হাওড়া স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে সত্যেন্দ্রর গতিবিধির এই ছবি।
বাগুইআটিতে জোড়া খুনে মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরিকে শুক্রবার সকালে হাওড়া স্টেশন এলাকা থেকে পাকড়াও করেছে বিধাননগর পুলিশ। শুক্রবারেই তাঁকে আদালতে হাজির করানো হয়েছে। আদালত তাঁকে ১৪ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব সিআইডি-কে দিয়েছিলেন। তাই সত্যেন্দ্রকে সিআইডি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। সেখানেই তাঁকে জেরা করে খুনের উদ্দেশ্য বার করার চেষ্টা করবেন রাজ্যপুলিশের গোয়েন্দারা।
সত্যেন্দ্রর গ্রেফতারির অব্যবহিত পরেই প্রকাশ্যে এসেছে হাওড়া স্টেশনের একটি সিসিটিভি ফুটেজ। তাতে দেখা যাচ্ছে কাঁধে ব্যাগ, হাফপ্যান্ট পরে করিডোর দিয়ে দুলকিচালে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছেন দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে খুনে মূল অভিযুক্ত। মুখ মাস্কে ঢাকা। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতেই যে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, তার কোনও চিহ্ন অন্তত সেই ফুটেজ দেখে বোঝার উপায় নেই।
প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, সত্যেন্দ্রর খোঁজে একাধিক জায়গায় জাল পেতেছিল পুলিশ। তাঁর ফোনের টাওয়ার লোকেশন ‘ট্র্যাক’ করা হচ্ছিল। পুলিশের অনুমান ছিল, সত্যেন্দ্র যেখানেই পালিয়ে থাকুন, টাকায় টান পড়লে ফোন ব্যবহার করে তিনি কারও কাছে টাকা চাইতে পারেন। পুলিশের দাবি, তেমনই ঘটেছে শুক্রবার সকালে হাওড়া স্টেশনে।
পুলিশ সূত্রে খবর, বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়ালেও প্রতি ঘণ্টায় ১০ টাকা খরচ করে রাতটা সত্যেন্দ্র কাটাতেন হাওড়া স্টেশনের বাতানুকূল যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে। শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠে মুম্বই পালানোর প্রস্তুতি শুরু করেন তিনি। তখনকার ছবিই ধরা পড়েছে স্টেশনের সিসিটিভিতে।
ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, সত্যেন্দ্র বাতানুকূল যাত্রী প্রতীক্ষালয় থেকে বেরোলেন। হাতে জামাকাপড় জাতীয় কিছু একটা নিয়ে আবার ফিরলেন সেখানে। প্রতীক্ষালয়ের ভিতরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, সত্যেন্দ্র সকলের সামনেই হাঁটতে হাঁটতে কোথাও একটা গেলেন। তার কিছু ক্ষণ পর আবার বেরিয়ে এলেন। তখন তাঁর মুখে মাস্ক। কাঁধে একটি ব্যাগ। হাতেও কিছু একটা রয়েছে। পুলিশ জানাচ্ছে, সেই সময় সত্যেন্দ্র পালানোর উদ্দেশে যাত্রী প্রতীক্ষালয় থেকে বেরিয়ে গঙ্গার ধারে একটি বেসরকারি টিকিট বুকিং কাউন্টারে যান। সেখানকার কর্মী দীপক প্রসাদের কাছে জানতে চান, মুম্বই যাওয়ার কী কী ট্রেন আছে। পুলিশ সূত্রে খবর, সেই সময় দীপকের মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করতে চান সত্যেন্দ্র। বলেন, তাঁর ফোনে চার্জ নেই। কিন্তু দীপক তা দেননি। অগত্যা সেই কাউন্টারে দাঁড়িয়েই নিজের ফোনে চার্জ দিতে শুরু করেন সত্যেন্দ্র। ফোন চালু হতেই কাউকে ফোন করে ছ’হাজার টাকা চান।
সত্যেন্দ্র নিজের ফোন ‘অন’ করতেই সঙ্কেত পৌঁছে যায় গোয়েন্দাদের কাছে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেখানে পৌঁছে যায় পুলিশ। দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে সত্যেন্দ্রর নম্বরে ফোন করে পুলিশ। দোকানের ভিতরে মোবাইল বেজে ওঠে। পুলিশ নিশ্চিত হয়, সত্যেন্দ্র হাতের নাগালে। অতঃপর গ্রেফতার।
পুলিশ সূত্রে খবর, কারও যাতে ঘুণাক্ষরেও সন্দেহ না হয়, সে জন্য সত্যেন্দ্র নিজেকে বদলে ফেলেছিলেন। তার চিহ্ন ধরা পড়েছে সিসিটিভি ফুটেজেও। আগাগোড়া ভোজপুরি মেশানো হিন্দিতে কথোকথন চালিয়ে যাচ্ছিলেন সত্যেন্দ্র। কাঁধে ব্যাগ, পরনে হাফপ্যান্ট, পকেটে হাত ঢুকিয়ে দুলকি চালে যে ভাবে তিনি স্টেশনের করিডোর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তাতে তিনিই যে দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে খুনে মূল অভিযুক্ত, কে বলবে! কিন্তু শেষরক্ষা হল না। ১৮ দিন ধরে পালিয়ে বেড়ালেও পুলিশের জালে ধরা পড়ে গেলেন সত্যেন্দ্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy