সাংবাদিক বৈঠকে সব্যসাচী দত্ত। —নিজস্ব চিত্র
ইস্তফা দিলেন সব্যসাচী দত্ত। বিধাননগর পুরনিগমের মেয়র পদ ছেড়ে দেওয়ার কথা সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা করলেন তিনি। অসৎ এবং স্বার্থান্বেষীদের সঙ্গে আপস করা বা মেহনতি মানুষের পাশ থেকে সরে যাওয়া সম্ভব নয়, তাই ইস্তফা— ঘোষণা সব্যসাচীর। নানা অসাধু কার্যকলাপের বিরুদ্ধে খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে এ দিন মন্তব্য করেছেন সব্যসাচী দত্ত। ইস্তফার কথা ঘোষণা করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘নির্বাচিত পুরপ্রতিনিধি তথা মেয়র হিসেবে পুর আইনকে যখন রক্ষা করতে পারছি না, তখন মেয়র পদে থেকে কোনও লাভ নেই।’’
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে নাগাদ বিধাননগরের পুর ভবনেই সাংবাদিক বৈঠক করেন সব্যসাচী দত্ত। চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েই সব্যসাচী দত্ত সাংবাদিক সম্মেলনে বসেন। বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের আন্দোলনে শামিল হয়ে বিদ্যুৎ ভবনের গেটে ভাষণ দেওয়ার পর থেকেই যে দলে তাঁকে নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে, সে কথা মনে করিয়ে দেন সব্যসাচী। তার পরে জানান যে, তিনি মুখ বন্ধ রাখবেন না, যত দিন বাঁচবেন, তত দিনই মেহনতি এবং দুর্বল মানুষের হয়ে কথা বলবেন।
এতেই থামেননি সব্যসাচী দত্ত। রাজ্য সরকারকে এ দিন ফের আক্রমণ করেছেন তিনি। ছাড়েননি খোদ মুখ্যমন্ত্রীকেও। বিধাননগর পুর এলাকায় বিভিন্ন অসাধু কার্যকলাপে তিনি বাধা দিচ্ছিলেন বলে সব্যসাচী এ দিন জানান। জলা ভরাট এবং অবৈধ নির্মাণ রুখতে তিনি সক্রিয় হয়েছিলেন বলেও জানান। সব্যসাচীর দাবি, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগকে তো বটেই, খোদ মুখ্যমন্ত্রীকেও তিনি জানিয়েছিলেন বিষয়গুলি। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে কোনও সাহায্য পাননি। অসততার সঙ্গে আপস করতে পারব না— বলেন পদত্যাগী মেয়র।
সব্যসাচী আরও বলেন যে, নির্বাচিত পুরপ্রতিনিধি এবং পুরপ্রতিনিধিদের দ্বারা নির্বাচিত মেয়র হওয়া সত্ত্বেও তিনি পুর আইনকে রক্ষা করতে পারছিলেন না, তাই মেয়র পদে থাকার কোনও অর্থ হয় না। তাঁকে যে অনাস্থা বৈঠকের নোটিস দেওয়া হয়েছিল, সেই নোটিস কলকাতা হাইকোর্টে খারিজ হওয়ার তাঁর নৈতিক জয় হয়েছে বলে সব্যসাচী এ দিন দাবি করেন।
রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষনেতা ফিরহাদ হাকিম আগেই সব্যসাচীকে ফোন করে মেয়র পদ ছাড়তে বলেছিলেন বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছিল। মেয়র পদ শেষ পর্যন্ত যখন ছাড়লেনই, তখন ফোন পাওয়ার পরেই ছাড়লেন না কেন? এমন প্রশ্নের সম্মুখীনও এ দিন হতে হয় বিধাননগরের সদ্য প্রাক্তন মেয়রকে। সব্যসাচী বলেন, ‘‘মেয়রটা তো ফোনে ফোনে হইনি। কেউ ফোন করে দিল আর আমি মেয়র হয়ে গেলাম, এমন তো হয়নি। তাই ফোনে ফোনে মেয়র পদ ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নও ওঠে না।’’
গতকাল অর্থাৎ বুধবারই সব্যসাচী দত্তকে সাময়িক স্বস্তি দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। তাঁর বিরুদ্ধে কাউন্সিলরদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বিধাননগরের পুর কমিশনার যে বৈঠক ডেকেছিলেন, সেই বৈঠকের নোটিসকে বুধবার খারিজ করে দেন বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়। নোটিসের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সব্যসাচী দত্তই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। হাইকোর্ট জানায় নোটিস অবৈধ।
তবে সব্যসাচীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আর আনা যাবে না, এমন কোনও পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি। হাইকোর্ট বরং বিধাননগর পুর নিগমের চেয়ারপার্সনকে নির্দেশ দিয়েছিল, ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে নতুন করে অনাস্থা বৈঠকের নোটিস দিতে হবে। অর্থাৎ অনাস্থার উপরে ভোটাভুটি অবধারিত ছিল। কিন্তু তা কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছিল।
সব্যসাচী দত্তকে নিয়ে অনেক দিন ধরেই বিড়ম্বনায় তৃণমূল। মূলত মুকুল রায়ের সঙ্গে সব্যসাচীর ঘনিষ্ঠতা নিয়েই আপত্তি তৃণমূল নেতৃত্বের। আর সব্যসাচী বার বার দলের সেই আপত্তিকে অগ্রাহ্য করেছেন। মুকুল রায় তৃণমূল ছাড়ার পরেও একাধিক বার তাঁকে বাড়িতে আপ্যায়ন করেছেন তিনি। এর জেরে সব্যসাচীকে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় আগেও শুরু করেছিল তৃণমূল। কিন্তু সে বার ফিরহাদ হাকিম, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকরা শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবে কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক সেরে সব্যসাচীকে পাশে নিয়ে জানিয়েছিলেন যে, সব্যসাচী ভুল করেছেন এবং এমন ভুল তিনি ভবিষ্যতে আর করবেন না। সব্যসাচী নিজেও তেমনই জানিয়েছিলেন।
আরও পডু়ন: ‘কুলভূষণকে ভারতের হাতে তুলে দিতে বলেনি আন্তর্জাতিক আদালত’, টুইটে ইমরান
কিন্তু সম্প্রতি ফের সব্যসাচীর উপরে তৃণমূল নেতৃত্ব রুষ্ট হন বিদ্যুৎ ভবনে একটি বিক্ষোভের জেরে। বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন বিধাননগরের তদানীন্তন মেয়র। দল যদি মনে করে যে তিনি শৃঙ্খলা ভাঙছেন, তা হলে দল ব্যবস্থা নিক— এমন মন্তব্যও সব্যসাচী করেন সে সময়ে। তার পরেই তাঁর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তৃণমূল ভবনে বিধাননগরের কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে বসেন ফিরহাদ হাকিম। সেই বৈঠকে সব্যসাচীকে ডাকা হয়নি। মেয়র সব্যসাচীর বদলে ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়কে পুরসভার কাজ সামলাতে বলা হয়।
তৃণমূল ভবনে যে দিন এই বৈঠক হয়, সে দিন রাতেই ফের মুকুল রায়ের সঙ্গে বৈঠক হয় সব্যসাচী দত্তর। বিধাননগরের একটি ক্লাবে তাঁরা দেখা করেন, একসঙ্গে নৈশভোজও সারেন। তার পরেই সব্যসাচীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার নির্দেশ দিয়ে দেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
আরও পডু়ন: ০০৭ নামে পাকিস্তানে গুপ্তচর ছিলেন অজিত ডোভাল!
৩৫ কাউন্সিলরের স্বাক্ষর সম্বলিত অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়েছিল চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীর কাছে। তবে সব্যসাচী দত্ত পদত্যাগের রাস্তায় তখনই হাঁটেননি। ভোটাভুটিতেই বোঝা যাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোন পক্ষে— চ্যালেঞ্জ ছুড়ে জানিয়েছিলেন বিধাননগরের মেয়র। অনাস্থা প্রস্তাবের ভিত্তিতে যে নোটিস তাঁকে পাঠিয়েছিলেন পুর কমিশনার, তার বৈধতাকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন সব্যসাচী দত্ত। হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, নোটিস অবৈধ। কিন্তু টানাপড়েন আর দীর্ঘায়িত করলেন না রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক। হাইকোর্টে জয়কে নিজের নৈতিক জয় হিসেবে তুলে ধরে সরে দাঁড়ালেন বিধাননগরের মেয়র পদ থেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy