Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

পার্ক ঘিরে বদলের স্বপ্ন বনবস্তিতে

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে শিলিগুড়িতে যাত্রা শুরু হল বেঙ্গল সাফারি পার্কের। জাঁকজমকের মধ্যে দিয়ে সাফারি পার্ক চালু হতেই আশায় বুক বাঁধছেন পার্কের চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা আটটি বনবস্তির কয়েক হাজার বাসিন্দা।

সাফারির গাড়িতে উঠছে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।

সাফারির গাড়িতে উঠছে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।

সংগ্রাম সিংহ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:৫০
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে শিলিগুড়িতে যাত্রা শুরু হল বেঙ্গল সাফারি পার্কের। জাঁকজমকের মধ্যে দিয়ে সাফারি পার্ক চালু হতেই আশায় বুক বাঁধছেন পার্কের চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা আটটি বনবস্তির কয়েক হাজার বাসিন্দা।

যে এলাকায় পার্ক তৈরি হয়েছে তার চেহারা দ্রুত বদলে যাচ্ছে। পার্কে হরিণ, গণ্ডার ও পাখি দেখতে অত্যুৎসাহীরা ভিড় জমাচ্ছেন। তাই দেখে আশেপাশের বস্তিবাসীরা খুশি। এলাকার পাশপাশি তাঁদের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতি কবে হবে তা জানতে চান তাঁরা। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী গৌতম দেব জানিয়েছেন, ধীরে ধীরে সমস্ত এলাকার সার্বিক উন্নয়ন করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা আগে পার্কের কাজ সম্পূর্ণ করব। তারপর স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের কাজে লাগিয়ে এলাকায় হোম স্টে গড়ে তোলা হবে।’’

তবে এখনও পর্যন্ত সাফারি পার্কের যে কাজ হয়েছে, সেখানে সুযোগ পাননি এলাকার বাসিন্দারা। পার্কের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়ে তা চালু হয়ে গেলেও, স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা কাজ পাচ্ছেন না, অথচ শিলিগুড়ি থেকে কিছু ঠিকাদারের লোকজন কাজ করে যাচ্ছেন। অনেকেই আশায় রয়েছেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে তাঁরা হয়ত কাজ পাবেন।

স্থানীয় বন সুরক্ষা কমিটি বা আগের সোরিয়া পার্ক পরিচালনার জন্য যে কমিটি ছিল, তাঁদের অনেকেই মনে করছেন, পুরোপুরি চালু হলে কমিটির অনেককেই বনকর্মী হিসেবে চাকরি দেওয়া হবে। আশপাশের বনবস্তিগুলিতে হোম-স্টেও চালু করা যেতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ট্যুর অপারেটরদের অনেকেই। তবে সরকারি স্তরে সহায়তা দরকার বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

শালুগাড়ার পর থেকে সাফারি পার্কের পিছন দিকে পরপর ডিমডিমা, বেতগাড়া, সিঙ্গিঝো‌রা, তুরিবাড়ি এবং রাস্তার উল্টো দিকে চমকডাঙ্গি, লালটং বস্তি, সাতমাইল বস্তি ও দশমাইল বনবস্তি। সব মিলিয়ে প্রায় হাজার চারেক মানুষের বাস। সমস্ত বস্তিগুলিই জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের ডাবগ্রাম-১ পঞ্চায়েত এলাকায়। গোটা এলাকাই বৈকুণ্ঠপুর বনবিভাগের অধীন। এই বস্তিগুলির অনেকগুলিই জঙ্গলের কোর এলাকায়। উন্নয়ন বলতে একটা গ্রামে একটা প্রাথমিক স্কুল আর বিদ্যুৎের আলো। এ ছাড়া আর কোনও উন্নয়ন হয়নি এলাকায়। ফলে এখানে আন্তর্জাতিক মানের সাফারি পার্ক হওয়ার কথা শুনে আশায় বুক বেঁধেছেন তাঁরা। প্রথম পর্যায়ে আশা পূরণ হয়নি। তবে এখনও আশায় তাঁরা।

সাফারি পার্ক তৈরি হওয়ার আগে যখন সোরিয়া পার্ক ছিল, তখন তা দেখভাল করা, ও রক্ষা করার জন্য স্থানীয়দের নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছিল। সেই কমিটি এখনও রয়েছে। তার সভাপতি সুনীল শৈব বলেন, ‘‘আমাদের এখানকার ছেলেরা তেমন সুযোগ পায়নি। শিলিগুড়ির ছেলেরা কাজ পাচ্ছে।’’ অভিযোগ স্বীকার করেছেন এলাকার প্রধান কবিতা ছেত্রী শৈব। তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘স্থানীয়রা তেমনভাবে কাজ পাচ্ছেন না। তাঁদের কাজ না দিলে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন হবে না।’’ এলাকার বাসিন্দাদের ব্যবসার সুযোগ দেওয়ার দাবি তুলেছেন বন সুরক্ষা কমিটির সম্পাদক বুদ্ধিলাল শৈব। তিনি বলেন, ‘‘এলাকার মানুষের চারটি দোকান ছিল আগের পার্কে। এখানে আরও কিছু দোকান, কফি শপ তৈরি হবে বলে শুনেছি। সেগুলির জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যেন বাইরের লোকেদের সুযোগ না দেওয়া হয় তা সুনিশ্চিত করতে হবে।’’ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর সূত্রে তাঁদের দাবিগুলি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্থানীয়দের প্রাধান্য দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।

এলাকার বনবস্তিতে হোম স্টে হলে তাতে ভাল সাড়া পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন পর্যটন বিশেষজ্ঞ সম্রাট সান্যাল। তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গলের মধ্যে বন বাঁচিয়ে পরিবেশ বান্ধব করে হোম স্টে চালু করা যেতে পারে।’’ তার সঙ্গে একটা মিউজ়িয়াম তৈরি করে, গাইড পদ তৈরি করে স্থানীয়দের আরও বেশি করে কাজের সুযোগ দেওয়া উচিত বলে পরামর্শ দেন সম্রাটবাবু।

অন্য বিষয়গুলি:

mamatabanerjee safaripark siliguri inauguration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy