আরজি করে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক সিনিয়র ডাক্তারদের। —নিজস্ব চিত্র।
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের পাশেই রয়েছেন সিনিয়র ডাক্তারেরা। শুরুর দিন থেকে তাঁদের সমর্থনও জানিয়ে এসেছেন। তবে এ বার সিনিয়র ডাক্তারেরা চাইছেন আন্দোলন, প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পূর্ণ কর্মবিরতির পথ থেকে সরে আসুন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বৃহস্পতিবার আরজি করের অডিটোরিয়ামে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনায় এমনই মত সিনিয়রদের একাংশের। জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠক থেকে বার হয়ে আরজি করের এক সিনিয়র ডাক্তার তাপস প্রামাণিক জানালেন, কর্মবিরতি তুলে নিয়ে যদি অন্য কোনও ভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া যায়, সেই বিষয়টি বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। যদিও কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হবে কি না, সেটি পুরোপুরি জুনিয়র ডাক্তারদের সিদ্ধান্তের উপরেই নির্ভর করছে বলে জানান তিনি।
কর্মবিরতি যাতে অন্তত আংশিক প্রত্যাহার করা হয়, সেই পরামর্শও দিয়েছেন সিনিয়রদের কেউ কেউ। রোগীস্বার্থের কথা বিবেচনা করে যাতে জুনিয়র ডাক্তারেরা কর্মবিরতি কিছুটা শিথিল করেন, সেই প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। সিনিয়র চিকিৎসক মৈত্রেয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, রোগী পরিষেবা যতটা সম্ভব সচল রাখার চেষ্টা করছেন সিনিয়রেরা। কিন্তু সরকারি হাসপাতালগুলিতে জুনিয়র ডাক্তারদের সাহায্য ছাড়া বিপুল রোগীর চাপ সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সিনিয়র ডাক্তারদের।
রাজ্যের একাধিক প্রান্তে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি পুজোর মরসুম চলছে। এই পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কথাও জুনিয়র ডাক্তারদের জানান সিনিয়রেরা। সে ক্ষেত্রে প্রস্তাব, জুনিয়র ডাক্তারেরা কাজে যোগ দিয়ে আন্দোলনকে অন্য কোনও উপায়ে এগিয়ে নিয়ে যান। তবে নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে যে তাঁরা পাশে রয়েছেন, সেই বার্তাও দিয়েছেন সিনিয়রেরা। অডিটোরিয়াম থেকে বার হয়ে এক সিনিয়র ডাক্তার বলেন, “আন্দোলন কখনও বন্ধ হবে না। বিচার চাই আমরা। যত দিন পর্যন্ত না বিচার মিলছে, আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।” তাঁরা শুধু চাইছেন কর্মবিরতির বদলে আন্দোলনকে অন্য কোনও উপায়ে জিইয়ে রাখা হোক।
প্রথম বারের কর্মবিরতির সময়ে হাসপাতালে রোগী পরিষেবায় জুনিয়র ডাক্তারদের অভাব অনেকাংশে পূরণ করেছিলেন সিনিয়র ডাক্তারেরা। অতিরিক্ত সময় কাজ করে রোগী পরিষেবা সচল রাখার চেষ্টা চালিয়েছেন সিনিয়রেরা। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে সিনিয়র ডাক্তারের জানিয়েছেন, এখনও যদি জুনিয়র ডাক্তারেরা কর্মবিরতি চালিয়ে যান, সে ক্ষেত্রে সিনিয়রেরা আগের মতোই পরিষেবা দিয়ে যাবেন। তবে সিনিয়রদের তরফে কোনও সিদ্ধান্ত জুনিয়র ডাক্তারদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি বলেই জানান সিনিয়র ডাক্তারেরা।
প্রসঙ্গত, আরজি করের নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে টানা কর্মবিরতি চালিয়ে গিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ২১ সেপ্টেম্বর থেকে তাঁরা আংশিক ভাবে কাজে ফিরেছিলেন। তবে সম্প্রতি সাগর দত্তের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর হামলার প্রতিবাদে ১ অক্টোবর থেকে ফের ১০ দফা দাবিতে পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করেছেন তাঁরা। তবে দ্বিতীয় বার পূর্ণ কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই প্রশ্ন উঠছিল বিভিন্ন মহলে। সিনিয়র ডাক্তারদের কেউ কেউ প্রকাশ্যেই আপত্তি জানিয়েছিলেন।
শুধু সিনিয়র ডাক্তারেরা নন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে শুনানির পর টানা আট ঘণ্টা ধরে চলা জুনিয়র ডাক্তারদের জিবি বৈঠকেও এই বিষয়টি উঠে এসেছিল। সূত্রের খবর, জিবি বৈঠকে পূর্ণ কর্মবিরতিতে ফেরার সিদ্ধান্ত সমর্থন করেননি অনেকেই। পূর্ণ কর্মবিরতিতে না গিয়ে বিকল্প কোনও পথে কি আন্দোলন জিইয়ে রাখা যায় না? এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল সেই রাতের বৈঠকেও। বুধবার ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের সভামঞ্চ থেকে ‘জয়েন্ট প্লাটফর্ম অব ডক্টর্স’-এর প্রতিনিধি পুণ্যব্রত গুণও প্রস্তাব দিয়েছিলেন মানুষের কথা বিবেচনা করে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি স্থির করার জন্য। কর্মবিরতি ছাড়াও যে আন্দোলনকে জিইয়ে রাখার একাধিক উপায় রয়েছে, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy