প্রতীকী ছবি।
ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে এ বার ‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার’ পথে হাঁটতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা। অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরে এই পদ্ধতিতে সাফল্য মিলেছে বলে খবর। এ বার ভারতেও সেই পথে হাঁটতে চান গবেষকেরা।
গবেষণাগারে ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশা তৈরি করা হবে। তার শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে ‘ওলব্যাকিয়া’ নামক ডেঙ্গি প্রতিরোধকারী এক ধরনের ব্যাক্টিরিয়া। তার পর সেই মশা ছেড়ে দেওয়া হবে খোলা জায়গায়। শরীরে ‘ওলব্যাকিয়া’ থাকা মশার সঙ্গে সাধারণ এডিস ইজিপ্টাই মশার মিলনে যদিও বা পরের প্রজন্ম জন্মায় তা হলেও তা থেকে ডেঙ্গি ছড়াবে না।
গবেষণা সম্পর্কে অবহিত জনস্বাস্থ্যবিদেরা জানান, ওলব্যাকিয়া নামক ব্যাক্টিরিয়া কোনও পতঙ্গের শরীরে থাকলে তা ডেঙ্গি, জিকা, চিকনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভারের মতো ভাইরাস প্রতিরোধ করে। এই ব্যাক্টিরিয়া ডাঁশ মাছি, মথ, প্রজাপতির মতো ৬০ শতাংশ পতঙ্গের কোষে জন্মের সময় থেকেই হাজির থাকে। সেই তালিকায় কয়েক ধরনের মশা থাকলেও এডিস ইজিপ্টাইয়ের শরীরে ওলব্যাকিয়া থাকে না। তাই ওলব্যাকিয়া রয়েছে এমন এডিস ইজিপ্টাই তৈরি করছেন গবেষকেরা।
সম্প্রতি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যৌথভাবে এ নিয়ে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল। সেখানে অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুরের গবেষণার কথা জানান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ রাজ্যে কো-অর্ডিনেটর (নেগলেকটেড ট্রপিক্যাল ডিজিজ) প্রীতম রায়। তিনি জানান, ওলব্যাকিয়ার প্রয়োগে দু’ধরনের পদ্ধতি রয়েছে।
সিঙ্গাপুরে এ কাজে তৈরি হয়েছে একটি পৃথক গবেষণাগার। পুরুষ এবং স্ত্রী এডিসের মিলনে গবেষণাগারে যে ডিম উৎপন্ন হচ্ছে, তাতে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ওলব্যাকিয়া ঢোকানো হচ্ছে। ডিম থেকে যে পুরুষ মশাগুলি বার হচ্ছে সেগুলিকে ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকায় ছাড়া হচ্ছে। গবেষণাগারের পুরুষ মশাগুলির সঙ্গে বাইরের স্ত্রী এডিসের মিলন হলে ডিম উৎপন্ন হবে। কিন্তু সেই ডিম থেকে এডিসের পরবর্তী প্রজন্ম তৈরি হবে না!
অস্ট্রেলিয়ার পদ্ধতিটি ভিন্ন। ‘ওয়ার্ল্ড মসকুইটো প্রোগ্রাম’-এর অন্তর্গত সেখানকার গবেষণায় একই রকম ভাবে গবেষণাগারে ডিমের মধ্যে ওলব্যাকিয়া ঢোকানো হচ্ছে। কিন্তু পুরুষ নয়, গবেষণাগারে তৈরি ওলব্যাকিয়া রয়েছে এমন স্ত্রী মশাদের ইচ্ছাপূরণে বর্হিজগতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে গবেষণাগারের স্ত্রী মশার সঙ্গে মিলনে এডিসের সন্তান-সন্ততি হবে। কিন্তু তারা ওলব্যাকিয়া মুক্ত হবে না। ফলে এডিসের প্রজন্ম হ্রাস না করেই ডেঙ্গি রোধ সম্ভব বলে দাবি অস্ট্রেলিয়ার গবেষকদের।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) এবং ভেক্টর কন্ট্রোল রিসার্চ সেন্টার যৌথভাবে পুদুচেরিতে অস্ট্রেলিয়া মডেলে কাজ করছে। ন্যাশনাল ভেক্টর বর্ন ডিজিজ কন্ট্রোলের অতিরিক্ত সিনিয়র রিজিওন্যাল ডিরেক্টর তাপস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের এখানে ওলব্যাকিয়ার প্রয়োগ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু চূড়ান্ত কিছু নয়। পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে অনেকগুলি বিষয় জড়িত রয়েছে। যে মশাগুলি ছাড়া হবে তারা মানুষকে কামড়ালে কী হবে তা দেখতে হবে। কমিউনিটির মধ্যে প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে কি না, সে সব দেখাও জরুরি।’’
স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা অমিয় হাটি জানান, ৭০-৭২ সালে ফাইলেরিয়ার বাড়বাড়ন্ত মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই সময় রেডিয়েশনের মাধ্যমে কিউলেক্স মশার প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করা নিয়ে কাজ হয়েছিল। তবে প্রাথমিক স্তরে গবেষণার পরে সেই কাজ বেশিদূর এগোয়নি। অমিয়বাবুর কথায়, ‘‘ওষুধ, রেডিয়েশনের মতো অনেক ভাবে মশার প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করা যায়। তাই ওলব্যাকিয়া ব্যাক্টিরিয়া কৃত্রিম উপায়ে এডিসের শরীরে ঢোকানো সম্ভব। কিন্তু গবেষণাগারে তৈরি মশার সঙ্গে বাইরের মশার মিলন হচ্ছে কি না তা দেখতে হবে। এর জন্য যে পরিকাঠামোর প্রয়োজন সেটাও
বিচার্য বিষয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy