সাফল্য উদ্যাপন: বেথুন স্কুলের বাইরে নিজস্বী তুলতে ব্যস্ত মাধ্যমিক উত্তীর্ণেরা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।
অতিমারি পর্বের মাধ্যমিকে একশো শতাংশ ছাত্রছাত্রীর পাশের খবর চমকপ্রদ ঠিকই। আবার সেখানেই শুরু হচ্ছে নতুন চিন্তা। চিন্তা ওই বিপুল সংখ্যক পড়ুয়ার উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি নিয়ে। মুশকিল আসানে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে একাদশ শ্রেণির আসন বাড়ানো হতে পারে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাস।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদ মঙ্গলবার মাধ্যমিকের ফল ঘোষণা করার পরেই প্রশ্ন ওঠে, এত ছাত্রছাত্রীর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে অসুবিধা হবে না তো? ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ পাবে কি? গ্রামাঞ্চলে বহু স্কুলেরই পরিকাঠামো ভাল নয়। পর্যাপ্ত ক্লাসরুম নেই। অনেক স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকেরও অভাব। এই সব ঘাটতি সামলে স্কুলগুলি এত বেশি পড়ুয়ার ভর্তির চাপ নিতে পারবে তো?
একাদশে ভর্তি প্রসঙ্গে মহুয়াদেবী জানান, অতিমারি আবহে মাধ্যমিকে পাশের হার যে বাড়বে, সেটা অনুমান করে তাঁরা আগে থেকে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করে রেখেছেন।
‘‘উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ নিজেরাই আসন বাড়াতে পারে। তা সত্ত্বেও রাজ্যের শিক্ষা দফতরকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি, একাদশ শ্রেণিতে আসন বাড়ানোর প্রয়োজন হলে আমাদের যেন নির্দেশ দেওয়া হয়,’’ বলেন মহুয়াদেবী। সংসদ এ দিনই একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, উচ্চ মাধ্যমিকে কয়েকটি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে হলে মাধ্যমিক বা সমমানের অন্য বোর্ডের পরীক্ষায় ন্যূনতম ৪৫ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। বিষয়গুলি হল অঙ্ক, স্ট্যাটিস্টিক্স, জীববিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, ভূগোল এবং কম্পিউটার সায়েন্স।
এ দিন সকাল ১০টায় ওয়েবসাইটে মাধ্যমিকের ফল বেরিয়ে যায়। দুপুরের পরে স্কুল থেকে মার্কশিট, অ্যাডমিট কার্ড এবং সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে শুরু করেন অভিভাবকেরা। তাঁদের অনেকের প্রশ্ন, শুধু ভর্তি হলেই তো হবে না। তাঁদের ছেলেমেয়েরা কি নিজেদের পছন্দের বিষয় নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সুযোগ পাবে?
অভিভাবকদের এই প্রশ্নের পিছনে যে-আশঙ্কা লুকিয়ে আছে, এ বারের মাধ্যমিকের ফলই বলে দিচ্ছে, সেটা আদৌ অমূলক নয়। বিষয়ভিত্তিক ‘এএ’ গ্রেড অর্থাৎ ৯০ থেকে ১০০ পেয়েছে অনেক বেশি পরীক্ষার্থী। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, ওই সব কৃতী পড়ুয়ার সকলেই কি পছন্দমতো বিষয় নিয়ে ভর্তি হতে পারবে?
অল বেঙ্গল সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক তরুণ নস্কর বলেন, ‘‘মূল্যায়নের যে-পদ্ধতি রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছিল, তাতে পাশের হার যে ১০০ শতাংশও হতে পারে, সেই আশঙ্কা আমাদের ছিল। এর ফলে বহু মেধাবী ছাত্রছাত্রীর ফল আশানুরূপ হবে না। উচ্চশিক্ষায় পছন্দের বিষয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও ছাত্রছাত্রীরা প্রচণ্ড অসুবিধার সম্মুখীন হবে।’’
শিক্ষক শিবিরের একাংশের মতে, উচ্চ মাধ্যমিকে সব থেকে বেশি চাপ থাকে বিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে। এ বার সেই চাপ আরও বাড়তে পারে। কারণ, সব বিষয়ের মতো বিজ্ঞান বিষয়েও নম্বর উঠেছে অনেক বেশি। বিজ্ঞানে ভর্তির ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের সচেতন থাকতে হবে। দেখতে হবে, সত্যিই পড়ুয়ার বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার উৎসাহ আছে কি না। অন্যথায় উচ্চশিক্ষায় অসুবিধা হতে পারে। কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, ইতিমধ্যেই একাদশের ভর্তির ফর্ম দিতে শুরু করেছে কিছু স্কুল।
শিক্ষকদের মতে, নিজের স্কুলে একাদশে ভর্তি হতে পড়ুয়াদের সমস্যা না-ও হতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অন্য স্কুল বা সিবিএসই, আইসিএসই বোর্ড থেকে অনেক পড়ুয়া কম খরচে পড়ার জন্য রাজ্য সরকারের স্কুলে ভর্তি হতে আসে। তাদের ক্ষেত্রে ভর্তি হতে সমস্যা হতে পারে। মহুয়াদেবী অবশ্য বলেন, ‘‘একাদশ শ্রেণিতে ঠিক কত আসন আছে, নথি দেখে বলতে হবে। তবে গত কয়েক বছরে বেশ কিছু স্কুল উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়েছে। বেশ কিছু স্কুলে ক্লাসঘরও বেড়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy