নিশীথ প্রামাণিক, মিহির গোস্বামী। নিজস্ব চিত্র।
ক’দিন আগেই তিনি প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার নাম না করে বলেছিলেন, ‘‘কোনও ঠিকাদারি সংস্থা দিয়ে রাজনৈতিক দল পরিচালিত হতে পারে না।” অক্টোবর মাসের গোড়াতেই পদত্যাগ করেছিলেন দলের সমস্ত সাংগঠনিক পদ থেকে। কোচবিহার শহরে তাঁর কার্যালয়ের ভিতরে দলনেত্রীর ছবির জায়গা নিয়েছে স্বামী বিবেকানন্দর ছবি। এর মধ্যেই কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক এবং জেলার বর্ষীয়ান নেতা মিহির গোস্বামীর বাড়িতে হাজির হলেন বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক। বৃহস্পতিবার বিকেলে মিহিরের বাড়িতে প্রায় ১ ঘণ্টা কাটান নিশীথ। গত কয়েকদিন ধরে চলা জল্পনায় নতুন করে ইন্ধন দিল বৃহস্পতিবারের ঘটনা।
কোচবিহার জেলার তৃণমূল কর্মীদের একটা বড় অংশের আশঙ্কা, মিহির পা বাড়াচ্ছেন পদ্মশিবিরের দিকে। যদিও এ দিন তাঁদের সাক্ষাতের সঙ্গে রাজনীতির লেশমাত্র যোগ নেই বলে দাবি করেছেন নিশীথ এবং মিহির দু’জনেরই। তাঁদের দাবি, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী তাঁরা। পুজোর পর বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতেই নিশীথ গিয়েছিলেন মিহিরের বাড়িতে।
মিহির-নিশীথ যাই বলুন না কেন, গোটা জেলা জুড়ে মিহিরের দল বদলের সম্ভবনা নিয়ে জল্পনা জোরাল হয়েছে এ দিনের সাক্ষাতের পর। কারণ, ঘটনা পরম্পরা।
জেলার তৃণমূল কর্মীদের দাবি, পার্থপ্রতিম রায়কে জেলা সভাপতি ঘোষণা করার পর থেকেই মিহিরের ক্ষোভ প্রকাশ্যে আসে। তিনি স্পষ্ট তাঁর ক্ষোভ জানান সদ্য গঠিত জেলা কমিটি নিয়ে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘যাঁরা এতদিন তৃণমূলের বিরুদ্ধে কাজ করে এসেছে তাঁরাই জায়গা পেয়েছেন এই জেলা কমিটিতে। উপেক্ষিত হয়েছেন দলের জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে থাকা কর্মীরা।”
মিহিরের ক্ষোভ বিস্ফোরণের আকার নেয় ব্লক সভাপতি এবং ব্লক কমিটি নির্বাচনের পর। সেই সঙ্গে তিনি প্রকাশ্যেই প্রশান্ত কিশোর এবং তাঁর সংস্থা আইপ্যাকের কাজকর্মের সমালোচনা করেন। মিহিরের মতোই একই ভাবে জেলা কমিটি এবং ব্লক সভাপতি নির্বাচন নিয়ে মুখ খুলতে থাকেন দলের ব্লক পর্যায়ের একের পর এক নেতা। দিনহাটা-২ ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি দলীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তর সমালোচনা করে বলেন,‘‘২০১৯ সালের নির্বাচনে যাঁরা দলে অন্তর্ঘাত করেছিল তাঁরাই এখন গুরুত্ব পাচ্ছে।” তাঁর আরও অভিযোগ, নতুন জেলাসভাপতির আমলে সংখ্যালঘুরা উপেক্ষিত। আগে কোচবিহার জেলায় ১৮টি সাংগঠনিক ব্লক ছিল তৃণমূলের। তার মধ্যে ৪টি ব্লকের সভাপতি ছিলেন সংখ্যালঘু নেতারা। বর্তমানে সাংগঠনিক ব্লকের সংখ্যা বেড়ে ২২ হয়েছে কিন্তু একটি ব্লকেরও সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়নি কোনও সংখ্যালঘু নেতাকে।
জেলা কমিটি এবং ব্লক কমিটির নির্বাচন নিয়ে এই টানাপড়েনের মধ্যেই সমস্ত সাংগঠনিক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা বলে করে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন মিহির। জেলা তৃণমূলের মাঝারি মাপের নেতাদের কথায়, এরপরই নিজেকে ঘরবন্দি করে ফেলেন তিনি। দলের কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়। কোচবিহার শহরে তাঁর দলীয় কার্যালয়ের বাইরে দলের সমস্ত চিহ্ন সরিয়ে লেখা হয়, ‘কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়কের কার্যালয়।’
আরও পড়ুন: ‘পুলওয়ামা হামলা ইমরানের সাফল্য’, পার্লামেন্টে দাবি পাক মন্ত্রীর
আরও পড়ুন: কিডনির সমস্যায় চিকিৎসকদের মানা, থালাইভা রজনীর দল ঘোষণায় সংশয়
আর দল থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’ বর্ষীয়ান নেতার সঙ্গে এ দিন মিহিরের বৈঠক যে কেবল মাত্র রাজনৈতিক সৌজন্য বিনিময়ের মধ্যে আটকে থাকেনি তা মেনে নিচ্ছেন জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়ও। তিনি বলেন,‘‘ওঁরা দু’জনেই রাজনৈতিক সৌজন্য বিনিময়ের কথা বলেছেন। সেটা হতেও পারে, নাও হতে পারে। কারণ নিশীথ চেষ্টা করতেই পারে মিহিরদাকে দলে টানার। তবে তিনি দলের পুরনো নেতা। আমি আশা করব তিনি দলের সঙ্গেই থাকবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy