Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

অনাদরে হারিয়ে যাচ্ছে বিনয়ের বহু স্মৃতিই 

দ্রুত পদক্ষেপ করা না হলে ধীরে ধীরে হয় তো কবির অসংখ্য পুরস্কার, ব্যবহৃত জিনিসপত্র হারাতে হবে বলে অনেকের আশঙ্কা।

কবি বিনয় মজুমদারের সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার গ্রহণের চিত্র।— সংগৃহীত।

কবি বিনয় মজুমদারের সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার গ্রহণের চিত্র।— সংগৃহীত।

সীমান্ত মৈত্র
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:০৬
Share: Save:

একতলা পাকা বাড়িটির দেওয়ালে জমেছে শ্যাওলা। ছাদের উপরে গজিয়েছে আগাছা। দেওয়ালের একাংশ ভেঙে পড়েছে। দরজা-জানলার অবস্থাও তথৈবচ। এক কথায়, জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে বাড়ি।

এই বাড়িতে বসেই বছরের পর বছর ধরে সাহিত্য চর্চা করে গিয়েছেন বিনয় মজুমদার। পেয়েছেন সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার। হাংরি জেনারেশনের লেখক হিসাবে সাহিত্যের যাত্রা শুরু করলেও পরে তৈরি করেছেন সম্পূর্ণ নিজস্ব ঘরানা। যে কারণে, জীবনানন্দের প্রকৃত উত্তরসূরি হিসাবেও বিনয়ের নাম করেন অনেকে। নক্ষত্রের আলোয়, গায়ত্রীকে, ফিরে এসে চাকা, অঘ্রাণের অনুভূতিমালা, একা একা কথা বলি— এমন অসংখ্য কাব্যগ্রন্থের তিনি স্রষ্টা। অঙ্কের ছাত্র বিনয়ের লেখায় বিজ্ঞানের অনুষঙ্গ বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে তাঁর লেখায়।

বিনয় মজুমদারের জন্ম অধুনা মায়ানমারে, ১৯৩৪ সালে। ১৯৪৮ সালে পরিবারের সঙ্গে গাইঘাটার শিমুলপুরে এসেছিলেন। ২০০৬ সালের ১১ ডিসেম্বর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এই বাড়িতেই বসবাস করেছেন বিনয়।

কিন্তু এখন কবির বাস্তুভিটের প্রতি অনাদর দেখে কষ্ট পান বিনয়ের অনুরাগীরা। বাড়ি-সহ জায়গাটি ৫ কাঠা। বনগাঁর প্রাক্তন সাংসদ মমতা ঠাকুরের তহবিলের টাকায় শুধু পাঁচিল উঠেছে। সরকারি উদ্যোগে আর কিছু হয়নি। বাড়িতে গ্রন্থাগারটি দেখাশেনা করে কবি বিনয় মজুমদার স্মৃতিরক্ষা কমিটি ও গ্রন্থাগার কমিটি। তাঁরা সাধ্য মতো বিনয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে কাজ করছেন। কবির স্মরণে নিয়মিত অনুষ্ঠান করা হয়। দূরদূরান্ত থেকে কবি-সাহিত্যিকেরা নিয়মিত আসেন। বাড়ির যে ঘরে কবি থাকতেন, সেটি এখন তালা দেওয়া। অন্য ঘরে একটি আইসিডিএস স্কুল চলে। কবির মা বিনোদিনী মজুমদারের নামে একটি ফলক ছিল। সেটি কেউ ভেঙে দিয়েছে। বাসিন্দারা মনে করছেন, এখানে কোনও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। রাতে এলাকাটি অন্ধকারে ডুবে থাকে। সাহিত্য অ্যাকাডেমির স্মারক চুরি হয়েছে, দ্রুত পদক্ষেপ করা না হলে ধীরে ধীরে হয় তো কবির অসংখ্য পুরস্কার, ব্যবহৃত জিনিসপত্র হারাতে হবে বলে অনেকের আশঙ্কা। সকলেই চাইছেন, সরকার বাড়ি-জমি অধিগ্রহণ করে, বিনয়ের স্মৃতি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করুক। কবি বিনয় মজুমদার সাধারণ গ্রন্থাগারের সম্পাদক বৈদ্যনাথ দলপতি জানান, কবির স্মৃতিতে মিউজিয়াম তৈরি করুক সরকার। জেলা পরিষদের কাছে আবেদনে বলা হয়েছে, কবির বাস্তুভিটেকে কেন্দ্র করে ইকো পর্যটন কেন্দ্র তৈরি হোক।

কবি বিভাস রায়চৌধুরী স্মারক চুরির ঘটনায় মর্মাহত। বললেন, ‘‘তথ্য সংস্কৃতি বিভাগের অধীনে থাকা রাজ্য কবিতা অ্যাকাডেমি দু’বছর আগে কবি বিনয় মুজদারের নামে পুরস্কার চালু করেছেন। ফলে কবির প্রতি সরকারের সরাসরি স্বীকৃতি আছে। তাই অসংরক্ষিত বাড়িটির প্রতি সরকারের মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।’’ কবি তীর্থঙ্কর মৈত্র বলেন, ‘‘বিনয়দা বেঁচে থাকাকালীনও তাঁর লাঠি চুরি হয়ে যেত। পরে চোরদের টাকা দিয়ে তিনি সেই লাঠি ফিরিয়ে আনতেন। বিনয়দার ঘরে ঢুকে হরিণের সিং চোরেরা চুরি করে নিয়েছিল।’’

পুলিশ কর্তারা জানাচ্ছেন, যে কোনও স্টেশন-সংলগ্ন এলাকায় চোরের উপদ্রব থাকে। ফলে সেখানেও আরও সর্তক থাকা প্রয়োজন। বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, গ্রন্থাগার ছাড়া বেদির উপরে কবির একটি ছবি আছে। ওই ছবিটিও কয়েকবার চোরেরা খুলে পাশের পুকুরে ফেলে দিয়েছিল।

স্থানীয় শিমুলপুর পঞ্চায়েতের সদস্য রমন দে বলেন, ‘‘আমরা এখানে একটি অডিটোরিয়াম তৈরি ও বাড়ি সংরক্ষণ করে লাইব্রেরি তৈরির চেষ্টা করছি।’’ বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক সুরজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘বাড়ি সংরক্ষণের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। সরকারকে জমি বাড়ি নিতে হলে উত্তরাধিকারীদের নো-অবজেকশন লাগে। বিনয়বাবুর উত্তরাধিকারীদের খোঁজ পাওয়া যায় না। ফের একবার রাজ্য সরকারের কাছে বাড়িটি অধিগ্রহণ ও সংরক্ষণের আবেদন করব।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE