Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

অ্যাসিড-হানায় দগ্ধ সাত মহিলা পাবেন ৩৩ লক্ষ

কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরে মাকে নিয়ে অভিযুক্তের শাস্তির দাবিতে এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ের লড়াই শুরু করে পিতৃহারা ছাত্রীটি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৯ ০২:১৭
Share: Save:

যুবকের প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হয়নি নবম শ্রেণির ছাত্রীটি। তাই ঘুমন্ত অবস্থাতেই তার মুখ আর শরীর ঝলসে দিয়েছিল প্রেমিক। দগ্ধক্ষতের যন্ত্রণা নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটতে হয়েছিল স্বরূপনগরের স্বরূপদহের মেয়েটি। সেই ছোটাছুটিতে কেটে গিয়েছে কয়েকটা বছর। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরে মাকে নিয়ে অভিযুক্তের শাস্তির দাবিতে এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ের লড়াই শুরু করে পিতৃহারা ছাত্রীটি।

স্বামীর বন্ধু। তাই বাড়িতে অহরহ যাতায়াত ছিল। সেই সুযোগেই একের পর এক প্রস্তাব আসতে থাকে। কিন্তু নাকচ করেন দুই সন্তানের মা। তাই দেগঙ্গার ওই মহিলার মুখ অ্যাসিডে পুড়িয়ে দেয় স্বামীর সেই ‘বন্ধু’।

ওই ছাত্রী ও গৃহবধূর সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনার আরও পাঁচ জন অ্যাসিড-আক্রান্তকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে রাজ্য আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করেছেন তাঁরা। মোট ৩৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের সুপারিশ করেছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ। বুধবার

এই বিষয়ে বৈঠক করেন ‘ডিস্ট্রিক্ট ক্রিমিনাল ইনজুরিস কম্পেনসেশন বোর্ডের’ সদস্যেরা। তার পরেই অ্যাসিড-আক্রান্তদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

স্বরূপদহের ছাত্রীটির বয়স এখন ২৪। তার উপরে অ্যাসিড-হামলা হয় ২০১০ সালে। এত দিন পরে অভিযোগ দায়ের করা হল কেন? তরুণী বললেন, ‘‘যে-ভাবে শরীর পুড়ে গিয়েছিল, তাতে রোজই এই হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে ছুটতে হয়েছে। বাড়িতে মা ছাড়া কেউ ছিল না। তাই কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরেই এই সব বিষয়ের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করি।’’ ক্ষতিপূরণ বাবদ ওই তরুণী পাবেন পাঁচ লক্ষ টাকা।

দেগঙ্গার গোসাঁইপুরের গৃহবধূ দুর্গানগরে আয়ার কাজ করতেন। সেই জন্য দেগঙ্গা ছেড়ে ভাড়া থাকতেন মধ্যমগ্রামে। সেখানেই চলতি বছরের ১২ জুন রাতে অ্যাসিড-হামলা

হয় তাঁর উপরে। দেড় মাসের মধ্যেই তাঁকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ। দেগঙ্গার ওই আক্রান্ত মহিলা সাত লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন।

ন’জন অ্যাসিড-আক্রান্তের ক্ষতিপূরণ কী হতে পারে, তা নিয়ে বৈঠকে বসেছিল জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে চলা ওই বোর্ড। তার চেয়ারম্যান জেলা বিচারক। সদস্য হিসেবে আছেন জেলাশাসক, জেলার পুলিশ সুপার, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব। বুধবার ন’জনের ক্ষতিপূরণ নিয়ে বৈঠকে হলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সাত জনের ক্ষেত্রে। এক জন অ্যাসিড-দগ্ধের প্রয়োজনীয় নথিপত্র পুনরায় খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড। অন্য এক জনের আর্থিক ক্ষতিপূরণের আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে।

বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী সাত জনের মধ্যে দু’জন সাত লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পাবেন। পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পাবেন দু’জন। বাকি তিন জনের প্রত্যেককে তিন লক্ষ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড। একসঙ্গে ন’জন অ্যাসিড-আক্রান্তের ক্ষতিপূরণ নিয়ে বৈঠক কার্যত নজিরবিহীন বলেই কর্তৃপক্ষের অভিমত। জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব অয়ন মজুমদার বলেন, ‘‘অ্যাসিড-আক্রান্তদের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হাইকোর্টের বিচারপতি এবং রাজ্য আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের এগ্‌জ়িকিউটিভ চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ সমাদ্দার আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশ অনুসারে আমরা এই বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।’’

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরোর সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী এই মুহূর্তে দেশের মধ্যে অ্যাসিড হামলার তালিকার শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। আগে ওই জায়গায় ছিল উত্তরপ্রদেশ।

অন্য বিষয়গুলি:

Acid Attack Acid Attack Victim Compensation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy