Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫
Durga Puja 2022

পুজোর অঞ্জলিতে নেই তফসিলিরা

বেশ কয়েক বছর আগে ওই পুজো মণ্ডপে পুষ্পাঞ্জলি দিতে গিয়ে বাধা পান এক তফসিলি মহিলা। তারপর থেকে ওই সম্প্রদায়ের কেউ আর মা দুর্গার সামনে অঞ্জলি দিতে দাঁড়াননি।

মানিকবাজার গ্রামে এ বারের দুর্গাপুজো। নিজস্ব চিত্র

মানিকবাজার গ্রামে এ বারের দুর্গাপুজো। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ অধিকারী
শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২২ ০৭:২৬
Share: Save:

এ বারও হল না।

বাঁকুড়া জেলার সোনামুখীর মানিকবাজার এলাকার শতবর্ষ প্রাচীন এক সর্বজনীন দুর্গাপুজোয় এ বছরও পুষ্পাঞ্জলিতে যোগ দিলেন না গ্রামের তফসিলি জনজাতির মানুষজন। বেশ কয়েক বছর ধরেই এমনটা হয়ে আসছে। এবং সেই জট কাটানোর কোনও প্রয়াসও হয়নি কোনও তরফে।

জানা যাচ্ছে, বেশ কয়েক বছর আগে ওই পুজো মণ্ডপে পুষ্পাঞ্জলি দিতে গিয়ে বাধা পান এক তফসিলি মহিলা। তারপর থেকে ওই সম্প্রদায়ের কেউ আর মা দুর্গার সামনে অঞ্জলি দিতে দাঁড়াননি। অথচ মানিকবাজার গ্রামে যে তিনশো পরিবারের বাস, তার অর্ধেকই তফসিলি জাতি ও জনজাতি সম্প্রদায়ের। গ্রামের ৫টি পাড়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন রুইদাস, বাউরি, রায়, লোহার ও আদিবাসীরা।

গ্রামের ‘মানিকবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি’র সম্পাদক অনুপ রায় মানছেন, ‘‘পুজোর আগের দিন নিরামিষ আহার ও উপোস করে মায়ের পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার নিয়ম। এই পুষ্পাঞ্জলিতে অংশ নেন কেবল সাধারণ সম্প্রদায়ের মানুষ। তবে এতে জাতপাতের কোনও ব্যাপার নেই। তা ছাড়া কেউ কোনওদিন এ সব নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনাও করেননি।’’ এই পুজো উদ্যোক্তার ব্যাখ্যা, ‘‘গ্রামের প্রত্যেকেই পুজোয় অংশ নেন। অষ্টমীর দিন দেবীর প্রসাদ মন্দির থেকে নিয়ে যান তফসিলি সম্প্রদায়ের মানুষজন। যদি সে রকম বাছ-বিচার থাকত তাহলে ওঁরা মন্দির থেকে প্রসাদ নিয়ে যেতে পারতেন না।’’

অথচ সোনামুখী থানা এলাকাতেই রয়েছে অন্য ছবি। জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একত্রে পুষ্পাঞ্জলি দেন ধুলাই গোপীকান্তপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসবে। পুজো কমিটির সম্পাদক সঞ্জয় দত্ত বলছেন, ‘‘আমাদের এলাকার সর্বজনীন দুর্গাপুজোয় গ্রামের তফসিলি -সহ সকলেই অংশ নেন। সাধ্যমতো চাঁদা দেন, পুজোর কাজে হাত লাগান, পুষ্পাঞ্জলিও দেন।’’ মানিকবাজারে তাই ক্ষোভ ঘনিয়েছে। গ্রামের তফসিলি মানুষদের একাংশ বলছেন, এটা পারিবারিক দুর্গাপুজো নয়। সরকারি অনুদান নিয়ে সর্বজনীন দুর্গোৎসব হচ্ছে। তাহলে কেন পুজো কমিটি কাউকে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া থেকে বঞ্চিত করবে?

বিষয়টি নিয়ে আলো-আঁধারিতে পঞ্চায়েত থেকে পুলিশ-প্রশাসন। স্থানীয় মানিকবাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অরিজিৎ মল্লিক বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে একটা অভিযোগ উঠেছিল। কমিটির সঙ্গে আলোচনাও হয়েছিল। আর তো জটিলতা হয়নি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘পুজোয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষই নিজেদের মতো করে আনন্দ উপভোগ করেন।’’ পুলিশ-প্রশাসনেরও দাবি, এ নিয়ে অভিযোগ তাঁদের কানে ওঠেনি। বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক অনুপকুমার দত্ত বলেন, ‘‘এমন কোনও অভিযোগ নেই বলেই পুলিশ-প্রশাসন সূত্রে জেনেছি। আর পুজোর আগে প্রতিটি পুজো কমিটিকে নিয়ে বসে সম্প্রীতি ও সচেতনতার বার্তা দেওয়া হয়েছে।’’ বাঁকুড়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন) গণেশ বিশ্বাসও দাবি করেন, ‘‘এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। পুজোর আগে থেকে পুলিশ-প্রশাসন পুজো কমিটি ও সাধারণ মানুষকে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। এ সবের কোনও ভিত্তি নেই।’’

মানিকবাজার গ্রামে গেলে কিন্তু অন্য কথাই শুনতে হয়। সেখানকার তফসিলিরা বারবার মনে করান তাঁদের বঞ্চনার কথা। বলেন, ‘‘তবে যে লোকে বলে মায়ের পুজোয় সকলের সমান অধিকার!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2022 SC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy