জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে টুইট করলেন অপর্ণা সেন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজনীতির পারদ গত কয়েক দিন ধরেই চড়ছিল। জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ড নিয়ে তৃণমূল-বিজেপিতে শুরু হয়েছিল জোর চাপানউতোর। বিজেপি নেতারা আক্রমণ করতে শুরু করেছিলেন বিদ্বজনদেরও। সেই বিজেপি-কে এ বার কিছুটা চমকে দিয়েই শুক্রবার মুখ খুললেন অপর্ণা সেন। আরএসএস সদস্যের পরিবারের এই ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড ‘আমাদের লজ্জা’— মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে টুইটারে এ কথাই লিখলেন তিনি।
মঙ্গলবার অর্থাৎ দশমীর দিন জিয়াগঞ্জে নিজের বাড়িতে খুন হন প্রাথমিক শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল। তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী এবং শিশুপুত্রকেও খুন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্র আগেই টুইট করেছিলেন। মুখ খুলেছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ। বৃহস্পতিবার আরও একটি খুনের কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরে সরব হন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়ও। ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘‘নদিয়ায় সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক হিন্দু পুরোহিত তথা বিজেপি কর্মীকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে। গত ৪ দিনে ৮ জনকে খুন করা হল। পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলা এখন একটা দুঃখজনক রসিকতা।’’ এতেই থামেননি বাবুল। নাম না করে বাংলার বিদ্বজনদেরও নিশানা করেন তিনি। বাবুল লেখেন, ‘‘এই ভয়াবহ খুনগুলোর ক্ষেত্রে তথাকথিত উদারবাদীরা নীরব দর্শকের ভূমিকায় কেন? বাংলার মানুষ প্রতিশোধ নেবেন। অপেক্ষা করুন এবং দেখতে থাকুন।’’
আরও পড়ুন: গৃহযুদ্ধ অবসানে ভূমিকা, নোবেল শান্তি পুরস্কার পাচ্ছেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী
এর পরে আজই সামনে এল অভিনেতা তথা চলচ্চিত্রকার অপর্ণা সেনের প্রতিবাদ। টুইটারে এ দিন অপর্ণা লিখলেন, ‘‘আরএসএস সদস্যের অন্তঃসত্বা স্ত্রী এবং শিশুকে হত্যা করা হল আমাদের পশ্চিমবঙ্গে! এই বীভৎস কাজের কারণ যাই হোক, এ আমাদের লজ্জা!’’ টুইটারে সরাসরি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে সম্বোধন করে অপর্ণা লিখেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মহোদয়া! দয়া করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করুন! রাজনৈতিক মত নির্বিশেষে পশ্চিমবঙ্গের সব নাগরিকের দায়িত্ব আপনার। আপনি সবার মুখ্যমন্ত্রী!’’
আরও পড়ুন: বাংলায় কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি নিয়ে রাষ্ট্রপতি-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে যাচ্ছে বিজেপি
শিল্পী থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা বাবুলের আক্রমণের কারণেই অপর্ণা সেন এই টুইট করলেন, এমনটা হয়তো নয়। বাংলার সুশীল সমাজকে বিজেপি তীব্র আক্রমণ করছে বলে অপর্ণা এ বার আরএসএস সদস্যের খুন নিয়েও মুখ খুলতে বাধ্য হলেন— এমন তত্ত্বও কেউ এখনও খাড়া করেননি। কিন্তু অপর্ণা সেনের এই টুইট বিজেপির অনেক নেতাকেও চমকে দিয়েছে। বিস্মিত তৃণমূলের একাংশও। তবে তৃণমূলের তরফে এখনও কেউ অপর্ণার টুইট নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।
অপর্ণা সেন বরাবরাই তৃণমূলের হয়ে কথা বলেন, এমন কিন্তু নয়। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে বামেদের বিরুদ্ধে অপর্ণারা অনেকেই পথে নামায় তৃণমূলের সুবিধা হয়েছিল ঠিকই। তাতে অপর্ণারা তৎকালীন শাসকের বিরাগভাজনও হয়েছিলেন। কিন্তু পরে কোনও কোনও ইস্যুতে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধেও তাঁকে মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে। তখন তৃণমূল শিবির থেকে তীব্র আক্রমণের শিকার হন। লোকসভা ভোটের পরে ভাটপাড়া-ব্যারাকপুর অঞ্চলের হিংসা থামাতে তৎপর হন অপর্ণা-সহ বেশ কিছু বিশিষ্ট জন। তাঁরা ভাটপাড়ায় যান, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তা নিয়ে একাধিক বার বৈঠক করেন। তার জেরে গেরুয়া শিবিরের রোষানলে পড়েন। অসহিষ্ণুতা এবং গণপ্রহারের বিরুদ্ধে বার বার মুখ খোলা বা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে প্রতিবাদ জানানো— এই সব ইস্যুতেও অপর্ণা সেনরা সম্প্রতি বিজেপির তীব্র আক্রমণের শিকার হচ্ছিলেন। এমন একটা সময়ে আরএসএস সদস্যের গোটা পরিবারকে হত্যা করার ঘটনা নিয়েও অপর্ণা সরব হবেন, বিজেপির অনেক নেতা তেমনটা ভাবতে পারেননি।
পুলিশ এখনও জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রাজনৈতিক বা সাম্প্রদায়িক যোগ খুঁজে পায়নি। কিন্তু বিজেপি সে কথা মানতে নারাজ। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু শুক্রবার আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে জেহাদিদের হাত থাকতে পারে, বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের যোগ থাকতে পারে। কিন্তু পুলিশ সে সব কথা ভুলেও উচ্চারণ করছে না।’’ সায়ন্তনের কথায়, ‘‘রাজনৈতিক খুন হলেই পুলিশ আজকাল বলে, সম্পর্কের টানাপড়েন ছিল, আর্থিক লেনদেনে গন্ডগোল ছিল, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ ছিল। এগুলো একটাও পরে আদালতে গিয়ে ধোপে টেকে না। কিন্তু পুলিশ আসল ঘটনা ধামাচাপা দিতে প্রত্যেকটা রাজনৈতিক খুনের ক্ষেত্রে এই কথাগুলোই বলতে থাকে।’’
জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিজেপির বয়ান যতটা চড়া, আরএসএসের কিন্তু ততটা নয়। সঙ্ঘের দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের মুখপাত্র বিপ্লব রায়ের কথায়, ‘‘৬-৭ মাস আগে বন্ধুপ্রকাশ পাল স্বয়ংসেবক হয়েছিলেন। কিন্তু তার সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের কোনও যোগ রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।’’ সঙ্ঘের এই বয়ান নিঃসন্দেহে বিজেপির পক্ষে অস্বস্তিকর। কিন্তু বিদ্বজ্জনদের যে অংশকে বিজেপি নেতারা সম্প্রতি তীব্র আক্রমণে বিঁধছিলেন, তাঁদেরই একজন এ দিন বন্ধুপ্রকাশকে ‘আরএসএস সদস্য’ হিসেবে উল্লেখ করে হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করায় অস্বস্তি বেড়েছে তৃণমূলেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy