সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের তোয়াক্কা না করে এক শ্রেণির পরিবহণ ব্যবসায়ী শিলিগুড়িতে ভাঙাচোরা, পুরানো স্কুল বাস চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, প্রতিটি স্কুল-বাস কেমন হবে, তার স্পষ্ট বিধি রয়েছে। বছরখানেক আগে সুপ্রিম কোর্ট ওই নির্দেশ দিয়েছে। তা না মানলে পরিবহণ দফতর ও পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু, শিলিগুড়িতে পুলিশ-পরিবহণ দফতরের একাংশকে নানা কৌশলে তুষ্ট করে কয়েক জন বাস মালিক যেমন খুশি স্কুল-বাস চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ।
শিলিগুড়ির অভিভাবক মঞ্চের সভাপতি সন্দীপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা বহু বার বাস মালিকদের বলেছি। তাঁদের কয়েক জন উল্টে দাবি করেছেন, উপরমহলের সঙ্গে বন্দোবস্ত রয়েছে বলেই তাঁদের নাকি সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম মানতে হয় না। জেলা প্রশাসন, পরিবহণ দফতর, পুলিশকে অভিযোগ করে কোনও লাভ হবে না বলেও ওই বাস মালিকদের দাবি। তাই আমরা বেহাল স্কুল বাসের ছবি, ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করছি। অভিভাবকদের পাঠাতে বলছি। সমস্ত কিছু সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠিয়ে হস্তক্ষেপ চাওয়া হবে।’’
দার্জিলিঙের আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক (আরটিও) রাজেন সুনদাসের কাছেও অভিযোগ পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার আরটিও বলেন, ‘‘সুনির্দিষ্ট ভাবে বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে যে সব স্কুল বাস চলছে না, তাদের মালিকদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। শিলিগুড়ির পরিবহণ দফতরের অফিসারদের দ্রুত অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছি।’’
কিন্তু সত্যি কবে অভিযান শুরু হবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন অভিভাবকরা। কারণ, রোজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শিলিগুড়ির নানা এলাকায় বেহাল স্কুল বাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কোনও বাসের জানালা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা। বেশির ভাগ বাসে স্কুলের তরফে কোনও সহায়ক রাখা নেই।
প্রাথমিক স্তরের স্কুল বাসে শিশুদের যে ভাবে নিয়ে যাওয়া হয়, তা অনেক ক্ষেত্রেই অমানবিক। নিয়ম মতো প্রতিটি বাসে পড়ুয়াদের বইয়ের ব্যাগ রাখার জন্য আসনের নীচে জায়গা তৈরি করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেটা রয়েছে। অথচ ৯০ শতাংশ বাসেই তা নেই। শুধু তাই নয়, প্রাথমিক স্তরের বাসেই মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়াদের বসতে বাধ্য করছেন একশ্রেণির মালিক। দেশবন্ধুপাড়া, মিলনপল্লি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার অভিভাবকদের অভিযোগ, বেশ কয়েকটি স্কুলবাসের ভিতরের অংশ বিপজ্জনক ভাবে ভেঙে থাকলেও, কোনও পদক্ষেপ করছেন না মালিকপক্ষ। অথচ চলতি মরসুমে অধিকাংশ স্কুলে বাসের ফি বাবদ মালিকপক্ষ গড়ে মাসে ২০০ টাকা বাড়িয়েছেন। বছরের মধ্যে ১০০ দিনের বেশি স্কুল ছুটি থাকলেও সেই বাবদে অভিভাবকদের ভাড়া গুনতে হবে কেন, তা নিয়েও ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছে অভিভাবক মঞ্চ।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, বাসে পড়ুয়াদের আনা-নেওয়ার সময় স্কুলের এক জন প্রতিনিধিকে উপস্থিত থাকতে হবে। মেয়েদের স্কুলবাসের ক্ষেত্রে ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য বাসে মহিলাকর্মী রাখাও বাধ্যতামূলক। যদিও শিলিগুড়িতে মেয়েদের স্কুলগুলির বাসে চালক-খালাসি ছাড়া কোনও মহিলা কর্মীর দেখা মেলে না বলে অভিযোগ। বাসের জানালায় আড়াআড়ি ভাবে গ্রিল লাগানো এবং বাসের দরজায় আধুনিক লক থাকা আবশ্যিক বলে নির্দেশ রয়েছে। যদিও, এ দিন শহরের সুভাষপল্লি, হাকিমপাড়া দিয়ে যাওয়া একাধিক স্কুলবাসের দেখা মিলল, যেগুলির কোনওটির জানালার কাচ আটকায় না, কোনটির আবার দেওয়াল বাইরে থেকে তুবড়ে রয়েছে। কোনওটির দিক নির্দেশের আলো-ই (ইন্ডিকেটর) নেই। অভিভাবকদের অভিযোগ, কিছু বাসকে দেখলেই মনে হয় বছরের পর বছর মেরামতি হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বাসের রং অবশ্যই হলুদ হতে হবে। যদিও, শিলিগুড়িতে নানা রঙের স্কুল বাস চলতে দেখা যায়।
ইংরেজি-বাংলা মাধ্যম স্কুল মিলিয়ে শিলিগুড়িতে পড়ুয়াদের আনা নেওয়ার জন্য ৪০০ স্কুল-বাস চলে। কিছু স্কুলের নিজস্ব বাস রয়েছে। সেই বাসগুলিতেও বিধি নিষেধ নিয়ে হাজারো অভিযোগ রয়েছে। তবে বেশির ভাগ স্কুলই বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থার থেকে বাস ভাড়া নেয়। স্কুল বাস মালিকদের সংগঠন শিলিগুড়ি স্কুল এন্ড চার্টার্ড বাস ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করেছেন, অনেক বাসেই নির্দেশিকার সব বিধি মানা সম্ভব হয় না। শুভ্রবাবুর দাবি, ‘‘পুরোনো বাসগুলি বদলে নতুন বাস আনা হচ্ছে। নতুন বাসগুলিতে সব ব্যবস্থা রয়েছে। তবে পুরোনো বাসগুলির ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। সেই বিধি যাতে মানা হয়, তার জন্য আমরা সংগঠনের সদস্যদের বিশেষ ভাবে সর্তক করেছি। সেই সঙ্গে বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছেও সাহায্য চেয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy