ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপে ৩৫৬ ধারা নয়, রাস্তার লড়াই লড়েই তৃণমূলকে হারাতে হবে। বঙ্গ বিজেপির নেতাদের ৩৫৬ ধারা জারির দাবি উড়িয়ে দিয়ে রাজ্যে সংগঠনকে শক্তিশালী করার কথাই বলে গেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আর সেই জন্য সংগঠনের অভ্যন্তরে সমন্বয় বাড়ানোর পরামর্শও দিলেন তিনি।
নিউটাউনের এক হোটেলে শুক্রবার বিজেপির সাংগঠনিক পদাধিকারী এবং বিধায়ক, সাংসদের সঙ্গে দু’টি আলাদা বৈঠকের কর্মসূচি ছিল শাহের। কিন্তু এ দিন সকালে কাশীপুরে বিজেপির যুব মোর্চার এক নেতার রহস্য-মৃত্যুর খবর পেয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় পৌঁছে প্রথমেই ঘটনাস্থলে চলে যান শাহ। তার পরে নিউটাউনে গিয়ে একসঙ্গেই সকলকে নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষেরা।
সূত্রের খবর, বৈঠকের শুরুতেই শাহ মন্তব্য করেন, ‘এই পাপ’ তিনি সরাবেনই। সেই সঙ্গে বাংলায় ৩৫৬ ধারা জারির সম্ভবনাতেও জল ঢেলে দেন। বিধানসভা ভোটের পর থেকে বাংলায় সন্ত্রাস, গণতন্ত্র হত্যা-সহ একাধিক অভিযোগে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং একাধিক প্রথম সারির নেতা একাধিক বার রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার দাবিতে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছেন। এমনকি, পুরভোটে লাগামছাড়া সন্ত্রাসের বর্ণনা লোকসভায় তুলে ধরে ৩৫৬ জারির দাবি করেছিলেন বঙ্গ বিজেপির সাংসদেরা। ‘শহিদ’ পরিবারের লোকজনকে নিয়ে এই দাবিতে রাষ্ট্রপতিরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজেপিপন্থী আইনজীবীরা। শাহ অবশ্য এ দিনের বৈঠকে জানিয়ে দেন, তৃণমূলকে সরাতে হলে তৃণমূলের মতো আচরণ করলে চলবে না। গণতান্ত্রিক উপায়ে রাস্তার আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে। তিনি চার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, ১৭ সাংসদ ও ৭০ জন বিধায়ককে নিজেদের এলাকায় আরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করার কথা বলেন।
বৈঠকে বলার সুযোগ পেয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ ও নদিয়ার দুই বিধায়ক-সহ আরও কিছু জনপ্রতিনিধি ও বেশ কিছু জেলার সভাপতি। তাঁরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বেশ কিছু প্রশ্ন করেন। তাঁদের মধ্যে এক জন বলেন, এ রাজ্যে শীর্ষ স্তরের আমলাদের তৃণমূল ‘রাজনৈতিক ভাবে’ কাজে লাগায়। আইপিএস, আইএএস অফিসারেরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে। তাঁদের যাতে এই ভাবে রাজনৈতিক ভাবে না ব্যবহার করা হয়, সে দিকে নজর দেওয়া হোক। অন্য এক জন বলেন, বিভিন্ন রাজ্য সরকারি প্রকল্প কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে পুরস্কৃত হচ্ছে। এতে আমাদের তৃণমূল-বিরোধিতা ধাক্কা খাচ্ছে। তৃণমূল কোনও ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে সাহায্য পাচ্ছে না তো? আর এক জনের অভিযোগ, বারবার তৃণমূলের নেতারা সিবিআই-ইডির জেরা এড়িয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও সক্রিয়তা দেখাচ্ছে না। এতে জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। শাহ যদিও বলেন, নির্বাচিত একটা সরকারের সঙ্গে যা খুশি করা যায় না। সিবিআই নিরপেক্ষ তদন্তকারী সংস্থা। তাদের কাজ তদন্ত করা। শুধু তৃণমূলকে জেলে পোরাই তাদের কাজ নয়!
সেই সঙ্গেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিরোধী নেত্রী হিসেবে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে শাহ বাংলার বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতা দিদি সিপিএমের হাতে অনেক মার খেয়েছেন। তবু লড়াই ছাড়েননি। তাই এক দিন ক্ষমতা দখল করতে পেরেছেন। আমারও মার খাচ্ছি, মিথ্যে মামলা হচ্ছে। লড়াই থেকে সরে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। লড়াই করেই ক্ষমতা দখল করতে হবে।
অন্য দিকে রাজ্য বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে বিরক্ত সন্তোষ বৈঠকে কড়া বার্তা দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, দল বড় হয়েছে। এই সময়ে একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠতে হবে, প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। তবে এই ডামাডোলকে ‘সাময়িক’ বলেই ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নতুন পথে দল এগিয়ে চলেছে। যাঁরা এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন, তিনি থাকবেন। যিনি পারবেন না, সময়ের সঙ্গে তিনি হারিয়ে যাবেন।’’ কার্যত ভর্ৎসনার সুরেই তিনি বলেন, কেউ কেউ সরকারে আসার জন্য অধৈর্য উঠেছেন! শুধু সরকার গড়ার জন্য দল করলে চলবে না। যাঁরা এমন ভাবছেন, তাঁরা এখন চলে যেতে পারেন। সরকার হলে আবার আসবেন! সেই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের বোঝাপড়া আছে?
বৈঠকের শেষ পর্বে দলকে বেশ কিছু কর্মসূচি নিতে বলা হয়েছে। মোদী সরকারের অষ্টম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কর্মসূচি নিতে হবে। এ ছাড়া, রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম বদলে দিচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে অর্থাৎ নাম বদলে যাওয়ায় প্রকল্পের কৃতিত্ব চলে যাচ্ছে রাজ্য সরকারের কাছে— তার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বিস্তারিত প্রচার করতে বলা হয়েছে।
বৈঠক প্রসঙ্গে বিজেপির বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর এক নেতার দাবি, ‘‘মাসতিনেকের মধ্যে হয় অমিতজি আবার আসবেন, নয়তো ডেকে পাঠাবেন। আর তখন কে কেমন ফল দিতে পারছে, তা আতস কাচের তলায় ফেলে দেখা হবে। নয়তো পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া সময়ের অপেক্ষা।’’ েরাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কথাতেও কার্যত একই ইঙ্গিত। তিনি বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনে বিজেপি তৃণমূলের থেকে বেশি আসন জিতবে। সেই লক্ষ্যে কয়েক বছর দল বিশেষ সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy