Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

শাসক দলের সঙ্গে বিজেপি-র সংঘর্ষে রণক্ষেত্র সন্দেশখালি, নিহত ৪, নিখোঁজ বহু

স্থানীয় তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাহিনী শনিবার সন্ধ্যায় হামলা চালায় বলে বিজেপির অভিযোগ। 

প্রদীপ মণ্ডল ও সুকান্ত মণ্ডল (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

প্রদীপ মণ্ডল ও সুকান্ত মণ্ডল (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৯ ০২:৫৫
Share: Save:

রাজনৈতিক সংঘর্ষে রক্তাক্ত উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি। শনিবার তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ গেল অন্তত চার জনের। আরও অনেকে গুলিবিদ্ধ এবং নিখোঁজ বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। পুলিশ অবশ্য তিন জনের মৃত্যুর খবর স্বীকার করছে।

স্থানীয় তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাহিনী শনিবার সন্ধ্যায় হামলা চালায় বলে বিজেপির অভিযোগ। প্রথমে ওই এলাকায় তৃণমূলের বৈঠক হয় এবং বৈঠক শেষে বিজেপির পতাকা খুলতে শুরু করে তৃণমূল, তার থেকেই গোলমালের সূত্রপাত বলে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর দাবি। কিন্তু জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পাল্টা অভিযোগ, বৈঠক শেষে মিছিল বার করেছিল তৃণমূল। সেই মিছিলে হামলা চালিয়ে তৃণমূল কর্মী কায়ুম মোল্লাকে গুলি করে ও কুপিয়ে খুন করা হয়। বিজেপি অবশ্য জ্যোতিপ্রিয়র দাবি নস্যাৎ করে বলছে, বাড়ি বাড়ি হামলা চালিয়ে গুলি করা হয়েছে বিজেপি কর্মীদের, তাতে অন্তত তিন বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে, জখম ও নিখোঁজ আরও অনেকে। বেপরোয়া গুলি চালানোর সময়ে তৃণমূলের গুলিতেই তৃণমূল কর্মী কায়ুম মোল্লা নিহত হয়েছে বলে তাঁদের দাবি।

তৃণমূলের একটি সূত্রের বক্তব্য, এ দিন বিকেলে ন্যাজাটে তাদের বুথ স্তরের দলীয় বৈঠক ছিল। তার পরে একটি মিছিল বেরোলে বিজেপি তার উপর হামলা চালায়। মিছিলের পিছনে থাকা তৃণমূল কর্মী কায়ুম মোল্লাকে প্রথমে গুলি করা হয় এবং পরে টেনে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে মারা হয়। এর পরেই পাল্টা প্রতিরোধে নামে তৃণমূল। দলের অপর সূত্রে জানানো হয়, বৈঠক চলাকালীনই বিজেপি আক্রমণ চালায়।

সন্দেশখালিতে এক নিহতের দেহ। শনিবার। ছবি: নির্মল বসু

বিজেপির অবশ্য দাবি, তৃণমূলই প্রথম তাদের উপর হামলা চালায়। যার জেরে দলের তিন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে, দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দলীয় সূত্রে খবর, নিহতেরা হলেন, প্রদীপ মণ্ডল, তপন মণ্ডল এবং সুকান্ত মণ্ডল।

বেশি রাতে বিজেপির একটি সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়, তাদের দলের আরও দু’জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের নাম দেবব্রত মণ্ডল ও শঙ্কর মণ্ডল। রাতে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু দাবি করেন, সংঘর্ষে তাঁদের দলের পাঁচ কর্মীরও মৃত্যু হয়েছে। সায়ন্তনবাবুর কথায়, “পাঁচ জন বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে তিন জনের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে। বাকি দু’জনের দেহ পুলিশ সরিয়ে ফেলেছে বলে আমাদের কাছে খবর আসছে। সুজিত মণ্ডল, তপন মণ্ডল ও সুকান্ত মণ্ডল নামে যে তিন জন বিজেপি কর্মীর দেহ পাওয়া গিয়েছে, এ ছাড়া চার জন নিখোঁজ। ওই চার জনের মধ্যে শঙ্কর মণ্ডল এবং দেবদাস মণ্ডল নামে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। কিন্তু পুলিশ মৃতের সংখ্যা কমিয়ে দেখাতে ওই দুজনের দেহ লোপাট করার চেষ্টা করছে।” পুলিশ বা প্রশাসনের তরফে এর সত্যতা স্বীকার করা হয়নি এখনও। পুলিশ সূত্রে সর্বশেষ বলা হয়েছে, বিজেপির দু’জন নিহত হয়েছেন। বিজেপি-র তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, সুকান্ত মণ্ডল ও প্রদীপ মণ্ডলের চোখে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এবং তপন মণ্ডলের মাথায় গুলি করা হয়েছে। অন্য দিকে, শঙ্কর মণ্ডল, দেবদাস মণ্ডল ও সঞ্জয় মণ্ডল এবং তাঁর জামাইবাবুর খোঁজ মিলছে না।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের নেতৃত্বে এই ঘটনা ঘটেছে। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে দলের তরফে প্রাথমিক রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।’’ সূত্রের খবর, রাতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ফোন আসে রাজ্য বিজেপি নেতাদের কাছে। ঘটনার বিশদ রিপোর্ট জেনে নেয় দিল্লি। মুকুল রায় টুইট করে জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে যাবে বিজেপির একটি প্রতিনিধিদল। রাজ্য বিজেপি আজ, রবিবার সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে বৈঠকে বসবে। সন্দেশখালিতে রাজ্য বিজেপির প্রতিনিধিদল পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে। দিল্লি থেকেও দলের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল পাঠানো হতে পারে। তা ছাড়া, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে সন্দেশখালির ঘটনার প্রাথমিক রিপোর্ট দিয়েছেন মুকুল রায়।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, ‘‘বিজেপি-ই আমাদের কর্মীকে প্রথমে গুলি করে এবং পরে কুপিয়ে খুন করে।’’ দলের ৬ জন মহিলা কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মিনাখাঁ, বসিরহাট ইত্যাদি জায়গায় হাসপাতালে ভর্তি বলে তিনি জানান। জ্যোতিপ্রিয়ের হুমকি, ‘‘এ ভাবে গায়ে হাত পড়লে আমরাও কিন্তু ছেড়ে কথা বলব না।’’ রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর অবশ্য দাবি, তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের গুলিতেই তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তৃণমূলের শীর্ষস্তরের এক নেতার কথায়, ‘‘বিজেপি রাজ্য জুড়ে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে চাইছে। এটাই ওদের চক্রান্ত। তবে আমরা তা হতে দেব না।’’

গোলমালের খবর পেয়ে পুলিশ গ্রামে গেলেও প্রথমে সেখানে ঢুকতেই পারেনি বলে অভিযোগ। পরে বসিরহাট থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী, র‌্যাফ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। রাতে যান রাজ্য পুলিশের পদস্থ কর্তারা। বিজেপির জেলা সভাপতি গণেশ ঘোষ বলেন, ‘‘কর্মিসভার নাম করে তৃণমূল মারধর, ভাঙচুর চালাচ্ছিল।
আমাদের পতাকা ছিঁড়ে দেয়। মানুষ প্রতিবাদ করলে গোলমাল বাধে।’’ সন্দেশখালির ওই এলাকায় বিজেপির লোকজন সম্প্রতি তৃণমূলের পতাকা-ফেস্টুন খুলে ফেলছিল বলে অভিযোগ ছিল। তাই এ দিন তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব এলাকায় গিয়েছিলেন।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

Violence Sandeshkhali TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy