মাঠে বল পায়েও দক্ষ মিমোসা।
বৃহস্পতিবারের পরে অনেকেই রসিকতা করে বলছেন, তিনি এখন ‘প্রেসিডেন্সির প্রেসিডেন্ট’। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এ বার জিতেছে এসএফআই।
ছাত্র সংসদের সভানেত্রী (প্রেসিডেন্ট) পদে নির্বাচিত মিমোসা ঘোড়াইয়ের জন্ম কিন্তু দীর্ঘদিনের কংগ্রেসের ‘গড়’ পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের সুন্দরপুরে। আর মিমোসার বেড়ে ওঠা তৃণমূলের ‘অধিকারী গড়’ কাঁথি শহরে।
বাম-বিরোধী রাজনীতির আঁতুড়ঘরে থেকেও বামপন্থী রাজনীতির হাতেখড়িটা মিমোসার হয়েছিল ঘরেই। বাবা বসন্ত ঘরাই এসএফআইয়ের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট সম্পাদক ছিলেন। ২০০৭ সালে কাঁথি-১ ব্লকের নয়াপুট সুধীরকুমার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হওয়ার পরে সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র সঙ্গে যুক্ত তিনি। মা স্বপ্নারানি মণ্ডল কাঁথির চন্দ্রামণি ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়ে ইতিহাসের শিক্ষিকা। তিনিও ২০১০ সালে কাঁথির পুরভোটে বর্তমান বিধায়ক বনশ্রী মাইতির বিরুদ্ধে নির্দল হিসেবে লড়েছিলেন।
সব মিলিয়ে রাজনীতি, ভোটের আবহেই মিমোসার বেড়ে ওঠা। মিমোসা মানছেন, ‘‘বাবা কীভাবে মানুষের জন্য কাজ করে সেটা ছোট থেকে দেখেছি। প্রেসিডেন্সির ক্যাম্পাসে এসে আমার মনে হয়েছে, একমাত্র এসএফআই হল সেই ছাত্র সংগঠন যারা ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করে। সেই ভালবাসা থেকেই সক্রিয় ছাত্র রাজনীতিতে আসা। বাবা-মাও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যকে শব্দ-পুলিশ নিয়োগের নির্দেশ আদালতের
তিনি ২০১৬ সালে জীবনবিজ্ঞান নিয়ে প্রেসিডেন্সিতে ভর্তি হন কাঁথির চন্দ্রামণি ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়ের এই কৃতী। প্রথম বর্ষে পড়াকালীনই ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সি আর (শ্রেণি প্রতিনিধি) পদে জেতেন। এখন তিনি স্নাতকোত্তরের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। থাকেন সল্টলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হস্টেলে।
লাতিনে মিমোসা শব্দের অর্থ লজ্জাবতী লতা। মিমোসা অবশ্য নামের সঙ্গে সুবিচার করেননি। তিনি রীতিমতো দাপুটে। পড়াশোনা, ছাত্র রাজনীতিতে উজ্জ্বল উপস্থিতির পাশাপাশি তিনি দাপিয়ে বেড়ান ক্রিকেট, ফুটবল মাঠে। সেখানেও তিনি দক্ষ সংগঠক। মিমোসার কথায়, ‘‘খেলাধুলো ভালবাসি। ক্রিকেট, ফুটবল খেলতে দারুণ লাগে।’’ ভাল লাগে নাটকও। মিমোসার কথায়, ‘‘কাঁথিতে স্কুলের অনুষ্ঠানে নাচ-গান করেছি। ওখানে নাটকের ততটা সুযোগ ছিল না। কলকাতায় এসে নাটকের দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। এই পুজোতেও নাটক করেছি।’’ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত এক ফ্যাশন শো-তে যোগ দিয়েও পুরস্কৃত হয়েছেন তিনি।
সব ক্ষেত্রে কৃতিত্বের ছাপ রাখা মেদিনীপুরের এই মেয়ে যেন আক্ষরিকই ‘প্রেসিডেন্সিয়ান’। তাঁকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে মেদিনীপুরের মাটিও। অবিভক্ত মেদিনীপুর থেকেই বামপন্থী রাজনীতির আঙিনা সমৃদ্ধ করেছেন ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত, গীতা মুখোপাধ্যায়, গুরুদাস দাশগুপ্তের মতো নেতা-নেত্রীরা। মিমোসা প্রতিকূল সময়েই লাল নিশান ধরেছেন। তাই জয়ের পরেও আবেগেও ভাসছেন না তিনি। বলছেন, ‘‘পূর্বসূরিদের আদর্শ পাথেয় করেই আমরা লড়ব। এই জয় দায়িত্ব অনেক বাড়িয়ে দিল।’’ আপাতত ক্যাম্পাসের পরিকাঠামো উন্নয়নই যে তাঁর লক্ষ্য, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন এসএফআইয়ের এই নতুন মুখ।
আরও পড়ুন: হেরাল্ডকে দফতর ছাড়ার নির্দেশ দিল্লি হাইকোর্টের
এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যও বলছেন, ‘‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বামপন্থাই যে আশ্রয়, মিমোসারা আবার তা প্রমাণ করে দিলেন। যথাযথ ভোট হলে রাজ্যের অধিকাংশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েই এই ফল হবে।’’
(সহ-প্রতিবেদন: বরুণ দে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy