প্রতীকী চিত্র।
মস্ত একটা ঝড় আসবে শুনছি ক’দিন ধরেই। রবিবার প্রশাসনের লোকজন বলে গেল, ‘আপনাদের মাটির বাড়ি। তাড়াতাড়ি আশ্রয় শিবিরে চলে যান’।
শঙ্করপুর আর তাজপুরের মাঝে মেরিন ড্রাইভের উল্টো দিকেই বাপ-ঠাকুরদার ভিটে। জলের ধারে বাস। বারোমাসই চিন্তা নিয়ে ঘর করি। গেল বচ্ছর আমপানের ধাক্কায় ৬০ বছরের পুরনো মাটির দো’তলা বাড়িটা টলে গিয়েছিল। ক্ষতি হয়েছিল বিস্তর। তবে ক্ষতিপূরণ জুটেছিল পাঁচ হাজার টাকা। তা দিয়ে সদর দরজাটুকুও এত দিনে মেরামত করতে পারিনি। তাই ‘ইয়াস’ ঝড় থেকে বাঁচতে আশ্রয় শিবিরে যাওয়ার আগে যতটা গোছগাছ করে নেওয়া যায় করছিলাম স্বামী-স্ত্রীয়ে মিলে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটা হবে। আকাশ বেশ পরিষ্কার। রোদ ছিল। ভাবলাম, হয়তো বড় বিপদ হবে না। সময় নিয়েই জরুরি কাগজপত্র, বিছানা-বালিশ, চালের বস্তা গোছাচ্ছিলাম। হঠাৎ শুনি সমুদ্র ডাকছে। বাইরে বেরনোর আগেই তুমুল গর্জন, মাটির দেওয়ালে আছড়ে পড়ছে ঢেউ। বুঝলাম জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীতে বাইরে বেরিয়ে দেখি, বোল্ডার, কালো পাথর ছড়িয়ে রয়েছে। রাশি রাশি বালি উড়ে আসছে। দক্ষিণমুখী খোলা বারান্দা প্রায় ৩-৪ ফুট বালি আর পাথরের নীচে চাপা পড়েছে।
দু’জনে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসি। ১৮ বছরের ছেলেটাকে আগেই একটা ত্রাণ শিবিরে পাঠিয়েছি। আর মেয়েটা গিয়েছে কিছুটা দূরে লছিমপুরের সরকারি আশ্রয় শিবিরে। দুপুর নাগাদ জলোচ্ছ্বাস কিছুটা কমতে ভেতরে ফের এলাম বাড়িতে। ততক্ষণে মিটার বক্সের পাশের দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। সদর দরজার দেওয়ালও ক্ষতিগ্রস্ত। অভাবের সংসার আমাদের। অন্যের নৌকোয় মাছ ধরে যা উপার্জন করি, তা দিয়েই চারজনের সংসার কোনওমতে চলে যায়। ছেলেটা পড়াশোনার পাট চুকিয়ে যাও বা শঙ্করপুরের একটা হোটেলে কাজ করতে গিয়েছিল, লকডাউনে সেই কাজও চলে গিয়েছে।
বিপর্যস্ত জীবনে ‘ইয়াস’-এর ধাক্কা লাগার আগে স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে শেষ সম্বল বাড়িটুকু বাঁচানোর চেষ্টা করছিলাম। কোদাল দিয়ে বারান্দায় জমে থাকা বালি আর পাথর সরিয়ে বড় পাত্রে রাখছি, তখনই প্রশাসনের আধিকারিকেরা এসে জানালেন, আধ ঘণ্টার মধ্যে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে হবে। এত কম সময়ে বাড়ি বাঁচাব না কি চাল-ডাল! বাধ্য হয়েই মেয়েকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ডেকে নিয়ে এলাম। দিনভর পেটে কিছু পড়েনি। বাড়িটুকু শেষ ভরসা। ঝড়ের আগে সমুদ্রই বুঝি তা শেষ করে দিল!
(লেখক মৎস্যজীবী)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy