্রসার ঘটানো উচিত। অধিকর্তা সইও করেছেন হিন্দিতে। অভিযোগ, এর মধ্যেই এক হিন্দিভাষী আপত্তিকর ভাষায় মেল পাঠান। তাতে ছিল হুমকির সুর।
সম্প্রতি হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ‘হিন্দি পাখওয়াড়া’ (পক্ষ) উদ্যাপনের একটি পোস্টারে রবীন্দ্র-উদ্ধৃতি বলে হিন্দিতে লেখা হয়েছিল, ‘ভারতীয় ভাষাগুলি নদী। হিন্দি মহানদী।’ রবীন্দ্রনাথ ঠিক কবে, কখন, কোথায় এই কথাগুলি বলেছিলেন বা লিখেছিলেন, রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞেরাও তা বলতে পারেননি। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পি সর্দার সিংহ জানান, ওই ‘রবীন্দ্র-উদ্ধৃতি’ আছে কেন্দ্রীয় নির্দেশিকায় এবং তা মেনেই সব কিছু করা হয়েছে। তথাকথিত ‘রবীন্দ্র-উদ্ধৃতি’ নিয়ে সেই বিতর্কের নিরসন হয়নি এখনও।
এর মধ্যেই আইআইইএসটি-তে হিন্দিতে স্লোগান লেখার বিজ্ঞপ্তি ঘিরে হিন্দি চাপানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠছে। এই বিষয়ে বর্তমান পড়ুয়াদের পাশাপাশি আপত্তি তুলেছেন অনেক প্রাক্তনীও। তাঁদের কয়েক জন এই নিয়ে ই-মেল পাঠান। ১৯৮০ সালে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পাশ করা অঞ্জন মুখোপাধ্যায় রবিবার বলেন, ‘‘হিন্দি সরকারি ভাষা হতে পারে। কিন্তু জোর করে তা চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়টি কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সরকারি ভাষা সংক্রান্ত বিধিতে বাংলা তথা পশ্চিমবঙ্গ পড়ে ‘সি’ বিভাগে। সেখানে এ ভাবে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া যায় না।’’ তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, আইআইইএসটি-র মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠা দেশের বিভিন্ন প্রদেশের বহু ভাষাভাষী পড়ুয়ারা আছেন। এমন প্রতিষ্ঠানে জোর করে হিন্দি চাপানোর চেষ্টা হলে তাঁরা প্রতিবাদ করবেন।
এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে আইআইইএসটি-র অধিকর্তা পার্থসারথিবাবু বলেন, ‘‘এগুলো নেহাতই ছেলেমানুষি! কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানে হিন্দি প্রসারের কথা কেন্দ্রীয় সরকারের বিধিতেই আছে। এরা (প্রতিবাদী পড়ুয়ারা) বাংলার বাইরে যায়নি। তাই এ-সব বিষয় নিয়ে ছেলেমানুষি করে যাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy