ব্যাগ গুছিয়ে অপেক্ষায় দিবস। নিজস্ব চিত্র।
ইউক্রেনের বন্দরে গত ১১ দিন ধরে আটকে আছেন দিবস সরকার। তাঁর বাড়ি নদিয়ায়। তবে কর্মসূত্রে জাহাজে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে বেড়ান বছরভর। মাল বোঝাই করে নিয়ে পৌঁছে যান এক বন্দরে। তারপর সেখান থেকে নতুন পণ্য নিয়ে পাড়ি দেন অন্য কোথাও, অন্য কোনও দেশে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দিবসের জাহাজ ভুট্টা নিয়ে এসেছিল ইউক্রেনে। কথা ছিল পরের দিনই ফিরবেন। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। গত ১১ দিন ধরে ব্যাগ গুছিয়ে অপেক্ষা করছেন দিবস। অফিস অর্থাৎ জাহাজ কর্তৃপক্ষের নির্দেশের আশায়। যদি তারা তাঁকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়! কিন্তু দিবসের অফিস এখনও পর্যন্ত কোনও আশার কথা শোনাতে পারেনি তাঁকে।
ইউক্রেনের মাইকোলেভের নিকোলেভ বন্দরে আটকে রয়েছে দিবসের জাহাজ। তবে সেখানে তিনি একা নন। তাঁর মতোই আরও বহু দেশের প্রায় ২০টা জাহাজ আটকে। শুধু দিবসের জাহাজেই রয়েছেন ২১ জন। উদ্ধারের আর্তি জানিয়েছেন তাঁরা। অফিস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা চেষ্টা করছেন। তবে দিবসেরা যদি পারেন, তবে যেন পোল্যান্ড বা রোমানিয়ার সীমানার কাছে চলে আসেন। তা হলে তাঁদের উদ্ধার করার ব্যবস্থা করতে পারবেন তাঁরা। যদিও নদিয়ার নাবিকের বক্তব্য, ‘‘কথাটা বলা যত সহজ করা তত সহজ নয়।’’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ হল, ইউক্রেনকে সমুদ্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে চাইছে রাশিয়া। বন্দরগুলিতে তাই কড়া নজরদারি চালাচ্ছে রুশ ফৌজ। দিবসও জানাচ্ছেন, তাঁরা যেখানে আছেন সেখান থেকে জাহাজ নিয়ে বেরনোর পথ আপাতত বন্ধ। রুশ সেনারা বেরনোর পথে সমুদ্রে মাইন বিছিয়ে রেখেছে। রয়েছে কড়া প্রহরাও। এই পরিস্থিতিতে পোল্যান্ড বা রোমানিয়ার সীমান্তে যাওয়াও ঝুঁকির ব্যাপার। নিকোলেভ থেকে ইউক্রেনের দুই পড়শি দেশের সীমানাও অন্তত ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার রাস্তা। এই দীর্ঘ সময়ে মাঝ সমুদ্রে তাঁরা নিরাপদ কি না, তা কে বলতে পারে।
দিবসের কথায়, ‘‘প্রতি মুহূর্তে চার পাশে বোমা পড়তে দেখছি। নিকোলেভ বন্দর এতটাই সুনসান যে একটা পাখিও দেখা যাচ্ছে না। বোমা থেকে বাঁচতে রাতে জাহাজের আলো নিভিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আমাদের। অন্ধকারে জাহাজে বসে চারপাশে আগুন জ্বলতে দেখছি। আর শুনছি কান ফাটানো ক্ষেপণাস্ত্রের আওয়াজ।’’
জাহাজে আটকে থেকে ভিডিয়োয় নিজেদের অবস্থার কথা জানিয়েছেন দিবস। বলেছেন, ‘‘চারপাশে যে জাহাজ ছিল, তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলাম আমরা। এখন জানতে পারছি অনেকেই জাহাজ খালি করে চলে গিয়েছেন। পাশের জাহাজে শনিবারও তুরস্কের জাহাজকর্মীরা ছিলেন। তাঁরাও আর নেই।’’ দিবস জানিয়েছেন, পরিস্থিতির কথা জানিয়ে অফিসে ফোন করেছিলেন তাঁরা।
দিবসের অফিস অর্থাৎ ভিআর মেরিন সার্ভিসেস-এর চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার ক্যাপ্টেন সঞ্জয় প্রসার আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘ইউক্রেনে আটকে থাকা জাহাজের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি। কেন্দ্রীয় সরকারকেও এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। বন্দরের ভিতরে কোনও আক্রমণ হয়নি। ওখানকার দূতাবাসের সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ করেছি। যা জানতে পেরছি, তাতে জাহাজের মধ্যেই ওঁরা নিরাপদে থাকবেন বলে মনে হচ্ছে।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘অন্য জায়গা যাওয়ার পথে বিপদের আশঙ্কা থাকে। আমরা এখন জাহাজ বা পণ্যের কথা আগে ভাবছি না, আমাদের কর্মীদের কথাই আগে ভাবছি। এখন যদি ওঁরা জাহাজ ছেড়ে বেরোতে চান, তা হলে বাইরে বেরোলে বিপদ হতে পারে। বিপদ হলে এখান থেকে সাহায্য করার মতো পরিস্থিতিতে আমরা থাকব না। ফলে আমরা চাইব ওঁরা ওখানেই আপাতত থাকুন।’’
যদিও দিবসের দাবি, অফিস তাঁদের পোল্যান্ড-রোমানিয়ার মতো কয়েকটি দেশের তালিকা পাঠিয়ে বলেছে, যে ভাবে হোক যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে এর মধ্যে কোনও একটির সীমানায় পৌঁছে যেতে। কিন্তু দিবসের প্রশ্ন, ‘‘গন্তব্যগুলির কোনওটিরই দূরত্ব ২৫০-৩০০ কিলোমিটারের কম নয়। গাড়ির ব্যবস্থা না হলে হেঁটে তো আর যাওয়া যাবে না।’’
আপাতত তাই ব্যাগ গুছিয়ে অফিসের স্পষ্ট নির্দেশের অপেক্ষা করছেন দিবস। কী ভাবে নিকোলাভ থেকে তাঁরা নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছবেন, তার নির্দেশ এলে তবেই দ্রুত ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করতে পারবেন তাঁরা। জানিয়েছেন দিবস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy