শাহজাহান শেখ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
৫৬ দিন ধরে ‘নিখোঁজ’ ছিলেন সন্দেশখালির ‘বাঘ’ শাহজাহান শেখ। তবে নিখোঁজ হলেও নিজের নিরাপদ ঘেরাটোপ ছেড়ে বেরোননি। সূত্রের খবর, শাহজাহানের খাস ঘাঁটি সন্দেশখালিতে যখন তাঁর গ্রেফতারি চেয়ে রাস্তায় নেমেছেন মহিলারা, তখন সেই সন্দেশখালিতেই লুকিয়েছিলেন শাহজাহান। এমনকি, যে বিতর্কিত ‘আলাঘর’-এ গ্রামের মহিলাদের ডেকে অত্যাচার করার অভিযোগ উঠেছে শাহজাহান এবং তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে, সেই ‘আলাঘর’-এও লুকিয়ে রাত কাটিয়েছিলেন সন্দেশখালির শেখ!
প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলল সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন শাহজাহান। তাঁকে জেরা করে নানা বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানার চেষ্টা করছেন সিবিআই গোয়েন্দারা। সিবিআই সূত্রে খবর, জেরায় গোয়েন্দাদের কাছে নিজের গতিবিধি সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন শাহজাহান। তার মধ্যে ওই ৫৬ দিনে কখন কোথায় ছিলেন, সেই সংক্রান্ত তথ্যও রয়েছে।
সিবিআইয়ের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, শাহজাহান জেরায় বলেছেন, ওই ৫৬ দিন ধরে তিনি সন্দেশখালিরই বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়িয়েছেন। কোনও একটি জায়গায় থিতু না হয়ে বার বার বদলেছেন আশ্রয়। কিন্তু যেখানেই যান সন্দেশখালির নিরাপদ ডেরা ছেড়ে বেরোননি।
গত ৫ জানুয়ারি শাহজাহানের গ্রামে ইডির আধিকারিকেরা আক্রান্ত হওয়ার সময় থেকেই নিখোঁজ ছিলেন শাহজাহান। তার পর থেকে প্রায় দু’মাস তাঁর দেখা মেলেনি। শাহজাহানকে ধরতে লুক আউট নোটিসও জারি করেছিল ইডি। তবু খুঁজে পাওয়া যায়নি তাঁকে। যদিও পরে আদালতে এই ‘নিখোঁজ’ শাহজাহানই আগাম জামিনের আবেদন করেছেন। এমনকি, তার জন্য তাঁর সইয়ের দরকার হলে, সেই সইও সংগ্রহ করে এনেছেন শাহজাহানের আইনজীবী। সেই সময় থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, তবে কি চোখের সামনে থেকেও আড়ালে রয়েছেন শাহজাহান? শাহজাহানকে হেফাজতে পাওয়ার পর থেকে সিবিআইও সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছিল।
সূত্রের খবর, সিবিআই শাহজাহানকে নানা প্রশ্ন করে জানতে পেরেছে, প্রায় দু’মাসের দীর্ঘ সময়ক্রম ঠিক কোথায় কোথায় লুকিয়ে থেকেছিলেন শাহজাহান। শাহজাহানের মুখের কথায় পুরোপুরি বিশ্বাস না করলেও সেই জেরা থেকেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা এমনও জানতে পেরেছেন যে, শাহজাহান তাঁর অজ্ঞাতবাসে ঠাঁই নিয়েছিলেন সন্দেশখালির বহু বিতর্কিত ‘আলাঘরে’ও।
সন্দেশখালিতে অশান্তি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছিল এই ‘আলাঘর’-এর নাম। সাধারণত মাছের ভেড়িতে থাকে এই ধরনের ‘আলাঘর’। অস্থায়ী বাঁশ, টিন, অ্যাজবেস্টসে তৈরি নির্জন এলাকায় থাকা এই ধরনের ‘আলাঘর’-এই মহিলাদের ডেকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল শাহজাহান-সহ তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন সন্দেশখালির মহিলাদের একাংশ। শাহজাহান এবং তাঁর শাগরেদদের গ্রেফতারি চেয়ে আন্দোলনে নামেন তাঁরা। এমনকি, এই আন্দোলন চলাকালীন সন্দেশখালির এমনই একটি ‘আলাঘর’ জ্বালিয়েও দেওয়া হয়। সেই ‘আলাঘর’ ছিল শাহজাহানেরই ভাই সিরাজউদ্দিনের মাছের ভেড়ি সংলগ্ন।
সিবিআই সূত্রে খবর, শাহজাহান তাঁর অজ্ঞাতবাসে একা ছিলেন না। বিশ্বস্ত শাগরেদদের সঙ্গে নিয়েই এক আশ্রয় থেকে অন্য আশ্রয়ে লুকিয়ে পালিয়ে বেরিয়েছেন তিনি। তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য এই ধরনের ‘অপরাধী’রা সাধারণত নিজের এলাকা ছেড়ে চট করে বেরোন না। কারণ, নিজের এলাকা তাঁদের কাছে হাতের তালুর মতো চেনা। সেখানে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় ডেরা বদলাতেও সুবিধা হত। সুবিধা হত লোকচক্ষু এড়িয়ে সেই কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রেও। সিবিআই তদন্তে এমনও অনুমান যে, শাহজাহান কোনও আশ্রয়েই খুব বেশি থাকেননি। এ ভাবে অন্তত ১০টি জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, শাহজাহানকে গত ২৯ জানুয়ারি যখন গ্রেফতার করা হয়, তখনও তিনি ছিলেন মিনাখাঁয়। অর্থাৎ, সন্দেশখালি থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে।
তবে আপাতত শাহজাহান তাঁর গতিবিধি নিয়ে যা বলছেন, তা অন্ধ ভাবে মেনে নিচ্ছেন না কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সিবিআই সূত্রে খবর, শাহজাহান কোথায় কোথায় বা কার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তা চিহ্নিত করে সেই সমস্ত পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকি, শাহজাহান তাঁর কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়েছিলেন কি না, তা-ও বোঝার চেষ্টা করছে সিবিআই। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক জনকে ডেকেও পাঠিয়েছে সিবিআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy