Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bengali scientist

আমেরিকায় সম্মানিত বাঙালি বিজ্ঞানী

১২০ জন বিজ্ঞানীকে এ বছর বেছে নিয়েছে অ্যাকাডেমি। তার মধ্যে অন্যতম কলকাতার এই বাঙালি।

শঙ্কর ঘোষ

শঙ্কর ঘোষ

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৪৬
Share: Save:

মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন তিনি। পেয়েছেন একাধিক খেতাবও। এ বছর আমেরিকায় অন্যতম সেরা সম্মান ‘ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’-এর সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হলেন বাঙালি বিজ্ঞানী শঙ্কর ঘোষ। এর আগে এই সম্মান পেয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেন ও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।

১২০ জন বিজ্ঞানীকে এ বছর বেছে নিয়েছে অ্যাকাডেমি। তার মধ্যে অন্যতম কলকাতার এই বাঙালি। সল্টলেকের বাসিন্দা শঙ্কর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে পড়াশোনার পরে আমেরিকায় পাড়ি দেন। আলবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অব মেডিসিন থেকে পিএইচডি। পোস্ট-ডক করেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)তে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ডেভিড বাল্টিমোরের গবেষণাগার থেকে। যুক্ত ছিলেন ইয়েল ইউনিভার্সিটি এবং হাওয়ার্ড হিউস মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের সঙ্গেও। ‘সিলভারস্টাইন অ্যান্ড হাট ফ্যামিলি প্রফেসর’ শঙ্কর ঘোষ বর্তমানে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন।

দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে মানুষের শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার ভূমিকা নিয়ে কাজ করছেন শঙ্কর। ক্যানসার থেকে সেপসিস, ডায়াবিটিস বা অন্য কোনও অসুখে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যে ভূমিকা নেয়, তা নিয়ে একাধিক গবেষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এই সম্মান পেয়ে আমি অভিভূত। গত তিন দশকে যাঁরা আমার সঙ্গে গবেষণাগারে কাজ করেছেন, আমার পাশে থেকেছেন, আমায় পথ দেখিয়েছেন, আমার সহকর্মী, আমার প্রতিষ্ঠান— সকলের সঙ্গে এই সম্মান ভাগ করে নিতে চাই আমি।’’

শঙ্করের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ‘নিউক্লিয়ার ফ্যাক্টর কাপ্পা বি’। এটি একটি প্রোটিন ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর। ইমিউন সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত জিনের চরিত্র নিয়ন্ত্রণ করে এটি।

সম্প্রতি গবেষণাগারে সেপসিস নিয়ে একটি উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন শঙ্কর এবং তাঁর দলের সদস্যেরা। কোনও সংক্রমণে চিকিৎসা কী করে দ্রুত শুরু করা যায়, তার একটা সূত্র খুঁজে বার করেছেন তাঁরা। ইমিউন সেলে দু’টি মাইক্রো আরএনএ চিহ্নিত করেন শঙ্কর। দীর্ঘ প্রদাহজনিত রোগে (ইনফ্লেমেশন) এই মাইক্রোআরএনএ দু’টি তৈরি হয়। সঙ্কটের সময়ে যখন শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হওয়ার কথা, তখন এরা তার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। শঙ্করদের গবেষণায় দাবি করা হয়, এই মাইক্রোআরএনএ দু’টি পরীক্ষাগারে চিহ্নিত করা গেলে ইনফেকশন বা সংক্রমণ কতটা জটিল, তা বোঝা সম্ভব হবে। সে ক্ষেত্রে কোন রোগীর জটিলতা কম এবং কোন রোগীর অঙ্গ বিকল (অর্গান ফেলইয়োর) হয়ে সেপসিস ও মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে, তা আগে থেকে বোঝা সম্ভব হবে।

শঙ্কর বলেন, ‘‘ছোটবেলাটা অসমে কেটেছে। কিন্তু তার পর কলকাতায় চলে আসা। এ শহরেই পড়াশোনা। এখনও সুযোগ পেলেই কলকাতা যাই। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুরা রয়েছেন।’’

‘ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’ একটি বেসরকারি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ১৮৬৩ সালে প্রাক্তন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনে আমলে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নজির গড়েছেন যাঁরা, তাঁদের এই সম্মানে ভূষিত করা হয়। এ বছর ‘ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’ অন্য একটি নজিরও গড়েছে। নির্বাচিত ১২০ জন সদস্যের মধ্যে ৫৯ জন মহিলা। এত সংখ্যক মহিলাকে বেছে নেওয়া হয়েছে এই প্রথম। প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট মার্সিয়া ম্যাকনাট বলেন, ‘‘এত সংখ্যক মহিলা বিজ্ঞানীর এক বছরে নির্বাচিত হওয়ার ইতিহাস নেই। এটা প্রমাণ করে দেয় মেয়েরা বিজ্ঞানের জগতে কত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন। সেই সঙ্গে এটাও প্রমাণিত হয়, ‘ন্যাশনাল অ্যাকেডেমি অব সায়েন্সেস’ এঁদের খুঁজে বার করে স্বীকৃতি দিচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

usa Bengali scientist Felicitation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy