সুজাপুরে বিস্ফোরণে ভেঙে পড়েছে কারখানার দেওয়াল। উড়ে গিয়েছে চাল (বাঁ দিকে)। মৃত শ্রমিকের দেহ পড়ে রয়েছে ভাঙা কারখানায়। —নিজস্ব চিত্র
বেলা তখন সাড়ে এগারোটা। গাড়ি থেকে পুরনো প্লাস্টিক নিয়ে কারখানায় ঢুকছিলেন বদরুদ্দিন শেখ। আচমকা কান ফাটানো আওয়াজে ফেটে পড়ে গোটা ঘর। পরে হাসপাতালে বসে বদরুদ্দিন বলেন, ‘‘কিছু ক্ষণের জন্য যেন কালা হয়ে গিয়েছিলাম। কিছু বোঝার আগেই লোহার টুকরো ছিটকে এসে গায়ে লাগে। ওখানেই লুটিয়ে পড়ি।’’ বিস্ফোরণের অভিঘাতে ভেঙে যায় কারখানার দেওয়াল। বহু দূরে ছিটকে যায় টিনের চাল। বৃহস্পতিবার দুপুরে মালদহের সুজাপুরের ওই প্লাস্টিক কারখানায় বিস্ফোরণে এখনও পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে ৬ জনের।
রাজ্য সরকার মৃতদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা করে এবং জখমদের ৫০ হাজার টাকা করে এককালীন অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও দ্রুত কলকাতা থেকে মালদহে যান। তিনি প্রথমে ঘটনাস্থলে যান। পরে মালদহ মেডিক্যালে গিয়ে জখমদের সঙ্গে দেখা করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাস্থলেই মৃতদের নাম রাজীব খান (১৮), মুস্তাফা শেখ (৪০), আজিজুর রহমান (১৩), আব্দুল রহমান (১৮), ও সরিফুল শেখ (২৯) সকলেরই বাড়ি সুজাপুরে। গুরুতর আহত অবস্থায় আবু সায়েদকে কলকাতার পিজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হলেও পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি কারখানাটির এক জন মালিক।
আরও পড়ুন: ছট বন্ধই সরোবরে, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েও মিলল না অনুমতি
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ‘জয় পরিবেশের’, বলছেন পরিবেশ কর্মীরা
কারখানার অন্য মালিক আমরুল শেখ জখমদের সঙ্গে পুরো সময়টাই হাসপাতালে ছিলেন বলে স্থানীয়দের দাবি। পুলিশের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, এটি দুর্ঘটনা, তাই সঙ্গে সঙ্গে কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি। আরও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুজাপুর বিস্ফোরণ
কোন যন্ত্র ফাটল
• পুরনো প্লাস্টিক কাটা হয় যে যন্ত্রে, সেটি ফেটে যায়
• যন্ত্রটির কাঠামো দু’ইঞ্চি পুরু লোহার পাত দিয়ে তৈরি। ভিতরে আধ ইঞ্চির লোহার ব্লেড
• সেই ব্লেডেই কাটা হয় পুরনো প্লাস্টিক
• কাটার পরে সেই
প্লাস্টিক অন্য যন্ত্রে গলিয়ে নতুন জিনিস তৈরি হয়
কী ভাবে ফাটল
• টানা আড়াই ঘণ্টা কাজ চলার পরে আচমকাই বিস্ফোরণ
• কর্মীদের কথায়, এমন যন্ত্রে বিস্ফোরণের তেমন নজির নেই
• তবে অতিরিক্ত গরম হলে আগুন লাগার পাশাপাশি বিস্ফোরণ হতেও পারে
• যে প্লাস্টিক কাটা হচ্ছে যন্ত্রে, তাতে কোনও বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ থাকলেও ফাটতে পারে
অভিঘাত
• বিস্ফোরণের ফলে প্লাস্টিক কাটার যন্ত্রের তলায় দুই থেকে আড়াই ফুট গর্ত হয়েছে
• বিস্ফোরণের তীব্রতায় কারখানার ঘরের পাঁচিল ধসে গিয়েছে
• কারখানার টিনের চাল প্রায় ২০ ফুট উঁচু গাছে গিয়ে আটকেছে
• কোনও কোনও দেহ বা দেহাংশ প্রায় ১৫ ফুট দূরে ছিটকে পড়েছে
সুজাপুরের এই বিস্ফোরণে এক দিকে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। অন্য দিকে, কী ভাবে এই বিস্ফোরণ, তা নিয়ে কিছুটা দিশেহারা স্থানীয় মানুষ। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূলের এই সরকার আসার পর থেকেই জেলায় জেলায় বোমা বিস্ফোরণ হচ্ছে।’’ তিনি দাবি করেন, ‘‘রাজ্য সরকার এবং সিআইডি সত্য প্রকাশ করবে না। তাই কেন্দ্রীয় সংস্থার (সিবিআই বা এনআইএ) তদন্ত ছাড়া সত্য সামনে আসবে না।’’
বিস্ফোরণে উড়ে গিয়ে গাছের ডালে আটকে চিনের চালা। নিজস্ব চিত্র
ফিরহাদ পাল্টা বলেন, ‘‘এনআইএ, সিবিআই— এই সব এজেন্সির নিজস্ব গরিমা আছে। তাদের কাজ ভারতকে রক্ষা করা। বিজেপি যেখানে-সেখানে এনআইএ, সিবিআই তদন্ত দাবি করে তাদের গরিমা নষ্ট করছে।’’ তাঁর দাবি, মেশিনটি গরম হয়ে ফেটে গিয়েছে। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে টুইট করে বলা হয়— ‘মালদহের সুজাপুরের দুর্ঘটনা একেবারেই কাজ চলার সময়ে যান্ত্রিক ত্রুটি থেকে ঘটেছে। কেউ কেউ যে দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো বোমা বিস্ফোরণকে এর সঙ্গে জুড়ছেন, এখানে তেমন কোনও ব্যাপার নেই।’
দেখুন ভিডিয়ো:
সুজাপুরের কংগ্রেস বিধায়ক ইশা খান চৌধুরীও বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘যে শ্রমিকেরা মারা গিয়েছেন ও আহত হয়েছেন, তাঁরা সবাই গরিব মানুষ। লকডাউনে তাঁদের কাজ ছিল না।’’ তাঁর দাবি, কেন্দ্র ও রাজ্য মৃতদের পরিবার পিছু ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিক।
মালদহের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়াও বলেন, ‘‘যান্ত্রিক ত্রুটি থেকে ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে বলে প্রাথমিক অনুমান।’’ প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, কাজ চলার সময়ে কোনও এক জন শ্রমিক ওই যন্ত্রে ভুল করে একটি লোহার রড ঢুকিয়ে দেন। তার ফলেই এই বিস্ফোরণ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুজাপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ঝাবড়া গাইনপাড়ায় এই কারখানাটি ১০-১২ বছর ধরে চলছে। এমন একটা কারখানায় এই রকম বিস্ফোরণ হল কী করে, সেটাই বুঝতে পারছে না কেউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy