Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Lodha Tribe

উচ্চশিক্ষিত লোধা, শবররা ফিরছেন সাবেক পেশাতেই

এই সম্প্রদায়ের শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের কেউ এখন বাঁশ কাটছেন, কেউ জঙ্গল থেকে কন্দমূল তুলে বিক্রি করছেন, কারও ভরসা দিনমজুরি।

বিশ্বসিন্ধু দে
কেশিয়াড়ি শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২২ ০৮:৩৩
Share: Save:

এ বার মেদিনীপুরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোধা-শবরদের উন্নয়নে বিশেষ জোর দিয়ে গিয়েছেন। তবে বাস্তব হল, পিছিয়ে পড়া এই সম্প্রদায়ের শিক্ষিত যুবক-যুবতীরাও চাকরি পাচ্ছেন না। ফলে, উত্তরণের পথে এগিয়েও থমকে যেতে হচ্ছে তাঁদের। বাড়ছে ক্ষোভ।

শিক্ষার আলো তাদের সম্প্রদায়ে পৌঁছয়নি সে ভাবে। সমাজের মূল স্রোত থেকে এখনও অনেকটাই পিছিয়ে লোধা-শবররা। তবে আঁধার ঘুচিয়ে এগিয়েও এসেছেন অনেকে। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার প্রায় ২৯জন যুবক-যুবতীর কেউ স্নাতক, কেউ স্নাতকোত্তর, কেউ আবার বিশেষ শিক্ষায় শিক্ষিত। তবে বয়েস পেরিয়ে যাওয়ার মুখেও চাকরি মেলেনি। ফলে তাঁদের ফিরতে হচ্ছে পরম্পরার পেশায়। ওই শিক্ষিত লোধা-শবর যুবক-যুবতীদের বক্তব্য, চাকরি না জোটায় সমাজ কথা শোনাচ্ছে।আর বর্তমান প্রজন্ম শিক্ষা থেকে মুখ ফেরাচ্ছে।

অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা লোধা-শবর কল্যাণ সমিতি ইতিমধ্যেই সম্প্রদায়ের কতজন শিক্ষিত হয়েছেন তার তালিকা করেছে। সেই তালিকা জেলাশাসকের দফতরে দেওয়া হয়েছে। গত ১৭ মে মেদিনীপুরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভায় জেলা লোধা-শবর কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বলাইচন্দ্র নায়েক তাঁদের সম্প্রদায়ের শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের দুরবস্থার কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন। বলাই বলছেন, ‘‘লোধা সম্প্রদায় পড়াশোনায় পিছিয়ে। যারা এগিয়েছে তারা চাকরি না পেয়ে হতাশ হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি বিবেচনার জন্য জানিয়েছি।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমলের বক্তব্য, ‘‘চাকরির জন্য আবেদন করতে হবে। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। ওদের তো সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। এরপরেও যদি প্রয়োজন হয় দরকার বুঝে নিয়ে বিশেষ কোনও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় কিনা দেখা হচ্ছে।’’

এই সম্প্রদায়ের শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের কেউ এখন বাঁশ কাটছেন, কেউ জঙ্গল থেকে কন্দমূল তুলে বিক্রি করছেন, কারও ভরসা দিনমজুরি। নারায়ণগড়, কেশিয়াড়ি, খড়্গপুর, ডেবরা, দাঁতনের অনেক লোধা-শবরই কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়েছেন। তবে চেষ্টা করেও চাকরি জোটেনি। কেশিয়াড়ি ব্লকের হাবু প্রামাণিক, অনিল কোটাল, অনুপ মল্লিক, অতনু নায়েক, সুনীল কোটাল, শান্তনু নায়েক থেকে শুরু করে নারায়ণগড়ের রাহুল কোটাল, দীপক বাগ, সমর কোটাল, তাপস প্রামানিক, অনুপ দিগার, সৌরভ নায়েক, মোহন নায়েকরা তাই হতাশ। কেশিয়াড়ির হাবু প্রামানিক, সুনীল কোটালদের বক্তব্য, ‘‘বয়স চলে যাচ্ছে। চাকরি পেলাম না। সংসার টানতে বাঁশ কেটে দূরে গিয়ে বাজারে বিক্রি করতে হয়। আবার কখনও গাছের মূল বিক্রি করলে উনুনে হাঁড়ি চড়ছে। সমাজ আমাদের দেখে উপহাস করে। উঠতি ছেলেমেয়েরা আর পড়াশোনা করতে চাইছে না।’’

ডেবরার আমদানগরের বাসিন্দা বাপন নায়েক সংস্কৃতে অনার্সের পরে স্নাতকোত্তরও করেছেন। তিনিও বলেন, ‘‘আমরা তো হতাশ। পরবর্তী প্রজন্মও আমাদের দেখে হতাশ হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় উত্তীর্ণ হয়ে দিনমজুরি করছি বাবা-কাকাদের মতোই।’’ নারায়ণগড়ের পাতলির বাসিন্দা তাপস প্রামানিক কলেজ পর্যন্ত পড়েছেন। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘অন্যের চাষজমিতে শ্রমিকের কাজ করে পেট চালাতে হচ্ছে। চাকরির পরীক্ষা দিয়েছি। রেল থেকে প্রাথমিক। কোথাও কিছু হয়নি।’’ খড়্গপুর লোকাল থানা এলাকার সামরাইপুরের যুবতী অঞ্জুষা আড়ি আবার ইতিহাসে অনার্স পাশের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে শিক্ষকতার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কিন্তু এখন তিনি টিউশন করছেন। অঞ্জুষার কথায়, ‘‘সরকার যে কোনও একটা কাজ দিক। নইলে এত কষ্ট করে পড়াশোনা বৃথা হয়ে যাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Lodha Tribe Shabar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy