(বাঁ দিকে) শাহাজাহান শেখ, ফিরহাদ হাকিম। —ফাইল চিত্র।
সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ কোথায়? এ নিয়ে বিবিধ দাবি শোনা গেলেও ইডি আধিকারিকদের মার খাওয়ার ২৩ দিন পরেও তাঁর খোঁজ মেলেনি। সেই আবহেই কিন্তু নিখোঁজ শাহজাহানের কড়া সমালোচনা করলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এর আগে পর্যন্ত শাহজাহানের এত কঠোর সমালোচনা তৃণমূলের কোনও বড় মাপের নেতার মুখে প্রকাশ্যে শোনা যায়নি। সে অর্থে ফিরহাদই প্রথম!
শনিবার সিরিটি শ্মশানে একটি কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন ফিরহাদ (ববি)। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘শাহজাহান যা করেছে অন্যায় করেছে। আমি গণমাধ্যমে দেখেছি, মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারি আধিকারিকদের। যেটা করেছে, নিশ্চিত করে বলছি, অন্যায় করেছে!’’
হঠাৎ কেন এত দিন পর শাহজাহানের প্রকাশ্য সমালোচনা করলেন শাসকদলের দাপুটে এক নেতা? তার কোনও প্রকাশ্য ব্যাখ্যা মেলেনি। তবে তৃণমূলের মধ্যে গুঞ্জন, ইডির বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ শাহজাহান কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার সামনে হাজির হতে পারেন। অনেকের মতে, সেটা বুঝেই ববি আগেভাগে শাহজাহানের সমালোচনা করে রাখলেন। সম্প্রতি শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশির পরে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সেখানে নোটিস সেঁটে এসেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ২৯ জানুয়ারির মধ্যে তাঁকে ইডির সামনে হাজিরা দিতে হবে। সেই দিন আগামী সোমবার। তৃণমূলের মধ্যে জল্পনা, সেই দিনই শাহজাহান অন্তরাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।
রেশন দুর্নীতির তদন্ত সূত্রে গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহানের বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি। সেখানে পৌঁছে তারা বিক্ষোভের মুখে পড়ে। গ্রামবাসীদের হাতে বেধড়ক মার খেয়ে ইডির তদন্তকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। মার খান সাংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও। ইডির তিন আধিকারিককে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। তাঁদের মধ্যে এক জনের চোট ছিল গুরুতর। ওই দিন শাহজাহানের দেখা মেলেনি। ইডির দাবি, শাহজাহানের বাড়ির সামনে জড়ো হয়েছিলেন ৮০০ থেকে ১০০০ লোক। সকলেই তৃণমূল নেতার ‘অনুগামী’।
ওই ঘটনার পরে তৃণমূলের তরফে কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘অনভিপ্রেত ঘটনা।’’ পাশাপাশি, শাসকদল এ-ও প্রশ্ন তুলেছিল যে, কেন স্থানীয় প্রশাসনকে অন্ধকারে রেখে সন্দেশখালিতে অভিযান চালাল ইডি? কিন্তু শাহজাহানের সমালোচনা করে কোনও নেতাই বিবৃতি দেননি। সেই দিক থেকে ববির শনিবারের প্রতিক্রিয়া ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। কারণ, ববি শুধু রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীই নন। তিনি তৃণমূলের অন্দরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আস্থাভাজন’ও বটে। ফলে ববির সমালোচনার মধ্যে কেউ কেউ মুখ্যমন্ত্রীর ‘মনোভাব’ও পড়তে চাইছেন।
মার খেয়ে ফেরার ২০ দিনের মাথায় গত বুধবার আবার সন্দেশখালিতে গিয়েছিল ইডি। সেখানে ছিল রাজ্যপুলিশও। যদিও সবই হয়েছিল আদালতের নির্দেশে। স্থানীয় পুলিশের প্রহরায় এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে তালা ভেঙে শাহজাহানের বাড়িতে ঢোকে ইডি। সেই অভিযানের পর তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছিল, ‘‘আগের দিনও যদি ইডি স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়ে যেত, তা হলে ওই ঘটনা ঘটত না।’’ সে দিনই শাহজাহানের বাড়িতে নোটিস সাঁটিয়ে ইডি জানান এসেছিল, পাঁচ দিনের মধ্যে শাহজাহানকে হাজিরা দিতে হবে। সোমবার শেষ হচ্ছে সেই সময়সীমা।
এর মধ্যে শাহজাহানের গতিবিধি নিয়ে নানা জনে নানা কথা বলেছেন। প্রথমে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বলেছিলেন, শাহজাহান মায়ানমার পালিয়ে গিয়েছেন। তার দু’দিন পরেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন, সরবেড়িয়া থেকে ধামাখালির মধ্যে ভেড়ির মাঝে রয়েছেন শাহজাহান। স্থানীয় এক সিপিএম নেতা বলেছেন, শাহজাহানকে তিনি সরবেড়িয়া পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতে ঢুকতে দেখেছেন। আবার রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি বলেছিলেন, ‘‘শেখ শাহজাহান চিকিৎসার জন্য বাইরে গিয়েছেন। উনি অসুস্থ ছিলেন। তবে এখন কোথায় আছেন, নিশ্চিত ভাবে পুলিশ তা খুঁজে বার করবে।’’ তার মধ্যে আবার অন্তরাল থেকে শাহজাহানের একটি ‘অডিয়োবার্তা’ প্রকাশ্যে আসে। যেখানে শাহজাহান বলছেন, তিনি কোনও অন্যায় করেননি। শনিবার পর্যন্ত পুলিশ বা ইডি শাহজাহানের হদিস পায়নি। সেই কৌতূহলের মধ্যেই শাহজাহানের কড়া সমালোচনা করে নতুন জল্পনা তৈরি করে দিলেন ববি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy